ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোলেস্টেরল: জানা অজানা তথ্য

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

রক্তে উচুমান কোলেস্টেরলের কারণ আছে। বেশিরভাগ কোলেস্টেরল তৈরি হয় শরীরের ভেতর যকৃতে। আবার খাদ্যচর্বি সমৃদ্ধ হলেও ক্রমে ক্রমে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরল। কোন ধরণের চর্বি বেশি খেলে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট। মাংস, দুধজাত দ্রব্য ঘি, মাখন ও অন্যান্য প্রাণীজ খাদ্য, চর্বি বহুল গোস্ত থেকে আসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। আছে কোনও কোনও উদ্ভিজ তেলে যেমন নারিকেল তেল ও পাম তেল। কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের কুসুম, কলিজা খেলে রক্তে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল বাড়ে। তাই সবারই চর্বি ও কোলেস্টেরল কম খাওয়া উচিত। যেমন চর্বি বহুল গোস্ত, কলিজা, মগজ, ডিমের কুসুম, চিংড়ি, ননীসহ দুধ, মাখন, ঘি, ডালডা ইত্যাদি খুব কম খাওয়া উচিত। দিনে ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা ঠিক না।

প্রশ্ন হতে পারে কত বছর বয়স থেকে রক্তে কোলেস্টেরল মাপা শুরু করা উচিত। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে বয়স ২০ হবার পর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর একবার রক্তের কোলেস্টেরল মাপা উচিত। শরীরের জন্য কোলেস্টেরল বেশ প্রয়োজন। মোমসদৃর্শ, চর্বির মত এই কোলেস্টেরল থেকে শরীরে তৈরি হয় হরমোন, ভিটামিন ডি এবং পিত্তঅম্ল। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল দেহেই তৈরি হয়। খাদ্যে কোলেস্টেরল যোগ করার প্রয়োজন হয়না। সব কোলেস্টেরল রক্তে কম হলেই ভালো তা নয়। রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল বেশি হলে ভালো। এটি হলো হূদ হিতকরী কোলেস্টেরল। এইচডিএল কোলেস্টেরল প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৬০ মিলিগ্রাম এইচডিএল বা এর বেশি হলে তা হূদরোগের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়।

এলডিএল কোলেস্টেরলকে বলে মন্দ কোলেস্টেরল। কারণ রক্তে বেশি এলডিএল থাকলে পরিনতিতে হতে পারে এথারোস্ক্লেরোসিস।

খুব বেশি এলডিএল রক্তে থাকলে পরিনতিতে তা থেকে হতে পারে হূদরোগ। এলডিএল মান ১৩০ মিলিগ্রাম/ ডিএল এর বেশি হলে বলবো উচুমান এলডিএল। খুব বেশি এলডিএল মান রক্তে বেশ কিছুদিন থাকলে পরে ধমনীর দেয়াল পুরু হয়ে শক্ত জমাট বাঁধে, যাকে বলে প্লাক। ধমনীপথ সংকীর্ণ হতে থাকে, দেয়াল শক্ত হতে থাকে তাই ক্রমে ক্রমে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ ক্ষীন হতে থাকে। একে বলে এথারোস্ক্লেরোসিস, যা হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের বড় কারণ।

রক্তের এলডিএল কমাতে খাদ্যবিধির অবদান রয়েছে। ওটমিল তেমন একটি খাদ্য। দ্রবনীয় আঁশ খেলে কমে রক্তের কোলেস্টেরল। ওটমিল হলো দ্রবনীয় আঁশের শ্রেষ্ঠ উত্স। বীনস ও অনেক ফলেও আছে দ্রবনীয় আঁস। আছে সবজিতেও। দিনে ১ বাটি ওটমিল, একটি কলা খেলে পাওয়া যাবে ১০ গ্রাম আঁশ। যাতে কমায় এলডিএল ৫%।

কোলেস্টেরল কোন খাবারে বেশি ছয়টি চকোলেট ক্রিম পাই। দু’টুকরা পনির। মাখনের বড় চাকলা নাকি দুটো বড় স্ক্রাম্বল ডিম। ডিমে আছে প্রচুর কোলেস্টেরল। দুটো ডিমে (প্রতিটিতে প্রায় ২১২ গ্রাম) কোলেস্টরল। ডিমের সাদা অংশ বা কুসুম ছাড়া ডিম ভালো বিকল্প হতে পারে। রক্তের উঁচুমান কোলেস্টেরল, সব রকম চর্বি বাদ দেব, তাতো ঠিক নয়। খাদ্যে কিছুটা চর্বি থাকা চাই। চর্বি থেকে এলার্জি, আবশ্যকীয় মেদ অম্ল পাই, খাদ্য থেকে পুষ্টি উপকরণ দেহে শোষিত হতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, শোষণের জন্য প্রয়োজন চর্বি। কৌশল হলো শ্রেষ্ঠ চর্বি গ্রহণ করা যা হিতকর। প্রাণীজ চর্বির বদলে উদ্ভিজ চর্বি, ক্ষেত্র বিশেষে এতে কোলেস্টেরল মান হ্রাস করা সহজ নয়। ট্রান্সফ্যাট খাওয়া ছাড়তে হবে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট মাত্র ১০%। মোট ক্যালোরির ১০%।

মন্দ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে গেলে চাই ব্যায়াম। ব্যায়াম বা অন্যান্য নিয়মিত শরীর চর্চা কমায় মন্দ কোলেস্টেরল এলডিএল এবং বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল। পূর্নবয়স্কদের জন্য চাই ৩০ মিনিট মাঝারি ধরণের শরীরচর্চা সপ্তাহে প্রায় দিনে। তবে যে কোনও নিয়মিত শরীর চর্চা কমায় উচু মান কোলেস্টেরল ঝুঁকি ও হূদরোগের ঝুঁকি। মোট কোলেস্টেরল মান ২০০ মিলিগ্রামের কম হলে ভালো।

২০০-২৩৯ মিলিগ্রাম/ ডিএল হলো সীমা ছুই ছুই মান। ২৪০ মিলিগ্রাম বা এর বেশি হলে উঁচুমান।এলডিএল (মন্দ কোলেস্টেরল) ১০০ মিলিগ্রামের নিচে হলে ভালো। এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) ৪০ মিলিগ্রামের নিচে হলে হূদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এইচডিএল মান ৫০ মিলিগ্রামের নিচে হলে ঝুঁকি। কোলেস্টেরল মান কামাবার জন্য শ্রেষ্ঠ ওষুধ হলো স্ট্যাটিনস্। এই ওষুধ সেবনে এলডিএল মান কমতে পারে ২০-২৫%। স্ট্যাটিন যকৃতে কোলেস্টেরল তৈরি রোধ করে তাই কোলেস্টেরল তৈরি হয় কম।

এছাড়া রক্তের এলডিএল সরানোর কাজেও সাহায্য করে। হিতকর কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়াতেও সাহায্য করে স্ট্যাটিন ওষুধ। রক্তের উঁচুমান কোলেস্টেরল হলেই ওষুধ খেতে হবে তা নয়। খাদ্যবিধি, ব্যায়াম, শরীর স্থূল হলে ওজন কমানো বেশ কাজ দিতে পারে। ডাক্তার পরামর্শ দিবেন। হূদরোগের ঝুঁকি ব্যক্তি বিশেষ কি রকম সেই বিবেচনায় পরামর্শ দেন ডাক্তার। প্রধান লক্ষ্য হলো: স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়া, কম কোলেস্টেরল গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।

লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

কোলেস্টেরল: জানা অজানা তথ্য

আপডেট সময় ১২:০৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯
স্বাস্থ্য ডেস্ক:

রক্তে উচুমান কোলেস্টেরলের কারণ আছে। বেশিরভাগ কোলেস্টেরল তৈরি হয় শরীরের ভেতর যকৃতে। আবার খাদ্যচর্বি সমৃদ্ধ হলেও ক্রমে ক্রমে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরল। কোন ধরণের চর্বি বেশি খেলে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট। মাংস, দুধজাত দ্রব্য ঘি, মাখন ও অন্যান্য প্রাণীজ খাদ্য, চর্বি বহুল গোস্ত থেকে আসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। আছে কোনও কোনও উদ্ভিজ তেলে যেমন নারিকেল তেল ও পাম তেল। কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের কুসুম, কলিজা খেলে রক্তে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল বাড়ে। তাই সবারই চর্বি ও কোলেস্টেরল কম খাওয়া উচিত। যেমন চর্বি বহুল গোস্ত, কলিজা, মগজ, ডিমের কুসুম, চিংড়ি, ননীসহ দুধ, মাখন, ঘি, ডালডা ইত্যাদি খুব কম খাওয়া উচিত। দিনে ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা ঠিক না।

প্রশ্ন হতে পারে কত বছর বয়স থেকে রক্তে কোলেস্টেরল মাপা শুরু করা উচিত। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে বয়স ২০ হবার পর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর একবার রক্তের কোলেস্টেরল মাপা উচিত। শরীরের জন্য কোলেস্টেরল বেশ প্রয়োজন। মোমসদৃর্শ, চর্বির মত এই কোলেস্টেরল থেকে শরীরে তৈরি হয় হরমোন, ভিটামিন ডি এবং পিত্তঅম্ল। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল দেহেই তৈরি হয়। খাদ্যে কোলেস্টেরল যোগ করার প্রয়োজন হয়না। সব কোলেস্টেরল রক্তে কম হলেই ভালো তা নয়। রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল বেশি হলে ভালো। এটি হলো হূদ হিতকরী কোলেস্টেরল। এইচডিএল কোলেস্টেরল প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৬০ মিলিগ্রাম এইচডিএল বা এর বেশি হলে তা হূদরোগের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়।

এলডিএল কোলেস্টেরলকে বলে মন্দ কোলেস্টেরল। কারণ রক্তে বেশি এলডিএল থাকলে পরিনতিতে হতে পারে এথারোস্ক্লেরোসিস।

খুব বেশি এলডিএল রক্তে থাকলে পরিনতিতে তা থেকে হতে পারে হূদরোগ। এলডিএল মান ১৩০ মিলিগ্রাম/ ডিএল এর বেশি হলে বলবো উচুমান এলডিএল। খুব বেশি এলডিএল মান রক্তে বেশ কিছুদিন থাকলে পরে ধমনীর দেয়াল পুরু হয়ে শক্ত জমাট বাঁধে, যাকে বলে প্লাক। ধমনীপথ সংকীর্ণ হতে থাকে, দেয়াল শক্ত হতে থাকে তাই ক্রমে ক্রমে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ ক্ষীন হতে থাকে। একে বলে এথারোস্ক্লেরোসিস, যা হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের বড় কারণ।

রক্তের এলডিএল কমাতে খাদ্যবিধির অবদান রয়েছে। ওটমিল তেমন একটি খাদ্য। দ্রবনীয় আঁশ খেলে কমে রক্তের কোলেস্টেরল। ওটমিল হলো দ্রবনীয় আঁশের শ্রেষ্ঠ উত্স। বীনস ও অনেক ফলেও আছে দ্রবনীয় আঁস। আছে সবজিতেও। দিনে ১ বাটি ওটমিল, একটি কলা খেলে পাওয়া যাবে ১০ গ্রাম আঁশ। যাতে কমায় এলডিএল ৫%।

কোলেস্টেরল কোন খাবারে বেশি ছয়টি চকোলেট ক্রিম পাই। দু’টুকরা পনির। মাখনের বড় চাকলা নাকি দুটো বড় স্ক্রাম্বল ডিম। ডিমে আছে প্রচুর কোলেস্টেরল। দুটো ডিমে (প্রতিটিতে প্রায় ২১২ গ্রাম) কোলেস্টরল। ডিমের সাদা অংশ বা কুসুম ছাড়া ডিম ভালো বিকল্প হতে পারে। রক্তের উঁচুমান কোলেস্টেরল, সব রকম চর্বি বাদ দেব, তাতো ঠিক নয়। খাদ্যে কিছুটা চর্বি থাকা চাই। চর্বি থেকে এলার্জি, আবশ্যকীয় মেদ অম্ল পাই, খাদ্য থেকে পুষ্টি উপকরণ দেহে শোষিত হতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, শোষণের জন্য প্রয়োজন চর্বি। কৌশল হলো শ্রেষ্ঠ চর্বি গ্রহণ করা যা হিতকর। প্রাণীজ চর্বির বদলে উদ্ভিজ চর্বি, ক্ষেত্র বিশেষে এতে কোলেস্টেরল মান হ্রাস করা সহজ নয়। ট্রান্সফ্যাট খাওয়া ছাড়তে হবে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট মাত্র ১০%। মোট ক্যালোরির ১০%।

মন্দ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে গেলে চাই ব্যায়াম। ব্যায়াম বা অন্যান্য নিয়মিত শরীর চর্চা কমায় মন্দ কোলেস্টেরল এলডিএল এবং বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল। পূর্নবয়স্কদের জন্য চাই ৩০ মিনিট মাঝারি ধরণের শরীরচর্চা সপ্তাহে প্রায় দিনে। তবে যে কোনও নিয়মিত শরীর চর্চা কমায় উচু মান কোলেস্টেরল ঝুঁকি ও হূদরোগের ঝুঁকি। মোট কোলেস্টেরল মান ২০০ মিলিগ্রামের কম হলে ভালো।

২০০-২৩৯ মিলিগ্রাম/ ডিএল হলো সীমা ছুই ছুই মান। ২৪০ মিলিগ্রাম বা এর বেশি হলে উঁচুমান।এলডিএল (মন্দ কোলেস্টেরল) ১০০ মিলিগ্রামের নিচে হলে ভালো। এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) ৪০ মিলিগ্রামের নিচে হলে হূদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এইচডিএল মান ৫০ মিলিগ্রামের নিচে হলে ঝুঁকি। কোলেস্টেরল মান কামাবার জন্য শ্রেষ্ঠ ওষুধ হলো স্ট্যাটিনস্। এই ওষুধ সেবনে এলডিএল মান কমতে পারে ২০-২৫%। স্ট্যাটিন যকৃতে কোলেস্টেরল তৈরি রোধ করে তাই কোলেস্টেরল তৈরি হয় কম।

এছাড়া রক্তের এলডিএল সরানোর কাজেও সাহায্য করে। হিতকর কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়াতেও সাহায্য করে স্ট্যাটিন ওষুধ। রক্তের উঁচুমান কোলেস্টেরল হলেই ওষুধ খেতে হবে তা নয়। খাদ্যবিধি, ব্যায়াম, শরীর স্থূল হলে ওজন কমানো বেশ কাজ দিতে পারে। ডাক্তার পরামর্শ দিবেন। হূদরোগের ঝুঁকি ব্যক্তি বিশেষ কি রকম সেই বিবেচনায় পরামর্শ দেন ডাক্তার। প্রধান লক্ষ্য হলো: স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়া, কম কোলেস্টেরল গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।

লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা