ঢাকা ০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা মোকাবিলায় মেরকেলের জাদুতে যেভাবে সফল জার্মানি

আন্তর্জাতিক :

করোনা ভাইরাস মহামারিতে গোটা বিশ্ব নাজেহাল। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে থামছেই না মৃত্যু। এ ভয়াল পরিস্থিতিতেও মহামারি মোকাবিলায় সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে জার্মানি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছেন বিজ্ঞানমনস্ক এবং দূরদর্শী জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল।

বুধবার (২২ এপ্রিল) জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকলেও সুস্থতায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে দেশটি। সেখানে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৯ হাজার ৪০০ কোভিড-১৯ রোগী। বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৬ জনের।

জার্মানিতে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় গত ২৮ জানুয়ারি। তারপরও মার্চের আগ পর্যন্ত সেখানে অনেকটা স্বাভাবিক ছিল জনজীবন। লকডাউন শুরু হয় ১০ মার্চ থেকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে জার্মানি দৃঢ়ভাবে এ সংকট নিরসনে কাজ করছে মেরকেলের সুযোগ্য নেতৃত্বে।

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এ নেতা বেড়ে উঠেছেন পূর্ব জার্মানির ছোট এক নগরে। মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন মেরকেল এবং বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে অপছন্দ করতেন। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট করে মেরকেল বিজ্ঞানী হওয়ার পথেই এগোচ্ছিলেন। ততদিনে দুই জার্মানি এক হয়ে গেছে। মেরকেলও গবেষণা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী এ নেতা রাজনীতির পাশপাশি এ মহামারিকালে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ভেবে যথা সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো জার্মানিতে লাশের সারি দীর্ঘ হয়নি; যেমনটা হয়েছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞানী হিসেবে সুনিশ্চিত অগ্রযাত্রা ফেলে কেনো রাজনীতির অনিশ্চয়তা বেছে নিলেন মেরকেল তা রহস্যই বটে! তবে দরিদ্র পূর্ব জার্মানির এক বিজ্ঞানী স্বজাতির ভাগ্য বদলে দেওয়ার উপায় হিসেবেও এ পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারেন।

মেরকেল বিজ্ঞানকে ছাড়লেও বিজ্ঞান তাকে ছাড়েনি। বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে এবং যথাসময়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সতর্কভাবে তিনি মোকাবিলা করছেন এ মহামারি। প্রায় ১৫ বছর ধরে জার্মানি পরিচালনার দক্ষতাও এখানে কাজে লেগেছে নিশ্চয়ই।

জনগণকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার সময় মেরকেল বলেছিলেন, ‘জনজীবন ও সামাজিক একতাবদ্ধতা নিয়ে আমাদের স্বাভাবিকতার ধারণা অভূতপূর্ব এক পরীক্ষার সম্মুখীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ধরনের আর কোনো সংকটে আমাদের দেশ পড়েনি, যেখানে একতা ও সংহতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের কাজটুকু করে গেলে আমরা এ পরীক্ষায় পাস করে যাবো বলে আমার বিশ্বাস।’

জার্মানির সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিভাগ একটি একক টাস্কফোর্স গঠন করে মেরকেলের নেতৃত্বে দৃঢ়ভাবে এ মহামারি মোকাবিলা করছে।

এখনো মহামারিকাল অতিবাহিত হয়নি। এমন নয় যে সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে জার্মানি। পরিস্থিতি এখনো ভালো-খারাপ যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক মেরকেলের দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে এ সংকট মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত জার্মানি অনেকটাই সফল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

করোনা মোকাবিলায় মেরকেলের জাদুতে যেভাবে সফল জার্মানি

আপডেট সময় ০২:২৭:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০

আন্তর্জাতিক :

করোনা ভাইরাস মহামারিতে গোটা বিশ্ব নাজেহাল। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে থামছেই না মৃত্যু। এ ভয়াল পরিস্থিতিতেও মহামারি মোকাবিলায় সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে জার্মানি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছেন বিজ্ঞানমনস্ক এবং দূরদর্শী জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল।

বুধবার (২২ এপ্রিল) জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকলেও সুস্থতায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে দেশটি। সেখানে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৯ হাজার ৪০০ কোভিড-১৯ রোগী। বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৬ জনের।

জার্মানিতে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় গত ২৮ জানুয়ারি। তারপরও মার্চের আগ পর্যন্ত সেখানে অনেকটা স্বাভাবিক ছিল জনজীবন। লকডাউন শুরু হয় ১০ মার্চ থেকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে জার্মানি দৃঢ়ভাবে এ সংকট নিরসনে কাজ করছে মেরকেলের সুযোগ্য নেতৃত্বে।

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এ নেতা বেড়ে উঠেছেন পূর্ব জার্মানির ছোট এক নগরে। মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন মেরকেল এবং বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে অপছন্দ করতেন। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট করে মেরকেল বিজ্ঞানী হওয়ার পথেই এগোচ্ছিলেন। ততদিনে দুই জার্মানি এক হয়ে গেছে। মেরকেলও গবেষণা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী এ নেতা রাজনীতির পাশপাশি এ মহামারিকালে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ভেবে যথা সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো জার্মানিতে লাশের সারি দীর্ঘ হয়নি; যেমনটা হয়েছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞানী হিসেবে সুনিশ্চিত অগ্রযাত্রা ফেলে কেনো রাজনীতির অনিশ্চয়তা বেছে নিলেন মেরকেল তা রহস্যই বটে! তবে দরিদ্র পূর্ব জার্মানির এক বিজ্ঞানী স্বজাতির ভাগ্য বদলে দেওয়ার উপায় হিসেবেও এ পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারেন।

মেরকেল বিজ্ঞানকে ছাড়লেও বিজ্ঞান তাকে ছাড়েনি। বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে এবং যথাসময়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সতর্কভাবে তিনি মোকাবিলা করছেন এ মহামারি। প্রায় ১৫ বছর ধরে জার্মানি পরিচালনার দক্ষতাও এখানে কাজে লেগেছে নিশ্চয়ই।

জনগণকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার সময় মেরকেল বলেছিলেন, ‘জনজীবন ও সামাজিক একতাবদ্ধতা নিয়ে আমাদের স্বাভাবিকতার ধারণা অভূতপূর্ব এক পরীক্ষার সম্মুখীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ধরনের আর কোনো সংকটে আমাদের দেশ পড়েনি, যেখানে একতা ও সংহতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের কাজটুকু করে গেলে আমরা এ পরীক্ষায় পাস করে যাবো বলে আমার বিশ্বাস।’

জার্মানির সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিভাগ একটি একক টাস্কফোর্স গঠন করে মেরকেলের নেতৃত্বে দৃঢ়ভাবে এ মহামারি মোকাবিলা করছে।

এখনো মহামারিকাল অতিবাহিত হয়নি। এমন নয় যে সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে জার্মানি। পরিস্থিতি এখনো ভালো-খারাপ যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক মেরকেলের দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে এ সংকট মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত জার্মানি অনেকটাই সফল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।