জাতীয় ডেস্কঃ
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের স্বার্থেই বিদেশ পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘আপনাদের স্বার্থে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করতে পাঠান। তাকে সুস্থ করে নিয়ে আসুন। তা না হলে আপনারা পালানোর পথটাও খুঁজে পাবেন না।’
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে শ্রমিক দলের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে সরকারকে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এমন মন্তব্য করেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় দুই বছরের বেশি সময় পরিত্যক্ত কারাগারে ছিলেন। সেখান থেকে তার যে অসুখ সৃষ্টি হয়েছে, তা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে এভার কেয়ারের এবং আমাদের যে চিকিৎসক আছে তারা বলেছেন, অতি দ্রুত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমেরিকা বা যুক্তরাজ্যে যদি না নেওয়া হয় তাহলে তার জীবন বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে।
শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করি। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে।
সরকারের মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বলেন, কোনো সভ্য মানুষ এ ভাষায় কথা বলতে পারে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি কখনওই বিএনপির দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই দেখেন না। সবসময় বিএনপি-বিএনপি করেন। বিএনপি নাকি নাই, বিএনপি যদি নাই থাকে তাহলে এত স্বপ্ন দেখেন কেন।
সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছে এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, নির্বাচন-নির্বাচন করছেন। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলে দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কয়েকশ মানুষ মারা গেছে। ইসি বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এ যদি হয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নমুনা। মানুষ এখন ভোট দিতে যায় না। সেই জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সরালে হবে না, এ সরকারকেও সরে যেতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মানুষের ভোট দিয়ে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ এত উন্নয়ন, উন্নয়ন বলছেন। কিন্তু শ্রমিকের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। আগে দেশে গরিব ছিল ২ কোটি আর এখন তা হয়েছে ৬ কোটি। আজ সেই জন্য পরিবর্তন চাই। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে, সেই জন্য বলছি না। এ সরকারকে সরাতে হবে। যারা আমাদের সব অর্জন কেড়ে নিয়েছে। ৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম কি এ জন্য যে আমার ভোট আমি দিতে পারব না?
নিরাপদ সড়ক ও হাফ পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ছাত্ররা সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। কেন তারা রাস্তায় নেমেছে? কারণ আপনারা (সরকার) কোনো কথা রাখেন না। আগে যখন আন্দোলন হয়েছে তখন বলেছিলেন সড়ক সঠিকভাবে চালাবেন। কিন্তু সঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে ছাত্ররা কোথায় থেকে আসে। আপনার ব্যর্থতার কারণে যখন মানুষের কোনো মূল্য নাই, তখন তো তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। এভাবে যদি চলতে থাকে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করেন, তাহলে কোটি-কোটি মানুষ রাস্তায় নামবে।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, বিএনপির সহ শ্রম-বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান প্রমুখ।