নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) সংবাদদাতা ঃ
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নারান্দিয়া পশ্চিমপাড়ে গোমতী নদী রুদ্রমূর্তি ধারন করেছে। এর ফলে কয়েক দিনের ব্যবধানে এখানে চিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। ভাঙ্গনের ভয়াবহতায় বিভিন্ন বসতবাড়ী ও গাছ-গাছালি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরো অনেক বসতবাড়ী, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ।
সরজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর ভাঙ্গনে একের পর বিলীন হচ্ছে উপজেলার কলাকান্দি, ভিটিকান্দি নারান্দিয়া ও জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতবাড়ী, গাছ-পালা ও রাস্তা-ঘাট। বিগত মৌসুমগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন স্থানে ইটের ব্লক, বালির বস্তা ফেলা ও ডুবন্ত বাঁশ নির্মাণ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। স্থানীয়ভাবে লোকজনও বাঁশের বেড়া ও নানা কিছু ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ভাঙ্গন থামছে না।
এদিকে বর্ষার শুরুতেই আকস্মিক এ ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। দক্ষিণ নারান্দিয়ার পশ্চিমপাড় ছাড়াও আফজালকান্দি, খানেবাড়ী গৌবিন্দপুর, উত্তর ও দক্ষিণ মানিকনগর, ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, হরিপুর বাজার, দুলারামপুর, দড়িকান্দি, নারায়নপুর, হাইধরকান্দি, আসমানিয়া, নারান্দিয়া পূর্বপাড়, রসূলপুর, জিয়ারকান্দি, শোলাকান্দি ও লালপুর গ্রামের সংলগ্ন অংশেও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙ্গন রোধে নূন্যতম কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার দুঃখ গোমতী নদী; এখন তিতাসের দুঃখে পরিণত হয়েছে। গোমতীর এ ভয়ঙ্কর থাবায় ক্ষতবিক্ষত নদীর পশ্চিমপাড়ের তোফাজ্জল মাষ্টার, জোহর আলী, মোকবুল আহমেদ, সাদেক হোসেন, রুহুল আমিন, ফজলু হক, নায়েব আলী সরকার, জাকির হোসেন, আবুল কাশেম, আবুল হাসেম, তোতা মিয়া, বিল্লাল হোসেন, নাছির উদ্দিন, আব্দুল মালেক এবং নদীর পূর্বপাড়ের সিদ্দিকুর রহমান, কবির হোসেন, জাকির হোসেন, মহসিন ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, মাইনউদ্দিন সরকার, মোহাম্মদ আলী, দুল্লাল মেম্বার এর বাড়িসহ প্রায় ৫০টি পরিবার এবার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গোমতী নদীর ভাঙ্গনে উপরে উল্লেখিতগ্রামগুলো ছাড়াও দাসকান্দি বাজার, ভিটিকান্দি ইউনিয়ন অফিস, খেলার মাঠ এবং হরিপুর বাজার বিলিন হয়ে যায়। একাধিক স্থানের বেঁড়ি বাঁধও ভেঙ্গে যায়।
এলাকাবাসীর জানান, দক্ষিণ নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ের কয়েকটি বিদ্যুৎ খুঁটি, দঃ নারান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একাধিক জামে মসজিদ নদীতে বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমি বৃহস্পতিবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকটি পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা হয়েছে এবং উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে দ্রুত ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যাদের কোন ভিটেমাটি নেই তাদের খাসজমিতে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে উপস্থাপন করার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইউএনও মহোদয় সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। ভাঙ্গনরোধ ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনে আশ্বাস দিয়েছে। আমিও সার্বক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। শীঘ্রই তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাটি পরিদর্শনে আসবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে আমিসহ কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন ভূঁইয়া ও স্থানীয় নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন ভাঙ্গনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক সহযোগিতার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।