জাতীয় ডেস্কঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর সাত জায়গায় বিভিন্ন নেতাদেরকে লিফলেট বিতরনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর পুরানা পল্টন ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কল্যাণপুর ও খিলগাঁওয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মতিঝিল এলাকায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নিউ মার্কেট এলাকায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এছাড়া রাজধানীর মৌচাকে ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জুরাইন রেল গেইট এলাকায় বরকত উল্লাহর উল্লাহ বুলু এবং আহমদ আজম খান ধোলাইখাল এলাকায় লিফলেট বিতরণ করছেন।
যা আছে লিফলেটে-
বাংলাদেশ জাতীয়বাতাবাদী দল-বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির প্রচার করা ‘শেখ হাসিনার ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহর/খারিজ বনাম উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভিত্তিহীন মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড’ শিরোনামে লিফলেটে যা আছে-
‘প্রতিহিসংসা ও জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এক সাজানো কাল্পনিক মামলায় তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ৭১ বছর বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অর্থ আত্মসাতের ভিত্তিহীন মিথ্যা অভেযোগ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো পরিত্যক্ত স্যাঁতস্যাঁতে জরাজীর্ণ ভবনে নির্জন কারবাসে পাঠানো হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভেযোগ আনা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। অথচ উক্ত ট্রাস্টের কোনো অর্থই আত্মসাৎ হয়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এক খণ্ড জমি ক্রয় ছাড়া বাকি এক টাকাও কোথাও খরচ হয়নি। বরং সেই ২ কোটি টাকা এখন সুদে আসলে ৬ কোটি হয়ে ট্রাস্টের নামেই ব্যাংকে পড়ে আছে। উক্ত ট্রাস্টের গঠন এবং পরিচালনার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই বা ছিল না। তিনি কখনও উক্ত ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য ছিলেন না। উক্ত ট্রাস্টের ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনায় তিনি স্বাক্ষরকারী ছিলেন না এবং উক্ত ট্রাস্টের কার্যাদি, লেন-দেন, হিসাব-নিকাশ ও একাউন্ট পরিচালায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বা ছিল না। অর্থাৎ আত্মসাৎ তো দূরের কথা বেগম জিয়া বা তার পরিবারের কোনো সদস্য উক্ত একাউন্ট থেকে এক টাকাও উত্তোলন করেননি। কুয়েত দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক পত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, দাতা কর্তৃক এই অর্থ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিউয়ার রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রদান করা হয়েছিল। এরপরও আইনের মারপ্যাঁচে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এক টাকাও খরচ হলো না, অচথ জবানবন্দীতে দেওয়া ‘প্রশ্নবোধক’ চিহ্নকে ‘দাঁড়ি’ চিহ্ন বানিয়ে দুর্নীতির সহযোগী বানানো হলো তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী বেগম জিয়াকে। তাকে জেলে পাঠিয়ে মূলত: গণতন্ত্রকে জেলে পাঠালেন শেখ হাসিনা। রায়ের অনেক আগে থেকেই শেখ হাসিনা বলে আসছেন এতিমের টাকা চুরির দায়ে বেগম জিয়ার শাস্তি হবে। তার অবৈধ মন্ত্রীরা বেগম জিয়ার সাজা ঘোষণা করেছেন বার বার। আর সেটা করার জন্যই একজন প্রধান বিচারপতি ও একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে পদচ্যুত করে এবং তারেক রহমানকে ভিত্তিহীন দুর্নীতির মামলায় খালাস দেয়া নিন্ম আদালতরে বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করে তিনি অধ:স্তন আদালতের দখল নিজের হাতে নিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো, সৈরাচারী শাসক কিংবা মধ্যযুগের রাজা-বাদশাহদের মতো চাইলে যে কাউকে ইচ্ছামতো সাজা দেয়া। দেশের জনগণ মনে করে, বিচার ব্যবস্থা কব্জা করে এই রায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর কয়েক ঘণ্টা পরই শেখ হাসিনা বরিশালের জনসভায় দম্ভ নিয়ে উপহাস করে বলেছেন, ‘তিনি আজ কোথায়’? তার ছেলে বাণী দেন, ‘জেলখানাই তাদের ঠিকানা’। এক সময় শেখ হাসিনার পিতাও সিরাজ সিকদারকে হত্যা পরে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দম্ভোক্তি করে বলেছিলেন-‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ এরপর কে কোথায় গেছে, তা দেশবাসীর জানা আছে। বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের নামে দুর্নীতির মামলা নতুন কিছু নয়। এ সব মামলায় কেউ কেউ কারাগারেও গিয়েছেন।
১৯৬০ সালে দুর্নীতি মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানেরও দু’ বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার ঠাকা জরিমানা হয়েছিল(১৫ ডিএলআর ১৯৬৪)। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশের বৃহত্তম দুটি দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়েছে। দেশবাসী তাদের কাউকেই প্রত্যাখ্যান করেনি-বরং তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। যারা তাদের জেলে নিয়েছিল তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় যাওয়ার প্রাক্কালে ১/১১ এর সেনাসমর্থিত জরুরি সরকার বেগম খালেদা এবং শেখ হাসিনা উভয়ের নামে মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যাহার কিংবা অনুগত বিচারকের মাধ্যমে বাতিল করিয়ে নেন।
২০১০ সালের ৩ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত মাত্র ৩ মাসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫টি মামলা খারিজ করেন গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি বিচারপতি শাসছুল হুদা এবং ৪টি মামলা খারিজ করে দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মানিক। এ সকল মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার বিচারকার্য প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সারের ২২ মার্চ শেখ হাসিনা এই দুই বিচারপতিকে হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। নিজেদের এতগুলি দুর্নীতির মামলা ক্ষমতায় বসে অধীনস্ত প্রশাসন ও দলীয় বিবেচনায় নিযুক্ত কৃতজ্ঞ বিচারপতিদের দিয়ে কৌশলে প্রত্যাহার/খারিজ করার পর তিনি এখন ‘সৎ’ সেজেছেন। যে দুর্নীতি দমন কমিশন কোমর বেঁধে বেগম খালেদা জিয়ার মামলা লড়েছে এবং তার জামিনের বিরোধিতা করছে- সেই দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনার ১৫টি মামলা খারিজ কিংবা প্রত্যাহার করার বিরুদ্ধে কেন অবস্থান নেয়নি? কেন কোনো আপিল করেনি?
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তার বিরুদ্ধে মোট ১৫টি মামলা ছিল। তবে কোনো মামলায় তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। ১৫টি মামলার মধ্যে ৬টি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। আর হাইকোর্টের মাধ্যমে খারিজ করিয়ে নেয়া হয় নাইকোসহ ৯টি মামলা।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদার মতোই শেখ হাসিনা একই ধরনের আরেকটি মামলার আসামি ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিজের মামলা খারিজ করে নিলেও বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি চলমান রয়েছে। অথচ একই কারণে এই মামলাটিও খারিজ হওয়ার কথা।
শেখ হাসিনার আমলে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত এই দুই বিচারপতির একজন বিচারপতি শামসুল হুদার বেঞ্চে মাত্র তিন মাসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫টি মামলা খারিজ করে দেয়া হয়। এই পাঁচটি মামলা হলো, ফ্রিগেট(যুদ্ধজাহাজ) ক্রয় দুর্নীতি, মামলা (৮৮৭ কোটি টাকা), মেঘনাকাটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি মামলা(১৮ কোটি টাকা), নাইকো দুর্নীতি মামলা(১৩ হাজার ৬০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা), ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি মামলা(৩ কোটি টাকা), এবং বেপজার পরামর্শক নিয়োগের মামলা (২ কোটি ২০ লাখ টাকা)। ঠিক একই সময়ে হাইকোর্টের অপর বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও মাত্র তিন মাসের মাধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির চারটি মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন। এই চারটি মামলা হলো, নভোথিয়েটার দুর্নীতি সংক্রান্ত ৩টি মামলা (৫২ কোটি টাকা) এবং মিগ যুদ্ধ বিমান ক্রম দুর্নীতি মামলা (৭০০ কোটি টাকা)।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সৎ হবেন, সেটাই সকল বাংলাদেশির কামনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নামে চেকের মাধ্যমে সরাসরি ঘুষ নেয়ার মামলা যদি রাষ্ট্রীয় প্রভাব বিস্তার করে প্রত্যাহার করা হয়- তাহলে দেশে আইনের শাসন আর থাকে কিভাবে? দলের জেলা সভাপতিকে হাইকোর্টের বিচার নিয়োগ তারই কোর্টে ৩ মাসের কম সময়ের ৫টি মামলা প্রত্যাহার করা কি নৈতিকতা সমর্থন করে? এর পরই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা সাফাই গান আর চিৎকার করে বলেন, আদালতের মাধ্যমে শেখ হাসিনার মামলা নিষ্পতি হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নয়? বাংলাদেশের জনগণ কি এতই বোকা? তারা কি কিছুই বোঝেন না?
এক টাকাও দুর্নীতি না করে বেগম খালেদা জিয়াকে যদি জেলে যেতে হয়, তবে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ও অন্যদের কী শাস্তি হওয়া উচিৎ তা ভবিষ্যতে জনগণের আদালতেই নির্ধারিত হবে ইনশাআল্লাহ।’