জাতীয় :
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের গাজীনগর এলাকায় বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিজিবি সদস্যসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে ৪০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের একজন সদস্য রয়েছেন। তার নাম শাওন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগর এলাকার মো. সাহাব উদ্দিন মিয়া ওরফে প্রকাশ মুছা (৫৭), তার বড় ছেলে আলী আকবর (২৭), ছোট ছেলে আহমদ আলী (৩০) এবং একই এলাকার সিরাজ মিস্ত্রির ছেলে মফিজ মিয়া (৫০) মারা গেছেন বলে দাবি করেন নিহত সাহাব উদ্দিন মিয়ার মেয়ে নিলুফা বেগম। গুলিবিদ্ধ মফিজ মিয়াকে চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে মারা যান।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ ও মাটিরাঙ্গা থানার ওসি মো. শামসুদ্দিন ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে পাঁচ টুকরা কাঁঠাল গাছ গাজিনগর বাজারস্থ স মিলে নেওয়ার সময় পথে বিজিবি বাধা দেয় এবং পরিবহনের বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা দেখাতে বলেন। এসময় বিজিবির সঙ্গে সাহাব উদ্দিন ও তার দুই ছেলের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারাও ঘটনাস্থলে এসে বিজিবির সাথে তর্কে জড়ায় এবং গাছ পরিবহনে বাধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানান। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠলে বিজিবি সদস্যরা গুলি চালানো শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের তিন জন মারা যান। এসময় উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে শাওন নামক বিজিবির এক সদস্যও প্রাণ হারান। ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত মো. হানিফ নামক আরো এক গ্রামবাসী চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি কর্তৃপক্ষের কোন প্রতিক্রিয়া গ্রহণ সম্ভব হয়নি। তবে বিজিবির একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, অবৈধভাবে গাছ কাটার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে স্থানীয়রা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বিজিবি সদস্য শাওন ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরে আত্মরক্ষার্থে বিজিবি গুলি চালালে হতাহতের এ ঘটনার ঘটে।
তবে এ বিষয়ে সাহাব উদ্দিন মিয়ার মেয়ে নিলুফা বেগম জানান, বিদ্যুতের লাইন যাওয়ার কারণে তারা বেশ কিছু দিন আগে একটি কাঁঠাল গাছ কেটে রাখেন।
এদিকে গুইমারা সেনা রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার, জোন কমান্ডার, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজসহ স্থানীয় সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার তদন্তসহ সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থার কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার রিয়াজুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে সহিংসতায় স্বামী ও দুই ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে সাহাব উদ্দিন মিয়া ওরফে মুছার স্ত্রী রঞ্জু বেগম হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।