জাতীয় ডেস্কঃ
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে চারটি মামলায় পর পর গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির ঘটনায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে দলের নেতা-কর্মীরা। দলে সক্রিয় হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার হতে রাজধানীসহ সারাদেশে মিছিল-সমাবেশ চলছে। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি এবং স্বেচ্ছাসেবক দল। এসব কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও সরকারি দলের সাথে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। গ্রেফতার হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও বাড়ছে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। আজ শনিবার সারাদেশে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও আগের তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছেন।
করণীয় নির্ধারণ করতে বৃহস্পতিবার রাতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র ও আইনজীবী নেতারা বৈঠক করেন। এতে খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবীরা মামলাগুলোর সবশেষ গতি-প্রকৃতি ও অবস্থা তুলে ধরেন। আইনজীবীরা বৈঠকে জানান, আগামী সপ্তাহে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত পরিবর্তনের জন্য আপিল বিভাগের আবেদন নিষ্পত্তি করার কথা রয়েছে। পরপর চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনা রাজনৈতিক উসকানি। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি পাতানো নির্বাচনের কৌশল হিসেবে সরকার এ ধরনের কাজ করছে। বেগম জিয়া শিগগিরই লন্ডন থেকে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। আগামীকাল রবিবার পায়ের চিকিত্সকের কাছে যাবেন তিনি। ২১ বা ২২ অক্টোবর দেশে ফিরতে চাচ্ছেন বেগম জিয়া।
দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার সঙ্গে বৈঠকেরও সম্ভাবনা রয়েছে খালেদা জিয়ার। ওই বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
বেগম জিয়ার একাধিক আইনজীবী জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহে চারটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে আদালত। প্রথম গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ আসে গত সোমবার কুমিল্লার একটি আদালত থেকে। বাসে অগ্নিসংযোগের ফলে আট জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়ের করা একটি মামলায় এই গ্রেফতারি পরোয়ানা। পরে বৃহস্পতিবার ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ থেকে জিয়া চ্যারিট্যাবল ও জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পৃথক দুইটি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। একই দিনে জাতীয় পতাকা ও মানচিত্র অবমাননার মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুর নবী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সাথে গ্রেফতারের অগ্রগতি সম্পর্কে আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। এই গ্রেফতারী পরোয়না ইতোমধ্যে গুলশান থানা পৌঁছে গেছে বলে জানাগেছে। এই প্রতিটি গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রদানের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন চাইতে হবে। জামিনের জন্য কুমিল্লার আদালতেও যেতে হবে তাকে। বেগম জিয়ার আইনজীবী এডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার জানান, বেগম জিয়া আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি দ্রুত দেশে ফিরে আদালতে আশ্রয় নিয়ে জামিন প্রার্থনা করবেন।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। সরকার গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে গ্রেফতারী পরোয়ানা দিচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপি বিচলিত নয়। পরিস্থিতি আমরা আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। জনগণ রাজপথে নামছে।