জাতীয় ডেস্কঃ
করোনায় আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারাগার থেকে নির্বাহী আদেশে মুক্তির মতো এবারও তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। এরমধ্যে সোমবার থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে এভার কেয়ারের সিসিইউতে নেয়া হয়। এরপরই বিদেশ নেয়ার বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। সবশেষ শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে।
কোন দেশে চিকিৎসার জন্য নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও আবেদনের বিষয়ে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধু ডা. জায়মা রহমান সেখানে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত এলে বিশেষ বিমানে করে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেয়া হবে বলে গুঞ্জন আছে।
এদিকে বিষয়টি স্পর্শকাতর বিবেচনায় এ নিয়ে খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের নেতারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হতে পারে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৭ এপ্রিল রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন বিএনপি প্রধানের চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এর আগে গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
২৭ এপ্রিল রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন এভার কেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করান।
এরপর থেকে এখানেই আছেন তিনি।এরমধ্যে অবশ্য তার নানা ধরণের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয়েছিল ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।
দেশে মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে দুই দফা তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
তখন থেকে গুলশানের বাসাতেই থাকছেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে বাইরের লোকজনের যোগাযোগ সীমিত।
কেমন আছেন খালেদা জিয়া
তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ার কারণেই তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। শুরুর দিকে তাঁর ফুসফুসে সামান্য (৭ শতাংশ) সংক্রমণ ছিল। সে সময় তার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা ছিল না। সোমবারই তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
এদিকে সোমবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন ৩০০ ফিট সড়কের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জাহিদ হোসেন বলেন, তিনি এখন স্থিতিশীল আছেন। সিসিইউতে এখন স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট কতটা গুরুতর, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে কয়েক মিনিট আগে সিসিইউতে কথা হয়েছে। আমি কথা বলেছি, তিনিও আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।’
জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
তিনি বলেন, শ্বাসকষ্টের পর খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো যাবে।