ঢাকা ০৯:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোখের ঘা: কারণ ও প্রতিকার

 স্বাস্থ্য:

আমাদের চোখের সামনের অংশে যে গোলাকার কালো অংশ দেখা যায়, তাকে কালো রাজা বা কর্নিয়া বলা হয়। কোনো কারণে কর্নিয়ার প্রদাহ এবং পরে ঘা তৈরি হওয়াকে কর্নিয়াল আলসার বা কালো রাজার প্রদাহ বলা হয়।

চোখের ঘা কেন হয়

lচোখের আঘাতজনিত কারণে এই রোগ সবচেয়ে বেশি হয়। আমাদের দেশে ধান কাটার মৌসুমে ধানের পাতার আঘাতের কারণে এ রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়।

lঅপুষ্টিজনিত কারণে বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়।

lযাদের চোখের পাপড়ির গোড়ায় সব সময় অপরিষ্কার রাখার জন্য প্রদাহ বা ব্লেফারাইটিস হয়, তাদের চোখে কর্নিয়ার প্রদাহ হতে পারে।

lনেত্রনালি বন্ধজনিত চোখের পানি পড়া রোগের কারণেও কালো রাজার প্রদাহ হতে পারে।

রোগের লক্ষণ

lআলোতে চোখ খুলতে না পারা।

lচোখে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।

lচোখ লাল হয়ে যাওয়া।

lচোখ থেকে পানি পড়া।

lচোখের কালো মনিতে সাদা দাগ বা ঘা দেখা যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ।

প্রতিরোধে করণীয়

lচোখে কিছু পড়তে পারে বা চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন পেশায় যারা নিয়োজিত আছেন, তারা কাজ করার সময় গগল্স বা চশমা ব্যবহার করতে পারেন।

lচোখে কোনো কিছু পড়লে, বেশি ঘষাঘষি না করে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন।

lসর্বদা নিয়মমতো চোখ পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়।

lনেত্রনালির সমস্যার কারণে পানি পড়া রোগের চিকিত্সা করে নেয়া প্রয়োজন।

lকোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন শামুকের পানি, চুনের পানি ইত্যাদি ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো ব্যবহারের কারণে রোগ জটিলরূপ ধারণ করে।

lডাক্তারের পরামর্শে কর্নিয়াতে ঘা হওয়ার আগে ওষুধ ব্যবহার প্রয়োজন।

চিকিত্সা

আমাদের দেশের গ্রামেগঞ্জে কিছু কিছু হাতুড়ে চিকিত্সক চোখে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকারক পদার্থ, যেমন—শামুকের পানি, চুনের পানি ইত্যাদি দিয়ে এই রোগের চিকিত্সা শুরু করেন। পরিশেষে সম্পূর্ণ চোখে এই ঘা ছড়িয়ে পড়ে রোগ জটিল রূপ ধারণ করে। সুতরাং উপরোল্লিখিত উপসর্গ দেখামাত্র নিকটবর্তী চক্ষু চিকিত্সকের পরামর্শ প্রয়োজন। বিভিন্ন উন্নত চক্ষু চিকিত্সাকেন্দ্রে ঘা থেকে পুঁজ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে সেই পুঁজে যে জীবাণু পাওয়া যায় সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধের মাধ্যমে ঘা এর চিকিত্সা করা হয়। মনে রাখতে হবে, স্টেরইড জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহারের ফলে কর্নিয়ার ঘা জটিল রূপ নিতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সময়মতো ওষুধ ব্যবহারে এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব। তবে দ্রুত চিকিত্সা শুরু না হলে ঘা এর গভীরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে চিকিত্সার পরেও কর্নিয়া বা কালো রাজাতে দাগ পড়ে যাওয়ার ফলে স্থায়ী দৃষ্টি স্বল্পতা হতে পারে।

লেখক : চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট

পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতা

চেম্বার:চিটাগাং আই কেয়া সেন্টার

মেডিক্যাল কলেজ পূর্ব গেট

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

চোখের ঘা: কারণ ও প্রতিকার

আপডেট সময় ০৫:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
 স্বাস্থ্য:

আমাদের চোখের সামনের অংশে যে গোলাকার কালো অংশ দেখা যায়, তাকে কালো রাজা বা কর্নিয়া বলা হয়। কোনো কারণে কর্নিয়ার প্রদাহ এবং পরে ঘা তৈরি হওয়াকে কর্নিয়াল আলসার বা কালো রাজার প্রদাহ বলা হয়।

চোখের ঘা কেন হয়

lচোখের আঘাতজনিত কারণে এই রোগ সবচেয়ে বেশি হয়। আমাদের দেশে ধান কাটার মৌসুমে ধানের পাতার আঘাতের কারণে এ রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়।

lঅপুষ্টিজনিত কারণে বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়।

lযাদের চোখের পাপড়ির গোড়ায় সব সময় অপরিষ্কার রাখার জন্য প্রদাহ বা ব্লেফারাইটিস হয়, তাদের চোখে কর্নিয়ার প্রদাহ হতে পারে।

lনেত্রনালি বন্ধজনিত চোখের পানি পড়া রোগের কারণেও কালো রাজার প্রদাহ হতে পারে।

রোগের লক্ষণ

lআলোতে চোখ খুলতে না পারা।

lচোখে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।

lচোখ লাল হয়ে যাওয়া।

lচোখ থেকে পানি পড়া।

lচোখের কালো মনিতে সাদা দাগ বা ঘা দেখা যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ।

প্রতিরোধে করণীয়

lচোখে কিছু পড়তে পারে বা চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন পেশায় যারা নিয়োজিত আছেন, তারা কাজ করার সময় গগল্স বা চশমা ব্যবহার করতে পারেন।

lচোখে কোনো কিছু পড়লে, বেশি ঘষাঘষি না করে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন।

lসর্বদা নিয়মমতো চোখ পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়।

lনেত্রনালির সমস্যার কারণে পানি পড়া রোগের চিকিত্সা করে নেয়া প্রয়োজন।

lকোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন শামুকের পানি, চুনের পানি ইত্যাদি ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো ব্যবহারের কারণে রোগ জটিলরূপ ধারণ করে।

lডাক্তারের পরামর্শে কর্নিয়াতে ঘা হওয়ার আগে ওষুধ ব্যবহার প্রয়োজন।

চিকিত্সা

আমাদের দেশের গ্রামেগঞ্জে কিছু কিছু হাতুড়ে চিকিত্সক চোখে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকারক পদার্থ, যেমন—শামুকের পানি, চুনের পানি ইত্যাদি দিয়ে এই রোগের চিকিত্সা শুরু করেন। পরিশেষে সম্পূর্ণ চোখে এই ঘা ছড়িয়ে পড়ে রোগ জটিল রূপ ধারণ করে। সুতরাং উপরোল্লিখিত উপসর্গ দেখামাত্র নিকটবর্তী চক্ষু চিকিত্সকের পরামর্শ প্রয়োজন। বিভিন্ন উন্নত চক্ষু চিকিত্সাকেন্দ্রে ঘা থেকে পুঁজ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে সেই পুঁজে যে জীবাণু পাওয়া যায় সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধের মাধ্যমে ঘা এর চিকিত্সা করা হয়। মনে রাখতে হবে, স্টেরইড জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহারের ফলে কর্নিয়ার ঘা জটিল রূপ নিতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সময়মতো ওষুধ ব্যবহারে এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব। তবে দ্রুত চিকিত্সা শুরু না হলে ঘা এর গভীরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে চিকিত্সার পরেও কর্নিয়া বা কালো রাজাতে দাগ পড়ে যাওয়ার ফলে স্থায়ী দৃষ্টি স্বল্পতা হতে পারে।

লেখক : চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট

পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতা

চেম্বার:চিটাগাং আই কেয়া সেন্টার

মেডিক্যাল কলেজ পূর্ব গেট