কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লা নগরীতে প্রকাশ্যে মসজিদের বারান্দায় পিটিয়ে ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন হত্যা মামলায় ১০ মাসেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। মামলার চার্জশিট দিতে তদন্তের সার সংক্ষেপ ও তথ্যপ্রমাণাদি গত প্রায় তিন মাস আগে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দেয়ার পর সেখানেই মামলার ফাইল পড়ে আছে বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ। তদন্তের নামে পুলিশ দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
নিহতের পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১০ জুলাই কুমিল্লা নগরীর কোটবাড়ি রোডের চাঙ্গেনী দক্ষিণ বায়তুল নুর মোড় জামে মসজিদের বারান্দায় জুমার নামাজের পর হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী রেখা বেগম। ওইদিনই পুলিশ কাউন্সিলর আলমগীরের তিন ভাই আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় গত বছরের ২৪ জুলাই কাউন্সিলর আলমগীরকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ মামলায় কাউন্সিলর আলমগীর গত ৪ ফেব্রুয়ারি জামিন নিতে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গেলে তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পরে তিনি গত রমজানের আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। এছাড়াও এরই মধ্যে মামলার ১০ আসামির মধ্যে কাউন্সিলরের ভাতিজা জোবায়ের ছাড়া অন্য সকল আসামি জামিনে মুক্তি পাওয়ায় নিহতের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
নিহতের ছোট ভাই স্থানীয় যুবলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শাহজালাল আলাল জানান, মসজিদের বারান্দায় এ হামলার ঘটনা শত শত লোক দেখেছে। ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি আর বলেন, গত মার্চ মাসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কুমিল্লার বিদায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান আমাদের তার কার্যালয়ে ডেকে নেন এবং জানান মামলার এজাহার নামীয় ১০ আসামির মধ্যে নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা নয়জনের বিরুদ্ধেই দ্রুত চার্জশিট দেয়ার দাবি জানালে তিনি আমাদের আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনো চার্জশিট আদালতে দাখিল হয়নি।
তিনি বলেন, উল্টো আসামিরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসিটিভি স্থাপন করে আমাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করছে। তাই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী রেখা আক্তার বলেন, আসামিরা সকল সাক্ষী প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ চার্জশিট দিতে ১০ মাস অতিবাহিত করলো কেন ? আমরা কি ন্যায়বিচার পাবো না ?
তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, আমি বর্তমানে খাগড়াছড়িতে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে আছি। মামলাটির চার্জশিট দিতে তদন্তের সারসংক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র অফিসারের নিকট জমা দিয়েছি। সিনিয়র অফিসাররা বিধিমোতাবেক তদন্তের বিস্তারিত বিষয়গুলো দেখে তা পুনরায় থানায় ফেরত পাঠালেই চার্জশিট দেওয়া হবে।