ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদের খসড়ায় বিএনপির সায়, জামায়াত-এনসিপি নাখোশ

জাতীয় ডেস্কঃ 

ঐকমত্য কমিশন প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’- এর খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে এতদিন সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। খসড়ার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। খসড়ায় উল্লেখিত অঙ্গীকারসমূহ ও সেগুলো নির্বাচিত সরকারের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের বিষয়েও একমত দলটি। তবে, নির্বাচনের আগেই সনদের কিছু বিষয় বাস্তবায়ন ও গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে জামায়াত। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার ছাড়া দলটি সনদে সই করবে না।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা শেষে দলগুলোর নেতারা খসড়া নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল আলোচনার শুরুতে বলেছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (৩১ জুলাই) মধ্যে সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গতকালের সংলাপেও রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ পদ্ধতির বিসয়ে একমত হতে পারেনি। ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস’ পদ্ধতির বিষয়ে দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছে। যার কারণে, গতকাল কমিশন নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এতে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সংসদে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন ঠিক থাকবে বলেও গতকালের সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করতে দলগুলো একমত হলেও এর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা রয়ে গেছে। এছাড়া, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও ঐকমত্য হয়নি।

গতকালের আলোচনা শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার, এসবের মধ্য থেকে কিছু কিছু বিষয় দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়ও ফিরে এসেছে। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় যেসকল বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার একটা তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুধবার (আজ) পাঠানো হবে।

সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে গতকালের আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ জানান, প্রায় সকল রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদে ১০০ আসন উন্নীত করার বিষয়ে একমত। এই আসনগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ের আলোচনায় একমত না হলেও, বিদ্যমান ৫০টি আসন যে অবস্থায় আছে, তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। তবে, পর্যায়ক্রমে নারীদের আসন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেবিষয়ে আমরা অনেকটাই ঐকমত্যের জায়গায় এসেছি। বুধবার (আজ) কমিশনের পক্ষ থেকে একটা লিখিত ভাষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়াও গতকাল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলী রীয়াজ বলেন, গতকাল কমিশনের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে একটি সংশোধিত ও সমন্বিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বাছাই কমিটির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেবিষয়ে কারো ভিন্নমত নেই। তবে ‘র‍্যাঙ্কড চয়েজ’ পদ্ধতির ব্যবহার হবে কিনা এবিষয়ে আলোচনা আটকে যাচ্ছে। ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস’ নিয়ে বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের ভিন্নমত আছে। এবিষয়ে কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে গতকালের আলোচনায়ও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনায় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের যে খসড়া পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এবিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি  নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারো কোনো মতামত আছে কিনা, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা বুধবার (আজ) জমা দেব।

খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সেবিষয়ে তিনি বলেন, খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সেবিষয়ে আমরা একমত। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে। তিনি বলেন, কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে  সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে। নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।

সংস্কার কমিশনের ৭০০-এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, সনদের এই খসড়া অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে, এটা একটা নমুনামাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না। জামায়াত নিজস্ব একটি খসড়া সনদ তৈরি করছে এবং কমিশনে জমা দেবে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত পার্লামেন্টে তা অনুমোদন; অথবা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া যেতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে না হলে জুলাই সনদে আমরা স্বাক্ষর করবো না। এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। যেন পরবর্তী সরকার এর মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত না হতে পারে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে অধিকাংশ দল একমত। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল দ্বিমত জানিয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ

জুলাই সনদের খসড়ায় বিএনপির সায়, জামায়াত-এনসিপি নাখোশ

আপডেট সময় ০৭:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

জাতীয় ডেস্কঃ 

ঐকমত্য কমিশন প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’- এর খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে এতদিন সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। খসড়ার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। খসড়ায় উল্লেখিত অঙ্গীকারসমূহ ও সেগুলো নির্বাচিত সরকারের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের বিষয়েও একমত দলটি। তবে, নির্বাচনের আগেই সনদের কিছু বিষয় বাস্তবায়ন ও গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে জামায়াত। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার ছাড়া দলটি সনদে সই করবে না।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা শেষে দলগুলোর নেতারা খসড়া নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল আলোচনার শুরুতে বলেছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (৩১ জুলাই) মধ্যে সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গতকালের সংলাপেও রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ পদ্ধতির বিসয়ে একমত হতে পারেনি। ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস’ পদ্ধতির বিষয়ে দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছে। যার কারণে, গতকাল কমিশন নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এতে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সংসদে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন ঠিক থাকবে বলেও গতকালের সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করতে দলগুলো একমত হলেও এর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা রয়ে গেছে। এছাড়া, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও ঐকমত্য হয়নি।

গতকালের আলোচনা শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার, এসবের মধ্য থেকে কিছু কিছু বিষয় দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়ও ফিরে এসেছে। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় যেসকল বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার একটা তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুধবার (আজ) পাঠানো হবে।

সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে গতকালের আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ জানান, প্রায় সকল রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদে ১০০ আসন উন্নীত করার বিষয়ে একমত। এই আসনগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ের আলোচনায় একমত না হলেও, বিদ্যমান ৫০টি আসন যে অবস্থায় আছে, তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। তবে, পর্যায়ক্রমে নারীদের আসন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেবিষয়ে আমরা অনেকটাই ঐকমত্যের জায়গায় এসেছি। বুধবার (আজ) কমিশনের পক্ষ থেকে একটা লিখিত ভাষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়াও গতকাল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলী রীয়াজ বলেন, গতকাল কমিশনের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে একটি সংশোধিত ও সমন্বিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বাছাই কমিটির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেবিষয়ে কারো ভিন্নমত নেই। তবে ‘র‍্যাঙ্কড চয়েজ’ পদ্ধতির ব্যবহার হবে কিনা এবিষয়ে আলোচনা আটকে যাচ্ছে। ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস’ নিয়ে বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের ভিন্নমত আছে। এবিষয়ে কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে গতকালের আলোচনায়ও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনায় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের যে খসড়া পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এবিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি  নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারো কোনো মতামত আছে কিনা, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা বুধবার (আজ) জমা দেব।

খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সেবিষয়ে তিনি বলেন, খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সেবিষয়ে আমরা একমত। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে। তিনি বলেন, কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে  সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে। নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।

সংস্কার কমিশনের ৭০০-এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, সনদের এই খসড়া অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে, এটা একটা নমুনামাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না। জামায়াত নিজস্ব একটি খসড়া সনদ তৈরি করছে এবং কমিশনে জমা দেবে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত পার্লামেন্টে তা অনুমোদন; অথবা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া যেতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে না হলে জুলাই সনদে আমরা স্বাক্ষর করবো না। এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। যেন পরবর্তী সরকার এর মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত না হতে পারে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে অধিকাংশ দল একমত। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল দ্বিমত জানিয়েছে।