ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল বাংলাদেশ : কিছু দিক-নির্দেশনা

তথ্যপ্রযোক্তি ডেস্কঃ

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চলেছে। বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এ ধরনের যে সমস্ত সংস্থা রয়েছে, তাদের সকলেরই অভিমত, বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারও তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ বলে বিবেচিত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে গত ১০ বছর দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারকে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

সাধারণ জনগণের আয়-ব্যয় এর মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন : অর্থনীতির একটি সাধারণ তত্ত্ব হচ্ছে, আয় বাড়লে ভোগ বাড়ে এবং ভোগ বাড়লে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বাড়ে। চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়েছে, আর যে কারণে আয় সবার না বাড়লেও ব্যয় সবারই বেড়েছে। গত দু’বছরে ৯২.৩০% মানুষের ব্যয় বেড়েছে। মাত্র ৭.৩৯% এর ব্যয় বাড়েনি। আয় বৃদ্ধির হারের চাইতে ব্যয় বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হওয়ায় বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি অন্য সবার ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হয়। তাই এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সমন্বয় থাকে অথবা সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য যেন বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ : ঢাকার অতিকেন্দ্রিকতা বজায় রাখা বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার প্রধান কারণ। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি প্রধান দপ্তর ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় স্থাপন করা, নানা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পালা করে নানা জেলায় আয়োজন করা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সীমা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেওয়া। কয়েকটি বড় মাপের সরকারি বিভাগের প্রধান কার্যালয় পর্যায়ক্রমে আট বিভাগে স্থানান্তর করা (যেমন: রেলওয়ে ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর চট্টগ্রামে) ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে আরও নানা পরামর্শ দিতে পারে। তার আগে দরকার সরকারের রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত। সরকারকে আগে ঠিক করতে হবে ‘তারা বাংলাদেশকে এক-নগরের দেশ করে রাখবে না।’ তারা দেশের প্রশাসন, শিল্প ও ব্যবসাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে। এই অঙ্গীকার বা নীতি গ্রহণ না করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিস্তারিত কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হবে না। রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা অনেক বড় কাজ। সরকারের পক্ষে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা : বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ তরুণ। দুঃখের বিষয় হলো, এদের একটি বড় অংশেরই কোনো কাজ নেই এবং কর্মসংস্থান নেই। দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। প্রতিবছরই কর্মবাজারে নতুন ২১ লাখ তরুণ-তরুণী যুক্ত হচ্ছে। সরকারি চাকরির মাধ্যমে যে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় তা সবাই জানেন। বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের পথও সহজ নয়।

বাজার জ্ঞানের অভাব, আর্থিক খাতে প্রবেশ অগম্যতা, মার্কেটিং দুর্বলতা, ভাষাজ্ঞানের দক্ষতার অভাব এবং সর্বোপরি সমাজে উদ্যোক্তা-বিরোধী পরিবেশ নতুন উদ্যোক্তাদের মোটেই উত্সাহ জোগায় না। দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা অতীব প্রয়োজন। তাদের সৃজনশীল মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ, মূলধনের ব্যবস্থা এবং উত্পাদিত পণ্য বিপণনের ব্যবস্থাসহ উদ্ভাবনের জন্য সরকারের পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের ভাবনাতেও আনতে হবে নিত্য নতুন কিছু করার আগ্রহ। নতুন উদ্যোগে কেউ ব্যর্থ হলে সেজন্য তার কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য কাউকে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর ক্ষমতায়ন একটি দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখে। শহরের নারীরা কর্মক্ষেত্রে বেশ কিছুটা অগ্রসর হলেও গ্রামের নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। দেশের উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সকল নারীকে শিক্ষিত করা এবং সকল শিক্ষিত নারীকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্যতম উপকরণ হলো আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি। তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার ও ব্যবহারের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর এর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কসহ দেশের অন্যান্য হাইটেক পার্কের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কসহ দেশের সকল জেলায় হাইটেক পার্কের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও দেশের সত্যিকার প্রযুক্তিবিদদের তাদের কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

কৃষি-উন্নয়ন : বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের উন্নতির অর্থ হলো দেশের উন্নয়ন। সাধারণ কৃষকের ভাগ্যের উন্নতি না ঘটলে কখনোই দেশের কৃষির উন্নয়ন ঘটবে না। তাই কৃষি পণ্যের সঠিক ব্যবহার ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে অঞ্চলভিত্তিক কৃষি শিল্প নগরী গড়ে তুলতে হবে যার মূল উদ্দেশ্য হবে কৃষিপণ্যের সঠিক সংরক্ষণ এবং কৃষিপণ্য প্রসেসিং এর মাধ্যমে নানা রকম পণ্য উত্পাদন যা দেশ-বিদেশে বাজারজাত করণে বড় ভূমিকা পালন করবে।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সকল জেলা শহরে কৃষি শিল্প নগরী গঠন ও এগুলোর পুরোদমে কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে।

শিল্প ও কারখানা প্রতিষ্ঠা : ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ভারী শিল্প ও কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বেশকিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। যেমন— জাতীয় রোবটিক্স গবেষণা ইন্সটিটিউট, জাতীয় সফটওয়্যার উন্নয়ন গবেষণা ইন্সটিটিউট ইত্যাদি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিশ্বের বড় বড় শিল্প ও কারখানা; যেমন: টয়োটো, অ্যাপল, গুগল, নকিয়া ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাবতীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বমানের শিল্প ও কারখানাগুলোর কার্যক্রম ও উত্পাদন বাংলাদেশের মাটিতে শুরু করার সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সকল গ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্কুল ও কলেজ স্থাপন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এবং দেশের সমাজ ব্যবস্থার আলোকে বাস্তবসম্মত শিক্ষা দিতে হবে যার মধ্যে নৈতিকতাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রয়োজনবোধে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার আওতায় আনা যেতে পারে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে দেশের শিল্প ও বাস্তবতানির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। এখানকার জনগণ কঠোর পরিশ্রমী। প্রশাসনিক দক্ষতা আর সদিচ্ছার মাধ্যমে এ দেশের উন্নয়ন করা অসম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনামূলক নেতৃত্ব এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় এই দেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি আমরা, তা সত্যিই একদিন দৃশ্যমান হবে—তা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক : প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি ও প্রেসিডেন্ট, ইন্টারনেট সোসাইটি, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

ডিজিটাল বাংলাদেশ : কিছু দিক-নির্দেশনা

আপডেট সময় ১১:১২:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০১৯
তথ্যপ্রযোক্তি ডেস্কঃ

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চলেছে। বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এ ধরনের যে সমস্ত সংস্থা রয়েছে, তাদের সকলেরই অভিমত, বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারও তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ বলে বিবেচিত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে গত ১০ বছর দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারকে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

সাধারণ জনগণের আয়-ব্যয় এর মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন : অর্থনীতির একটি সাধারণ তত্ত্ব হচ্ছে, আয় বাড়লে ভোগ বাড়ে এবং ভোগ বাড়লে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বাড়ে। চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়েছে, আর যে কারণে আয় সবার না বাড়লেও ব্যয় সবারই বেড়েছে। গত দু’বছরে ৯২.৩০% মানুষের ব্যয় বেড়েছে। মাত্র ৭.৩৯% এর ব্যয় বাড়েনি। আয় বৃদ্ধির হারের চাইতে ব্যয় বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হওয়ায় বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি অন্য সবার ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হয়। তাই এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সমন্বয় থাকে অথবা সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য যেন বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ : ঢাকার অতিকেন্দ্রিকতা বজায় রাখা বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার প্রধান কারণ। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি প্রধান দপ্তর ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় স্থাপন করা, নানা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পালা করে নানা জেলায় আয়োজন করা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সীমা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেওয়া। কয়েকটি বড় মাপের সরকারি বিভাগের প্রধান কার্যালয় পর্যায়ক্রমে আট বিভাগে স্থানান্তর করা (যেমন: রেলওয়ে ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর চট্টগ্রামে) ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে আরও নানা পরামর্শ দিতে পারে। তার আগে দরকার সরকারের রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত। সরকারকে আগে ঠিক করতে হবে ‘তারা বাংলাদেশকে এক-নগরের দেশ করে রাখবে না।’ তারা দেশের প্রশাসন, শিল্প ও ব্যবসাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে। এই অঙ্গীকার বা নীতি গ্রহণ না করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিস্তারিত কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হবে না। রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা অনেক বড় কাজ। সরকারের পক্ষে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা : বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ তরুণ। দুঃখের বিষয় হলো, এদের একটি বড় অংশেরই কোনো কাজ নেই এবং কর্মসংস্থান নেই। দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। প্রতিবছরই কর্মবাজারে নতুন ২১ লাখ তরুণ-তরুণী যুক্ত হচ্ছে। সরকারি চাকরির মাধ্যমে যে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় তা সবাই জানেন। বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের পথও সহজ নয়।

বাজার জ্ঞানের অভাব, আর্থিক খাতে প্রবেশ অগম্যতা, মার্কেটিং দুর্বলতা, ভাষাজ্ঞানের দক্ষতার অভাব এবং সর্বোপরি সমাজে উদ্যোক্তা-বিরোধী পরিবেশ নতুন উদ্যোক্তাদের মোটেই উত্সাহ জোগায় না। দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা অতীব প্রয়োজন। তাদের সৃজনশীল মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ, মূলধনের ব্যবস্থা এবং উত্পাদিত পণ্য বিপণনের ব্যবস্থাসহ উদ্ভাবনের জন্য সরকারের পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের ভাবনাতেও আনতে হবে নিত্য নতুন কিছু করার আগ্রহ। নতুন উদ্যোগে কেউ ব্যর্থ হলে সেজন্য তার কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য কাউকে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর ক্ষমতায়ন একটি দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখে। শহরের নারীরা কর্মক্ষেত্রে বেশ কিছুটা অগ্রসর হলেও গ্রামের নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। দেশের উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সকল নারীকে শিক্ষিত করা এবং সকল শিক্ষিত নারীকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্যতম উপকরণ হলো আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি। তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার ও ব্যবহারের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর এর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কসহ দেশের অন্যান্য হাইটেক পার্কের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কসহ দেশের সকল জেলায় হাইটেক পার্কের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও দেশের সত্যিকার প্রযুক্তিবিদদের তাদের কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

কৃষি-উন্নয়ন : বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের উন্নতির অর্থ হলো দেশের উন্নয়ন। সাধারণ কৃষকের ভাগ্যের উন্নতি না ঘটলে কখনোই দেশের কৃষির উন্নয়ন ঘটবে না। তাই কৃষি পণ্যের সঠিক ব্যবহার ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে অঞ্চলভিত্তিক কৃষি শিল্প নগরী গড়ে তুলতে হবে যার মূল উদ্দেশ্য হবে কৃষিপণ্যের সঠিক সংরক্ষণ এবং কৃষিপণ্য প্রসেসিং এর মাধ্যমে নানা রকম পণ্য উত্পাদন যা দেশ-বিদেশে বাজারজাত করণে বড় ভূমিকা পালন করবে।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সকল জেলা শহরে কৃষি শিল্প নগরী গঠন ও এগুলোর পুরোদমে কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে।

শিল্প ও কারখানা প্রতিষ্ঠা : ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ভারী শিল্প ও কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বেশকিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। যেমন— জাতীয় রোবটিক্স গবেষণা ইন্সটিটিউট, জাতীয় সফটওয়্যার উন্নয়ন গবেষণা ইন্সটিটিউট ইত্যাদি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিশ্বের বড় বড় শিল্প ও কারখানা; যেমন: টয়োটো, অ্যাপল, গুগল, নকিয়া ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাবতীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বমানের শিল্প ও কারখানাগুলোর কার্যক্রম ও উত্পাদন বাংলাদেশের মাটিতে শুরু করার সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সকল গ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্কুল ও কলেজ স্থাপন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এবং দেশের সমাজ ব্যবস্থার আলোকে বাস্তবসম্মত শিক্ষা দিতে হবে যার মধ্যে নৈতিকতাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রয়োজনবোধে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার আওতায় আনা যেতে পারে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে দেশের শিল্প ও বাস্তবতানির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। এখানকার জনগণ কঠোর পরিশ্রমী। প্রশাসনিক দক্ষতা আর সদিচ্ছার মাধ্যমে এ দেশের উন্নয়ন করা অসম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনামূলক নেতৃত্ব এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় এই দেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি আমরা, তা সত্যিই একদিন দৃশ্যমান হবে—তা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক : প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি ও প্রেসিডেন্ট, ইন্টারনেট সোসাইটি, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার