লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
চুল ঝরে যাওয়া প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া। চুল ঝরে যাবে এবং আবার নতুন চুল গজাবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ চুল পড়ে আমাদের। কিন্তু কখনও এই চুল পড়ার হার বেড়ে গেলে দুশ্চিন্তা হতেই পারে। চিরুনির মধ্যে গোছা গোছা চুল উঠতে দেখলে দুশ্চিন্তা হতেই পারে। চুল কেন পড়ছে, তার কারণটা আগে খুঁজে বের করুন।
নানা কারণে চুল পড়া বাড়তে পারে। যেমন: রাত জাগা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা, সন্তান প্রসবের পর বা আকস্মিক মানসিক আঘাত, শরীরে কিছু খাদ্য উপাদানের ঘাটতি, খুশকি বা মাথার ত্বকের কোনেও রোগ ইত্যাদি। হরমোনজনিত সমস্যা, জ্বর বা সংক্রমণ, মাথায় উকুনের আক্রমণ, ক্যানসার ও কেমোথেরাপির পর কিংবা চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করলেও চুল বেশি বেশি পড়া শুরু হতে পারে।
চুল পড়ার কারণ খুঁজে বের করুন
আপনার চুল আর ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর জিনের গভীর প্রভাব আছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে চুল পড়ার হারটা অনেক ক্ষেত্রেই বংশানুক্রমিক হয়। বিরল ক্ষেত্রে মহিলারাও এই সমস্যার শিকার হন। সেক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করার থাকে না, উইগ বা হেয়ার উইভিংয়ের সাহায্য নিয়ে অবশ্য দেখতে পারেন। অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটার মতো অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকলে ডাক্তারের পরামর্শমতো চিকিৎসা করালে তবেই কাজ হবে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেও চুল পড়ে যায়। তবে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পর যদি যত্নআত্তি ঠিকমতো করেন, তা হলে চুলের পুরোনো স্বাস্থ্য ফিরে আসতে পারে। সোরিয়াসিস বা ক্রনিক পেট খারাপের সমস্যা থাকলেও কিন্তু চুল পড়তে আরম্ভ করে। সেই সঙ্গে বিশেষ নজর দিতে হবে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও, অপুষ্টিতে ভুগলে কোনও ঘরোয়া সমাধানই কাজ করবে না।
নারকেলের দুধ ও তেল
নারকেলে উপস্থিত ফ্যাটের কারণে আপনার চুল স্বাস্থ্যের আভায় ঝলমল করবে। নিয়মিত তেল দিয়ে মাসাজ করুন, তবে হালকা হাতে মালিশ করবেন। খুব জোরে ঘষলে বেশি চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোরা বা বাটা নারকেল গরমজলে ভিজিয়ে দুধ বের করে নিন, তার পর তা মাথায় লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রাখুন। চুলের স্বাস্থ্য বাড়াতে যে প্রোটিন আর পটাশিয়াম একান্ত প্রয়োজন, তারই জোগান দেবে নারকেলের দুধ। সপ্তাহে একদিন করলেই হবে।
অ্যালো ভেরা
চুল আগে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। তার পর একটি অ্যালো ভেরার পাতা চিরে তার মধ্যেকার শাঁসটা বের করে নিন। চুলের গায়ে তা লাগান, স্ক্যাল্পে চক্রাকারে হাত ঘুরিয়ে মালিশ করুন। একদিন অন্তর করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়, এর ফলে চুল আর স্ক্যাল্পের পিএইচ ব্যালান্সে সমতা ফেরে, তাতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
দই, মধু, লেবুর রসের প্যাক
চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে এবং ভিটামিন বি ও প্রোটিনের জোগান বাড়াতে দই, লেবু, মধুর প্যাক আদর্শ। সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করার আগে লাগিয়ে রাখুন, শুকিয়ে গেলে চুল ধুয়ে নেবেন।
মেথি
সারা রাত মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন। এটা সরাসরি চুলে লাগাতে পারেন প্যাকের মতো, দই-মধুর সঙ্গে মিশিয়েও লাগানো সম্ভব। শুকনো হয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। মেথি চুলের বৃদ্ধির জন্য আবশ্যক।নিমপাতার নির্যাস: এক মুঠো নিমপাতা খুব ভালো করে ফুটিয়ে নিন এক লিটার জলে। মিশ্রণটা ঠান্ডা করে বোতলে ভরে রেখে দিন। সপ্তাহে অন্তত একবার শ্যাম্পু করার পর এই নিমের জলে চুল ধুয়ে নিন। স্ক্যাল্পে কোনওরকম ইনফেকশন বা খুশকির সমস্যা থাকলে নিমের প্রভাবে তা থেকে মুক্তি পাবেন। ফলে চুলের বৃদ্ধির হার বজায় থাকবে।
খাবারের দিকে নজর দিন
চুল পড়া কমাতে প্রথমত যথেষ্ট প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। ভিটামিন ‘বি ফাইভ’ বা বায়োটিন চুলের জন্য ভালো। ডিম, কলা, চর্বিহীন লাল মাংস, গাঢ় সবুজ সবজি, মিষ্টি আলু, শিমের বিচি ইত্যাদিতে আছে এই বায়োটিন। ‘ওমেগা থ্রি’ ফ্যাটি অ্যাসিডও মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে। এর উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, ডিম ইত্যাদি।
কাঠবাদামে রয়েছে বায়োটিন ও ম্যাগনেসিয়াম! নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে চুল ঘন হয়।ওটস-এ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, জিংক, ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-বি যা টাক পড়া আটকায়।
আখরোটে রয়েছে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি- সেভেন চা চুল পড়া কমায়, চুলের ফলিকর বা গোড়া মজবুত করে! পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে বায়োটিন (ভিটামিন বি সেভেন) যা চুলের বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী। বিশেষ করে যাদের মাথায় টাক পড়া শুরু হয়েছে, তারা খাবারের তালিকায় ডিমের সঙ্গে দুধ, দই, পনিরও রাখুন। এই সমস্ত খাবারে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন বি-টুয়েল্ভ, আয়রন, জিঙ্ক ও ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুল পড়া আটকায়, মাথায় টাক পড়তে দেয় না।
নিয়মিত ঘুম ও শরীরচর্চা জরুরি।খুশকির চিকিৎসা করুন। হরমোনজনিত কোনেও রোগ থাকলে চিকিৎসা নিন। যেকোনও শ্যাম্পু বা প্রসাধন ব্যবহারে সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে অ্যামোনিয়াম সালফেট, সোডিয়াম লরেথ সালফেট ইত্যাদি রাসায়নিক উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু না ব্যবহার করাই ভালো। তারপরও চুল বেশি বেশি পড়লে বা ত্বকে সমস্যা হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।