ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করে বাবা-মা উধাও, দায়িত্ব নিলেন এসপি

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

ভূমিষ্ঠ হয়েছিল দুটি শিশু। জন্মের পরপর মারা যায় একজন, কিন্তু প্রসূতি মায়ের অনুরোধে নবজাতককে ভর্তি করা হয় নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালের এনআইসিইউতে। এরপর বিল পরিশোধ না করেই উধাও হন নবজাতকের বাবা। অর্থের জোগাড় না হওয়ায় হাসপাতালে আর আসেননি হতদরিদ্র বাবা-মা। কিন্তু মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে গত ৭ দিন ধরে শিশুটির সকল চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নজরে আসায় মানবিক দিক বিবেচনায় চিকিৎসার সার্বিক ব্যয় ভার বহনের দায়িত্ব নিলেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।’

রবিবার (১২ জুলাই) বিকালে নগরীর ঝাউতলা এলাকার ‘কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের হতদরিদ্র মিজানুর রহমান ও শিরীন আক্তার দম্পতির ঘরে জমজ দুটি শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর একটি শিশু মারা যায় এবং অপর মেয়ে শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ওই শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে শিশুর মা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড্ হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শিশুর বাবা মিজানুর রহমান ৫ জুলাই রাতে শিশুটিকে এই হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। এরপর থেকে তিনি উধাও হয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির সময় একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু ওই নম্বরটি কখনো বন্ধ থাকে, আবার কখনো খোলা থাকলেও কেউ রিসিভ করে না। পরে শিশুর বাবাকে খুঁজে না পেলেও মায়ের সন্ধান পাই এবং শিশুর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানাই। পরে ৮ জুলাই শিশুর মা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু শিশুটিকে নেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই বলে তিনি বিভিন্ন স্থানে সহযোগিতা পাওয়ার আসায় বেড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘৭ দিনে এ শিশুর চিকিৎসার ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর আগেও ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে বিল পরিশোধ না করে উধাও হয়ে যান আরেক দম্পতি। পরে পুলিশ সুপার (সৈয়দ নুরুল ইসলাম) ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করে আনাসহ হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন। আবারও শিশুর দায়িত্ব নিয়ে তিনি মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।’

কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড্ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এমরান বলেন, ‘মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় এটি প্রি-ম্যাচিউর শিশু। জন্মের সময় ওজন ছিল সাড়ে ৭শ গ্রাম। শিশুটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়লেও শিশুর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’ এদিকে খরচ বহনের খবর পেয়ে শিশুর বাবা-মা ও স্বজনরা রবিবার (১২ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালে ছুটে আসেন। নবজাতকের বাবা মিজানুর রহমান জানান, ‘আমি গরীব মানুষ। তাই টাকা না থাকায় শিশুটিকে নেওয়ার জন্য হাসপাতালে আসিনি, লজ্জায় পালিয়ে ছিলাম। এসপি স্যার খরচের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা আনন্দিত। আল্লাহর নিকট আমরা দুই হাত তোলে আমরা স্যারের জন্য দোয়া করি।’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত উদার হয়ে শিশুর চিকিৎসা দিয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমি একজন মানুষ হিসেবে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছি।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের দিনব্যাপী কর্মশালা

কুমিল্লায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করে বাবা-মা উধাও, দায়িত্ব নিলেন এসপি

আপডেট সময় ০৩:৫২:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

ভূমিষ্ঠ হয়েছিল দুটি শিশু। জন্মের পরপর মারা যায় একজন, কিন্তু প্রসূতি মায়ের অনুরোধে নবজাতককে ভর্তি করা হয় নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালের এনআইসিইউতে। এরপর বিল পরিশোধ না করেই উধাও হন নবজাতকের বাবা। অর্থের জোগাড় না হওয়ায় হাসপাতালে আর আসেননি হতদরিদ্র বাবা-মা। কিন্তু মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে গত ৭ দিন ধরে শিশুটির সকল চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নজরে আসায় মানবিক দিক বিবেচনায় চিকিৎসার সার্বিক ব্যয় ভার বহনের দায়িত্ব নিলেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।’

রবিবার (১২ জুলাই) বিকালে নগরীর ঝাউতলা এলাকার ‘কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের হতদরিদ্র মিজানুর রহমান ও শিরীন আক্তার দম্পতির ঘরে জমজ দুটি শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর একটি শিশু মারা যায় এবং অপর মেয়ে শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ওই শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে শিশুর মা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড্ হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শিশুর বাবা মিজানুর রহমান ৫ জুলাই রাতে শিশুটিকে এই হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। এরপর থেকে তিনি উধাও হয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির সময় একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু ওই নম্বরটি কখনো বন্ধ থাকে, আবার কখনো খোলা থাকলেও কেউ রিসিভ করে না। পরে শিশুর বাবাকে খুঁজে না পেলেও মায়ের সন্ধান পাই এবং শিশুর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানাই। পরে ৮ জুলাই শিশুর মা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু শিশুটিকে নেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই বলে তিনি বিভিন্ন স্থানে সহযোগিতা পাওয়ার আসায় বেড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘৭ দিনে এ শিশুর চিকিৎসার ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর আগেও ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে বিল পরিশোধ না করে উধাও হয়ে যান আরেক দম্পতি। পরে পুলিশ সুপার (সৈয়দ নুরুল ইসলাম) ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করে আনাসহ হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন। আবারও শিশুর দায়িত্ব নিয়ে তিনি মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।’

কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড্ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এমরান বলেন, ‘মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় এটি প্রি-ম্যাচিউর শিশু। জন্মের সময় ওজন ছিল সাড়ে ৭শ গ্রাম। শিশুটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়লেও শিশুর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’ এদিকে খরচ বহনের খবর পেয়ে শিশুর বাবা-মা ও স্বজনরা রবিবার (১২ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালে ছুটে আসেন। নবজাতকের বাবা মিজানুর রহমান জানান, ‘আমি গরীব মানুষ। তাই টাকা না থাকায় শিশুটিকে নেওয়ার জন্য হাসপাতালে আসিনি, লজ্জায় পালিয়ে ছিলাম। এসপি স্যার খরচের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা আনন্দিত। আল্লাহর নিকট আমরা দুই হাত তোলে আমরা স্যারের জন্য দোয়া করি।’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত উদার হয়ে শিশুর চিকিৎসা দিয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমি একজন মানুষ হিসেবে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছি।’