কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লায় করোনা সংক্রমণ, মৃত্যু ও শনাক্ত লাগামহীন গতিতে বেড়েই চলছে। সোমবার (১৫ জুন) এক দিনেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন শহরের একটি কলেজের সাবেক একজন অধ্যক্ষ ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং একজন ইউপি চেয়ারম্যান। এছাড়াও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৭ জন।
এদিকে সোমবার প্রাপ্ত ফলাফলে আরও ৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮ জনে। সোমবার পর্যন্ত জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, সোমবার প্রাপ্ত ফল অনুসারে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীতে ১৪ জন, দেবিদ্বারে ১১জন, লাকসামে সাতজন, বুড়িচংয়ে পাঁচজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় সাতজন, বরুড়ায় দুইজন এবং জেলার সদর দক্ষিণ, মুরাদনগর, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও লালমাইয়ে একজন করে শনাক্ত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত জেলা থেকে ১৪ হাজার ৩০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ১২ হাজার ৬৬৫ জনের। করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৬৯ জন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মোট ৫৬ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার (১৫ জুন) মারা গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা শহরের অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আলকাসুর রহমান কোকা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের একটি ভবনের কোভিড-১৯ ইউনিটের আইসিইউতে তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মরহুমের সহকর্মী ও অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক।
তিনি জানান, অধ্যক্ষ আলকাসুর রহমান (৭০) গত শনিবার সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাঁর করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। করোনা ইউনিটের চিকিৎসকদের পাশাপাশি তার কন্যা ডা. মৌসুমি ও জামাতা ডা. শাওন চিকিৎসার বিষয় তত্ত্বাবধান করছিলেন। তাঁকে রাতে জেলা সদরের অদূরে চৌয়ারা এলাকার ধনাজোড় গ্রামে দাফন করা হয়েছে। প্রয়াত আলকাসুর রহমান কোকা বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
অপরদিকে জেলার বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও শিলমুড়ি দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রোটারিয়ান বিল্লাল হোসেন মজুমদার (৫৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার মারা যান। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
চেয়ারম্যানের স্বজন অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন বাহার জানান, গত বুধবার বিল্লাল চেয়ারম্যান স্ট্রোক করার পর তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে কিছু পরীক্ষার পর ডাক্তাররা তাঁর করোনা পজেটিভ নিশ্চিত হয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেন। পরে বৃহস্পতিবার তাঁকে কুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ২ মেয়েসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। বাদ এশা স্বাস্থ্য বিধি মেনে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় কুমেক হাসপাতালে মারা গেছেন আরও ৫ জন। কুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন জানান, এ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মুরাদনগর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের মোকলেছুর রহমান, বরুড়ার রতন বণিক, বুড়িচংয়ের শাহ আলম, নাঙ্গলকোটের আবদুল হক ও কুমিল্লা হাউজিং এস্টেট এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মো. আলম নামের এক পল্লী চিকিৎসক ও বরুড়া পৌর এলাকার নুরুল ইসলাম তালুকদার করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে মারা গেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।