জাতীয় ডেস্কঃ
নিছক চুরির উদ্দেশ্যেই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের বাসায় যায় দুষ্কৃতিকারীরা। ইউএনও তাদের দেখে ফেলায় তিনি ও তার বাবার ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তবে চুরির ঘটনায় এই হামলা কি না তা খতিয়ে দেখতে সময় এবং আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে মনে করেন এলিট ফোর্সটি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় র্যাব-১৩ এর কোম্পানি কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত ঘটনাটির তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
র্যাব-১৩ রংপুর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যাচেষ্টা মামলার সন্দেহভাজন প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম, সান্টু ও নবীরুল। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, চুরির জন্য তারা ভেন্টিলেটর দিয়ে ইউএনওর বাসভবনে ঢোকেন। তবে ওয়াহিদা জেগে গিয়ে চুরিতে বাধা দেয়ায় তার ওপর হামলা চালায়।
র্যাব জানায়, ওয়াহিদা খানমের বাসায় হামলার ঘটনার দায় অভিযুক্ত আসাদুল হক স্বীকার করেছেন। আসাদুলের দাবি অনুযায়ী ইউএনওর ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন নবীরুল ইসলাম। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসায় হামলা চালানো হয়। নবীরুলকেও গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার জানান, ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীরকে আটক কেন করা হলো, সন্দেহটা কোথায়- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে র্যাবের এই শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করি। সে কারণে তাকে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের উল্লেখ করার মতো ভূমিকা ছিল না। তাই কথাবার্তা বলে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’
জাহাঙ্গীরের নামে ওয়ারেন্ট আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব কমান্ডার জানান, এ বিষয়ে পুলিশ দেখবে।
ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা গেঞ্জিসহ উদ্ধার হওয়া আলামত সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা ছায়া তদন্ত করছি। এ ঘটনার উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত ছাড়া বিস্তারিত বলা যাবে না। তদন্তের স্বার্থে আমরা প্রয়োজনে আরও অনেককে নিয়ে আসবো। আরও সময় দিতে হবে, আরও তদন্ত করতে হবে।’
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রংপুর ডিআইজির একজন প্রতিনিধি এবং দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ।
বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা উমর আলীকে পিটিয়ে আহত করে দুষ্কৃতিকারীরা। তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে পরে রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওয়াহিদা খানমকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়। গুরুতর আহত ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরেছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।