আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
“তাইনে সাগরে ডুইবা মরলেও আমগোরে ভাসাইয়া গেলেন সাগরে। এখন সন্তানদের নিয়ে কী করব, কীভাবে বাঁচব, ভেবে কূল পাচ্ছি না। এই বলেই বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের শুশুন্ডা গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী মনিমালা বেগম।
গত সোমবার সকালে চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের শুশুন্ডা গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে আব্দুল আউয়াল (৫৪) সহ পাচঁ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, আব্দুল আউয়াল(৫৪) স্ত্রী, চার কন্যা ও এক ছেলে সন্তান নিয়ে ছিল তার পরিবার। দুই বছর পূর্বে বড় মেয়ে শাহিনুরকে বিয়ে দিয়ে ছিলেন। মাদকাসক্ত স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পারায় সংসার ছেড়ে এখন ঠাই বাবার বাড়ী। দ্বিতীয় মেয়ে কুহিনুর নবম শ্রেণিতে আর তৃতীয় মেয়ে মাহমুদা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে সামসুন নাহারের বয়স ৬ বছর। একমাত্র ছেলে শাকিল নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। এতো গুলো সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় সবাই তার মুখাপেক্ষী ছিলেন।
পেশায় একজন দিনমজুর হওয়ায় পরিবারের চাপ আর সন্তানদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হতো আউয়লের। তারই মাঝে সারাবিশ্বে করোনার মহামারীতে শুরু হয় একরকম অস্থিরতা। মানুষ হয়ে পরে গৃহবন্দী। লকডাউনে স্কুল,কলেজ, অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় কাজ-কর্ম। ঠিক তেমনি দিনমজুর আউয়ালের জীবনের পথ চলাও থমকে যায়। অন্যদের মতোই তারও রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে পরিবার নিয়ে আর্থিক অনটনে পরেন তিনি। কিন্তু এতে সে দমে যাননি। স্বপ্ন বুনলেন নতুন কিছু করার। তাই কিছু জমানো টাকা আর বাদবাকি ধার-কর্জ করে চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি করলেন একটি ট্রলার। কিছু দিন এই এলাকায় কাজ পেলেও পরে কাজে ভাটা পরে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের চাকা সচল রাখতে আউয়াল ট্রলার নিয়ে বেশি কাজের আশায় পাড়ি দেয় চাঁদপুর জেলায়। স্বপ্ন ছিল শত কষ্ট করে হলেও সন্তানদের মানুষ করে পরিবারকে সুখী করবেন।
কিন্তু কঠোর পরিশ্রমী স্বপ্নবাজ আউয়ালের সব স্বপ্ন চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। গত সোমবার সকালে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ট্রলারের মালিক আউয়ালসহ পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। স্ত্রী ও বড় মেয়ের আহাজারিতে এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। গত মঙ্গলবার সকালে শুশুন্ডা গ্রামে আব্দুল আওয়ালে দেহ দাফন করা হয়।
বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে স্থানীয় প্রশাসন জানতে পেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে নগদ ২০ হাজার টাকা অর্থিক সহযোগিতা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হাই প্রমূখ।