ঢাকা ১১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিক রোগীদের পা রক্ষা করা হচ্ছে বাইপাসে

 স্বাস্থ্য ডেস্কঃ
দেশের লাখ লাখ ডায়াবেটিক রোগীর ঠিকানা এখন বারডেম হাসপাতাল। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ না করলে পা, কিডনি, চোখ, হৃদপিণ্ড মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই সার্জারি বিভাগে আসেন পায়ের নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে। এসব রোগীর একটা বড় অংশের পা কেটে ফেলতে হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমানে উন্নত চিকিত্সার মাধ্যমে বারডেমে পায়ে রিং পরিয়ে বাইপাস সার্জারি করে ডায়াবেটিক রোগীদের পা রক্ষা করা হচ্ছে। অর্থাৎ পঙ্গুত্বরোধী ভাসকুলার সার্জারির সুযোগ মিলছে এখন বাংলাদেশে।
জামালপুর থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, পায়ের পাতায় বোধশক্তি পাই না। আঙ্গুল কালো হয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ভেতরে দেখা যায় রহিম সরকার ও সাবুল আলমকে। তাদের একজনের পায়ে ফোড়া ফুলে ফেঁপে আছে। অন্যজনের পায়ে শুকনো ঘা নিয়ে এসেছেন। এরা কেউ জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে কি না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর ডায়াবেটিস যদি হয়েও যায় তাহলেও এই রোগ কেবল সচেতন থাকার মাধ্যমে সারাজীবন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ফুটকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. জে আর ওয়াদুদ বলেন, প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের যত্নের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন দাঁত মাজার মতো প্রতি রাতে পা কুসুম গরম পানি, সাবান দিয়ে ধুয়ে শুষ্ক করে মুছে ফেলতে হবে যাতে করে আঙ্গুলের ফাঁকে পানি না লেগে থাকে। ভালোভাবে পায়ে হাত বুলিয়ে দেখতে হবে, যেন কোথাও ক্ষত হয়েছে কি না। এরপর নারকেল তেল লাগাতে হবে। এই নারকেল তেলে এন্টি ফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে। অযথা দামি তেল বা লোশন লাগানোর দরকার নেই। ব্লেড বা ধারালো কোনো কিছু দিয়ে পায়ের নখ কাটা যাবে না। নেইলকাটার ব্যবহার করতে হবে। সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করতে হবে, ফিতাওয়ালা জুতা ব্যবহার করবেন যাতে পা ফোলা থাকলে ফিতার মাধ্যমে ঠিকমাপে তা ব্যবহার করা যায়।
ডা. জে আর ওয়াদুদ বলেন, বর্তমানে উন্নত চিকিৎসায় পায়ে রিং পরিয়ে ও বাইপাস অপারেশন করিয়ে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে ডায়াবেটিক রোগীদের পা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে একটি ভাস্কুুলার সার্জারি ইউনিট খোলা হয়েছে। যেসব রোগীর পায়ে ক্ষত একবার হয়েছে তাদের আবারো ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ গুণ বেশি। যাদের এক পা কাটা হয়ে গেছে তাদের দুই/তিন বছরের মধ্যে অন্য পা কাটার আশঙ্কা থাকে এবং পাঁচ বছরের পর থেকে তাদের এই পায়ের কারণে মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী কনসালটেন্ট ডা. এসএমজি সাকলায়েন রাসেল বলেন, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে নিয়মিতভাবে পায়ের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের ডুপ্লেক্স পরীক্ষা করা হয়। এনজিওগ্রাম করে প্রয়োজনে স্টোস্টিং বা বাইপাস করে দেওয়া হয়। এমন কি কৃত্রিম রক্তনালী ব্যবহার করেও বাইপাস অপারেশন করে দেওয়া হয়। এসব অপারেশনের কারণে অনেক রোগী অকালে পা হারা বা পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাচ্ছে। তিনি বলেন, হার্টের যেমন বাইপাস হয়, তেমনি আমরাও বাইপাস করি। বাইপাসের ক্ষেত্রে কৃত্রিম ভেইনও ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, গত ১০ মাসে আমরা ২৪১টি অপারেশন এই হাসপাতালে করেছি।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর সেন্ট্রাল স্কুলের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পুরষ্কার বিতরণ

ডায়াবেটিক রোগীদের পা রক্ষা করা হচ্ছে বাইপাসে

আপডেট সময় ০২:২৮:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মার্চ ২০১৮
 স্বাস্থ্য ডেস্কঃ
দেশের লাখ লাখ ডায়াবেটিক রোগীর ঠিকানা এখন বারডেম হাসপাতাল। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ না করলে পা, কিডনি, চোখ, হৃদপিণ্ড মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই সার্জারি বিভাগে আসেন পায়ের নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে। এসব রোগীর একটা বড় অংশের পা কেটে ফেলতে হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমানে উন্নত চিকিত্সার মাধ্যমে বারডেমে পায়ে রিং পরিয়ে বাইপাস সার্জারি করে ডায়াবেটিক রোগীদের পা রক্ষা করা হচ্ছে। অর্থাৎ পঙ্গুত্বরোধী ভাসকুলার সার্জারির সুযোগ মিলছে এখন বাংলাদেশে।
জামালপুর থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, পায়ের পাতায় বোধশক্তি পাই না। আঙ্গুল কালো হয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ভেতরে দেখা যায় রহিম সরকার ও সাবুল আলমকে। তাদের একজনের পায়ে ফোড়া ফুলে ফেঁপে আছে। অন্যজনের পায়ে শুকনো ঘা নিয়ে এসেছেন। এরা কেউ জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে কি না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর ডায়াবেটিস যদি হয়েও যায় তাহলেও এই রোগ কেবল সচেতন থাকার মাধ্যমে সারাজীবন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ফুটকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. জে আর ওয়াদুদ বলেন, প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের যত্নের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন দাঁত মাজার মতো প্রতি রাতে পা কুসুম গরম পানি, সাবান দিয়ে ধুয়ে শুষ্ক করে মুছে ফেলতে হবে যাতে করে আঙ্গুলের ফাঁকে পানি না লেগে থাকে। ভালোভাবে পায়ে হাত বুলিয়ে দেখতে হবে, যেন কোথাও ক্ষত হয়েছে কি না। এরপর নারকেল তেল লাগাতে হবে। এই নারকেল তেলে এন্টি ফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে। অযথা দামি তেল বা লোশন লাগানোর দরকার নেই। ব্লেড বা ধারালো কোনো কিছু দিয়ে পায়ের নখ কাটা যাবে না। নেইলকাটার ব্যবহার করতে হবে। সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করতে হবে, ফিতাওয়ালা জুতা ব্যবহার করবেন যাতে পা ফোলা থাকলে ফিতার মাধ্যমে ঠিকমাপে তা ব্যবহার করা যায়।
ডা. জে আর ওয়াদুদ বলেন, বর্তমানে উন্নত চিকিৎসায় পায়ে রিং পরিয়ে ও বাইপাস অপারেশন করিয়ে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে ডায়াবেটিক রোগীদের পা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে একটি ভাস্কুুলার সার্জারি ইউনিট খোলা হয়েছে। যেসব রোগীর পায়ে ক্ষত একবার হয়েছে তাদের আবারো ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ গুণ বেশি। যাদের এক পা কাটা হয়ে গেছে তাদের দুই/তিন বছরের মধ্যে অন্য পা কাটার আশঙ্কা থাকে এবং পাঁচ বছরের পর থেকে তাদের এই পায়ের কারণে মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী কনসালটেন্ট ডা. এসএমজি সাকলায়েন রাসেল বলেন, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে নিয়মিতভাবে পায়ের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের ডুপ্লেক্স পরীক্ষা করা হয়। এনজিওগ্রাম করে প্রয়োজনে স্টোস্টিং বা বাইপাস করে দেওয়া হয়। এমন কি কৃত্রিম রক্তনালী ব্যবহার করেও বাইপাস অপারেশন করে দেওয়া হয়। এসব অপারেশনের কারণে অনেক রোগী অকালে পা হারা বা পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাচ্ছে। তিনি বলেন, হার্টের যেমন বাইপাস হয়, তেমনি আমরাও বাইপাস করি। বাইপাসের ক্ষেত্রে কৃত্রিম ভেইনও ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, গত ১০ মাসে আমরা ২৪১টি অপারেশন এই হাসপাতালে করেছি।