ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, আবাসিকে বিল বাড়ল ১৭৫ টাকা

জাতীয় ডেস্কঃ
গ্যাস ব্যবহারে এখন থেকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে গ্রাহকদের। এখন থেকে এক চুলা মাসিক বিল ৯২৫ টাকা ও দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে।

সোমবার থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হবে। এতদিন এক চুলার মাসিক বিল ছিল ৭৫০, দুই চুলার ৮০০ টাকা। অর্থাৎ মাসে বিল বাড়ল ১৭৫ টাকা।

আর যারা মিটারে বিল পান, তাদেরকে এখন ঘনমিটার প্রতি দাম দিতে হবে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। এতোদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৯ টাকা ১০ পয়সা।

রবিবার বিকালে কারওয়ানবাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

আবাসিকের পাশাপাশি বেড়েছে শিল্প, বাণিজ্যিক গ্যাসের দামও। দাম বাড়ানোর ফলে গৃহস্থালী পর্যায় থেকে শুরু করে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, চা বাগান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সিএনজিচালিত যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম জানান, ভারিত গড়ে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে ৩২.৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্তে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বছরে আট হাজার কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত অর্থ পাবে।

সবশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা থাকলেও মার্চে দাম কার্যকর হয়। আর জুলাই মাসের দাম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়।

গ্যাস সংকট সমাধানে সরকার বিদেশ থেকে তরল গ্যাস এনে পাইপলাইনে সরবরাহ করছে। এই বাড়তি দামের সঙ্গে বর্তমান দামের সমন্বয় করার ঘোষণা সরকার এক বছর আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল।

এখন পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। আরো ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি শিগগিরই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এ জন্য সরকারের ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আরো ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। শুধু চলতি অর্থবছরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

বাড়বে বাণিজ্যিক গ্যাসের দামও

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা। অর্থাৎ ঘনমিটারে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এতদিন দাম ছিল ৩৮ টাকা।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ টাকা ৪ পয়সা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ঘনমিটার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা এবং শিল্প কারখানা ও চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে।

বিইআরসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিএআরসি আইন ২০০৩-এর ধারা ২২ (খ) ও ৩৪ অনুযায়ী তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বাড়ানো হলো।

তবে বাণিজ্যিক গ্রাহকশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহস্থালি ছাড়া অন্য গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে মার্চ মাসে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ীই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আবেদনে এলএনজির কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো দরকার বলে উল্লেখ করে। এতে বলা হয়, সরকার জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি করছে। এখন প্রতিদিন ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে যা বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। বাড়তি দরে এই গ্যাস কিনে কম দামে সরবরাহ করা হবে। এতে করে জ্বালানি খাতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে।

কোম্পানিগুলো বলছে, আমদানি করা এলএনজির প্রতি হাজার ঘনফুটের মূল্য ১০ ডলার বা ৮২০ টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসাবে), অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত প্রতিহাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১২ টাকা ১৯ পয়সা। দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে দৈনিক দুই হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের হিসাবনিকাশ করে এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরের ৭ শহীদ পরিবারের মাঝে রমজানের উপহার পাঠালেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, আবাসিকে বিল বাড়ল ১৭৫ টাকা

আপডেট সময় ০৭:৩২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯
জাতীয় ডেস্কঃ
গ্যাস ব্যবহারে এখন থেকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে গ্রাহকদের। এখন থেকে এক চুলা মাসিক বিল ৯২৫ টাকা ও দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে।

সোমবার থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হবে। এতদিন এক চুলার মাসিক বিল ছিল ৭৫০, দুই চুলার ৮০০ টাকা। অর্থাৎ মাসে বিল বাড়ল ১৭৫ টাকা।

আর যারা মিটারে বিল পান, তাদেরকে এখন ঘনমিটার প্রতি দাম দিতে হবে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। এতোদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৯ টাকা ১০ পয়সা।

রবিবার বিকালে কারওয়ানবাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

আবাসিকের পাশাপাশি বেড়েছে শিল্প, বাণিজ্যিক গ্যাসের দামও। দাম বাড়ানোর ফলে গৃহস্থালী পর্যায় থেকে শুরু করে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, চা বাগান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সিএনজিচালিত যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম জানান, ভারিত গড়ে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে ৩২.৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্তে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বছরে আট হাজার কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত অর্থ পাবে।

সবশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা থাকলেও মার্চে দাম কার্যকর হয়। আর জুলাই মাসের দাম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়।

গ্যাস সংকট সমাধানে সরকার বিদেশ থেকে তরল গ্যাস এনে পাইপলাইনে সরবরাহ করছে। এই বাড়তি দামের সঙ্গে বর্তমান দামের সমন্বয় করার ঘোষণা সরকার এক বছর আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল।

এখন পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। আরো ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি শিগগিরই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এ জন্য সরকারের ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আরো ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। শুধু চলতি অর্থবছরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

বাড়বে বাণিজ্যিক গ্যাসের দামও

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা। অর্থাৎ ঘনমিটারে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এতদিন দাম ছিল ৩৮ টাকা।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ টাকা ৪ পয়সা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ঘনমিটার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা এবং শিল্প কারখানা ও চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে।

বিইআরসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিএআরসি আইন ২০০৩-এর ধারা ২২ (খ) ও ৩৪ অনুযায়ী তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বাড়ানো হলো।

তবে বাণিজ্যিক গ্রাহকশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহস্থালি ছাড়া অন্য গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে মার্চ মাসে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ীই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আবেদনে এলএনজির কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো দরকার বলে উল্লেখ করে। এতে বলা হয়, সরকার জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি করছে। এখন প্রতিদিন ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে যা বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। বাড়তি দরে এই গ্যাস কিনে কম দামে সরবরাহ করা হবে। এতে করে জ্বালানি খাতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে।

কোম্পানিগুলো বলছে, আমদানি করা এলএনজির প্রতি হাজার ঘনফুটের মূল্য ১০ ডলার বা ৮২০ টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসাবে), অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত প্রতিহাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১২ টাকা ১৯ পয়সা। দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে দৈনিক দুই হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের হিসাবনিকাশ করে এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।