মো: রায়হান চৌধুরীঃ
চট্টগ্রাম চান্দগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী আল-আমিন বারীয়া দরবার শরীফের বার্ষিক ওরছ ও ইছালে ছাওয়াব মাহফিল শুক্রবার রাতে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরীকত, রাহবরে শরীয়ত হযরতুল আল্লামা আলহাজ¦ মাওলানা শাহ্ছুফি ছৈয়দ বদরুদ্দোজা বারী ছাহেব (মা.জি.আ.)।
ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাছান মাহমুদ রাজা, কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার নবীয়াবাদ আ: ওয়াদুদ সরকার ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান সরকার ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলমের সার্বিক সহযোগিতায় মাহফিলটি সম্পন্ন হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বীনি দাওয়াত ও ত্বরীকতের খেদমতে যারা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অক্লান্ত প্ররিশ্রমের মাধ্যমে জীবন্ত রেখেছেন তন্মধ্যে হযরত শাহজী পীর ছাহেব (র:) ছিলেন অন্যতম একজন মহান ব্যাক্তি। ১৯৬৪ সালে তিনি পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। বহুদিন পর জানা যায় হযরত শাহজী পীর ছাহেব কেবলা সিলেট মহরতলীর গোলাপগঞ্জ এলাকার গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছেন এবং সেখানে প্রায় এক যুগ অবস্থান করেন। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইর একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও চিনকী আস্তানায় ইসলামি শিক্ষালয়ে তার শৈশব ও বাল্যকালের একটি অংশ কাটে। এসময়ে পবিত্র কুরআনে হাফেজ হন তিনি। পরে তিনি ভারতের সহরানপুর দারুল উলুমে আরবী, উর্দু, ফারর্সি ও ইংরেজী ভাষার উপর শিক্ষা লাভ করেন। তার তাসাউফের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রা:) এর আওলাদ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ দায়েম (র:) তার নিজের খেদমতে নিয়ে যান। পরে কাদেরীয়া আলিয়া ত্বরীকায় তিনি শাহজী পীর ছাহেব (রহ:) কে খেলাফত প্রধান করেন। এরপর থেকে তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ত্বরীকায় ১৭জন কামেল মুর্শিদের কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন।
তার মুর্শিদ কেবলাগন প্রায় সবাই সমকালীন সময়ের গাউস, কুতুব ও মশহুর বুজুর্গ ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি উলূল আযম সূফী সৈয়দ দায়েম লক্ষেèাবী (রহ:)-এর কাদেরীয়া আলীয়া ত্বরীকায় সাধনা করেন।
হযরত শাহজী পীর ছাহেব (র:)-এর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও খানকাহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তারপর থেকে খেলাফত গ্রহন করে দেশে অসংখ্য খানকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে এদেশে ইসলাম প্রচার প্রসারের বড় বড় মারকাজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে দ্বীনি দাওয়াতের এক সুবিশাল শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
আখেরী মোনাজাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নামে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের আশায় সারা বাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মাহফিলে প্রচুর লোক সমাগম হয়। নিজের ও আহল আওলাদের গুনাহ খাতা মাফির জন্য এবং দেশ-জাতির ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করে আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
মোনাজাতে কান্নার রোল পড়ে যায়। মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি আর আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে মাহফলি ও আশ-পাশের এলাকার পরিবেশ ছিল লক্ষণীয়। দরবারের আশিকীন, যাকেরীন, মুহিব্বীন, খলিফাবৃন্দ, দেশ-বিদেশের অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম, দেশ-বরেণ্য পীর-মাশায়েখগণ, সামাজিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজন মোনাজাতে অংশ নেয়।