ঢাকা ০৪:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চৌদ্দগ্রামে ছয় মেয়ের বাধায় দুই দিনেও বাবার লাশ দাফন করা যায়নি!

মুরাদনগর বার্তা ডেস্ক রিপোর্ট :

বাবা মারা গেছেন, কিন্তু তার দাফন হচ্ছে না। এ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ালো ছয় মেয়ে। তাদের দাবি একটাই সম্পত্তি বন্টন। তা না হলে বাবার লাফ করতে দেয়া হবে না। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজই করছেন এই ছয় মেয়ে।

ঘটনাটি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের কবরুয়া গ্রামের। এই বাবার নাম নুরুল হক ভূঁইয়া। তার দুই সংসার। প্রথম সংসারের ছয় মেয়েই লাশ দাফনে বাধা হয়েছে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতো অটল সিন্ধান্তেই আছেন দ্বিতীয় সংসারের সন্তানরা। মারা যাওয়ার দুই দিন পার হলেও লাশ দাফনে এগিয়ে আসছেন না কেউই। আপন ঘরেই পড়ে আছে মরদেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা লাশ দাফন করা হয়নি।

জানা গেছে, গত নিজ ঘরেই শুক্রবার ভোরে ব্রেইন স্ট্রোক করেন নুরুল হক ভূঁইয়া। এরপর তাকে নেয়া হয় ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে সোমবার সকাল ৯টায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। লাশ বাড়িতে নেয়ার পর শুরু হয় জটিলতা। পূর্ব বিরোধের জেরে লাফ দাফনে এগিয়ে আসছেন না কেউই।

আরো জানা গেছে, নুরুল হক ভূঁইয়া প্রায় পঞ্চাশ বছর পূর্বে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের কাগাইশ গ্রামের মজুমদার বাড়ির আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করেন। নুরুল হক-আয়েশা দম্পতির সংসারে ছয় কন্যা সন্তান রয়েছে। চট্টগ্রাম স্টিল মিলে চাকরির সুবাধে সুরমা আক্তার নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন। নুরুল হকের দ্বিতীয় সংসারে দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি নতুন বাড়ি করে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা নুরুল হক ভুঁইয়া থেকে ১৪০ শতক জমি কবলা করে তাদের নামে নিয়ে নেন।

এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রথম স্ত্রী ও তার কন্যাদেরকে হুমকি প্রদর্শন করে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে-মেয়েরা। পরে নুরুল হক ভুঁইয়ার প্রথম স্ত্রী বাদী হয়ে সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা দাবি কওে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টির নিস্পত্তি করা হলেও বাড়িতে এসে ২য় স্ত্রীর সন্তানরা আবারও সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত রাখে। সমস্যা সমাধান করার আগেই নুরুল হক ভুঁইয়া সোমবার সকালে মৃত্যু হলে পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে লাশ দাফনে বাধা প্রদান করে প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে সন্তান। এসময় দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা প্রথম স্ত্রীর কন্যাদেরকে সম্পত্তি নিতে অস্বীকার করে।

প্রবাস থেকে নুরুল হক ভুঁইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে নুরুল আফছার মোবাইল ফোনে গ্রামবাসীকে বলেন, বাবার লাশ দাফনের দরকার নেই, আমরা কাউকে এক কড়া সম্পত্তিও দেব না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য পেয়ার আহমেদ বলেন, নিহত নুরুল হক ভুঁইয়ার দুই পরিবারের শান্তির জন্য এবং তাঁর লাশ দাফনের ব্যবস্থায় গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পিতার লাশ দাফনে বাধা দেয়ার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ২য় পক্ষ ছাড় দিলে এতো সমস্যা হতো না। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবার ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা হচ্ছে।
সূত্র-ডেইলি বাংলাদেশ

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

চৌদ্দগ্রামে ছয় মেয়ের বাধায় দুই দিনেও বাবার লাশ দাফন করা যায়নি!

আপডেট সময় ০৬:১৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

মুরাদনগর বার্তা ডেস্ক রিপোর্ট :

বাবা মারা গেছেন, কিন্তু তার দাফন হচ্ছে না। এ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ালো ছয় মেয়ে। তাদের দাবি একটাই সম্পত্তি বন্টন। তা না হলে বাবার লাফ করতে দেয়া হবে না। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজই করছেন এই ছয় মেয়ে।

ঘটনাটি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের কবরুয়া গ্রামের। এই বাবার নাম নুরুল হক ভূঁইয়া। তার দুই সংসার। প্রথম সংসারের ছয় মেয়েই লাশ দাফনে বাধা হয়েছে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতো অটল সিন্ধান্তেই আছেন দ্বিতীয় সংসারের সন্তানরা। মারা যাওয়ার দুই দিন পার হলেও লাশ দাফনে এগিয়ে আসছেন না কেউই। আপন ঘরেই পড়ে আছে মরদেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা লাশ দাফন করা হয়নি।

জানা গেছে, গত নিজ ঘরেই শুক্রবার ভোরে ব্রেইন স্ট্রোক করেন নুরুল হক ভূঁইয়া। এরপর তাকে নেয়া হয় ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে সোমবার সকাল ৯টায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। লাশ বাড়িতে নেয়ার পর শুরু হয় জটিলতা। পূর্ব বিরোধের জেরে লাফ দাফনে এগিয়ে আসছেন না কেউই।

আরো জানা গেছে, নুরুল হক ভূঁইয়া প্রায় পঞ্চাশ বছর পূর্বে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের কাগাইশ গ্রামের মজুমদার বাড়ির আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করেন। নুরুল হক-আয়েশা দম্পতির সংসারে ছয় কন্যা সন্তান রয়েছে। চট্টগ্রাম স্টিল মিলে চাকরির সুবাধে সুরমা আক্তার নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন। নুরুল হকের দ্বিতীয় সংসারে দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি নতুন বাড়ি করে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা নুরুল হক ভুঁইয়া থেকে ১৪০ শতক জমি কবলা করে তাদের নামে নিয়ে নেন।

এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রথম স্ত্রী ও তার কন্যাদেরকে হুমকি প্রদর্শন করে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে-মেয়েরা। পরে নুরুল হক ভুঁইয়ার প্রথম স্ত্রী বাদী হয়ে সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা দাবি কওে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টির নিস্পত্তি করা হলেও বাড়িতে এসে ২য় স্ত্রীর সন্তানরা আবারও সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত রাখে। সমস্যা সমাধান করার আগেই নুরুল হক ভুঁইয়া সোমবার সকালে মৃত্যু হলে পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে লাশ দাফনে বাধা প্রদান করে প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে সন্তান। এসময় দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা প্রথম স্ত্রীর কন্যাদেরকে সম্পত্তি নিতে অস্বীকার করে।

প্রবাস থেকে নুরুল হক ভুঁইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে নুরুল আফছার মোবাইল ফোনে গ্রামবাসীকে বলেন, বাবার লাশ দাফনের দরকার নেই, আমরা কাউকে এক কড়া সম্পত্তিও দেব না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য পেয়ার আহমেদ বলেন, নিহত নুরুল হক ভুঁইয়ার দুই পরিবারের শান্তির জন্য এবং তাঁর লাশ দাফনের ব্যবস্থায় গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পিতার লাশ দাফনে বাধা দেয়ার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ২য় পক্ষ ছাড় দিলে এতো সমস্যা হতো না। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবার ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা হচ্ছে।
সূত্র-ডেইলি বাংলাদেশ