তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি, এনপিএসবি, এমএফএস এবং পেমেন্ট সিস্টেম গেটওয়ে তথা পিএসও-এর মতো একেকটি সাইলো দেশের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার রূদ্ধ করে রেখেছে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব। ডিজিটাল জন অবকাঠামোতে আন্তঃক্রিয়শীলতা তৈরির মাধ্যমে এই বাধা অতিক্রম করতে চান তিনি।
এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসের শেষেই সাইবার সুরক্ষা আইন গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে বলে জানান এই প্রকৌশলী উপদেষ্টা। এছাড়াও ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনে ডেটা লোকালাইজেশন, ব্যক্তি তথ্য উন্মুক্তকরণে প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়বদ্ধতা এবং ডেটা কার কাছ থেকে কোথায় যাচ্ছে, কে কেন কার তথ্য শেয়ার করছে-এসব বিষয় শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখার মতো নানা ইতিবাচক বিষয় থাকছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও মানসম্মত বিদ্যুৎ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ নীতিমালা পুনর্বিন্যাস এবং সেমিকন্ডাক্টর পলিসি প্রকাশ করা হবে।
আইএসপি, মোবাইল অপারেটর সবারই পলিসি সাপোর্ট দরকার স্বীকার করে ফয়েজ জানান, তারা যেন নিজেদের অবকাঠামোগুলো স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারেন-সেই সুযোগ তৈরি করা হবে। কেননা, আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে বাধা বিদ্যমান ফাইবার পলিসি। এ জন্য আমরা জ্ঞাত ও অজ্ঞাত বাধা দূর করব। আঞ্চলিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেবা। লাইসেন্সিং পাহাড় ভেঙে আমরা সর্বোচ্চ চারটি লেয়ারে বেধে দেব। এগুলো হবে ইন্টারন্যাশনাল লেয়ার, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, অ্যাকসেস লেয়ার এবং সার্ভিস লেয়ার। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পলিসি প্রকাশ করতে হবে। সম্প্রতি রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের একটি সেমিনারে দেয়া উপস্থাপনায় এসব তথ্য তথ্য তুলে ধরেন তিনি। তবে এসব কিছুই জুলাই অভ্যুত্থানের দর্শন অনুযায়ী বিপুল কর্মসংস্থানকে লক্ষ্য করে এবং মানসম্মত সেবার ভিত্তিতে করা হবে। ফয়েজ তৈয়ব বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, সব সিস্টেমকে আমরা একটি ঝুড়িতে পুরছি। অথবা নতুন কিছু তৈরি করছি। এর পরিবর্তে আমরা বিদ্যমান চাকাগুলোকে একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত করছি। একই কারণে আমরা এআই এবং ক্লাউড পলিসিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আগামী মে নাগাদ ইউনেস্কো যখন এআই রেডিনেস ম্যাথোলডজি প্রকাশ করবে তখন আমরা আমাদের এআই পলিসি ঢেলে সাজাব। ক্লাউড পলিসি চূড়ান্ত করব।’
তার ভাষায়, বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়াতে ডিজিটাল টুলস বিশেষ করে এআই, ব্লকচেইন ও উপাত্ত ব্যবস্থার বিকল্প নেই। তবে উদ্ভাবনের নামে দেশে ব্যবসায় জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেছেন ফয়েজ। বলেছেন, ডিজিটাল সাইলোতে একটা সমস্যা হলে বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে সমস্যাও লাখে লাখে ছড়িয়ে পড়ে। এই যেমন-পাসপোর্ট সিস্টেমে সমস্যা হলে তা একই সঙ্গে বহু মানুষকে প্রভাবিত করে। ডেটা ইন্টার অপারেবিলিটিতে সমস্যা হলেও বহু ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে।
তবে এ জন্য কাউকে দায়ী না করে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এজন্য সাইলো থেকে বেরিয়ে ইন্টারঅপারেবিলিটির ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।
তিনি বলেন, ‘এতদিন বিষয়টি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হলেও জুলাই বিপ্লবের পর আমরা সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে এখনো দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। এটা সবাই একসঙ্গে থাকার কারণে সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিতে ডেটা গভর্নেন্সের পাশাপাশি ইন্টারনেটের এথিকাল ব্যবহার ও ডেটা সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।