জাতীয় ডেস্কঃ
প্রাণসংহারি করোনাভাইরাসে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছেন আরও ৩৯ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১ হাজার ৬২১ জনের। এ সময়ের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৯৪৬ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন। আর নতুন ১ হাজার ৮২৯ জনসহ মোট সুস্থ হয়েছেন ৫১ হাজার ৪৯৫ জন। ফলে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত আছেন ৭৫ হাজার ১১১ জন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৫৬৮টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৯টি, যাতে ৩ হাজার ৯৪৬ জন শনাক্ত হন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা যেদিন বেশি হয় সেদিন বেশি সংখ্যক মানুষ শনাক্ত হন। গত ১৭ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৯২২জনের নমুনা সংগ্রহ করে একদিনে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৫২৭টির পরীক্ষায় ৪ হাজার ৮ জন শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরই এখন বাংলাদেশ। উৎসস্থল চীনকে ছাড়িয়েছে এ তিনটি দেশই। এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩ জনের করোনা পরীক্ষা করে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জনে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কানাডাকে পেছনে ফেলে ১৭তম। আর এশিয়ার ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এর আগে রয়েছে ভারত, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান ও সৌদি আরব।
নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৯ জন। গত ১৬ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১ হাজার ৬২১ জনের। নতুন মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৩২ ও নারী ৭ জন।
দেশে করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিদিনই সুস্থ হয়ে উঠছেন বিপুল মানুষ।
নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতাল মিলিয়ে নতুন সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮২৯ জন। এ নিয়ে মোট ৫১ হাজার ৪৯৫ জন সুস্থ হয়েছেন। ফলে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত আছেন ৭৫ হাজার ১১১ জন।
ব্রিফিংয়ের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বে মৃতের তালিকায় নাম উঠেছে আরও ৫১৫১ জনের এবং একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৯ জন।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯৫৬ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৮২ জন। অপরদিকে ৫১ লাখ ৭৫ হাজার ২৪০ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন।