নাজমুল করিম ফারুক :
কুরবানীর হাটে যাওয়ার পথে নিজ গরুর আঘাতে নিহত হয়েছে নসিমন চালক মোঃ মন্টু মিয়া (৫৫)। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজাপুর সংগলœ নিহতের চকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। স্বামীর এমন মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লেও ক্ষোভে লাশ দেখতে যায়নি প্রথম স্ত্রী কড়িকান্দি বাজারের চা বিক্রিতা আলেয়া বেগম।
ঘটনার পর দুপুর আড়াইটায় কড়িকান্দি ভূঁইয়া বাড়ি (মন্টু মিয়ার পুরাতন বাড়ি) গিয়ে দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। এসময় কথা হয় তার প্রথম সংসারের বড় মেয়ে রাহিমা আক্তারের সাথে। রাহিমা জানান, এটা আমাদের পুরাতন বাড়ি। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর দ্বিতীয় মা, ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে রাজাপুর চকের বাড়িতে থাকে। দুপুরে কড়িকান্দি গরুর বাজারে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে যাওয়ার সময় গরুটি বাবাকে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়। এসময় গরুটি পানিতে দাপরা দাপরি করতে ছিল। লোকজন গরুটি উদ্ধার করতে গিয়ে দেখে আব্বা গরুর নিচে পড়ে আছে। বাবাকে উদ্ধার করার আগেই বাবা মারা যায়। আমরা খবর পেয়ে ঐ বাড়ি থেকে লাশ এবাড়িতে নিয়ে এসেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কড়িকান্দি গ্রামের মন্টু মিয়া তার স্ত্রী আলেয়া বেগম ও ৩ মেয়ে ২ ছেলে থাকা অবস্থায় প্রায় ১২ বছর আগে আলেয়া বেগমের খালাতো বোন মজিবর বেগমকে বিয়ে করে। তখন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি আলেয়া বেগম। কোলে থাকা ছোট মেয়ে রিতাসহ ২ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে আলেয়া বেগম আলাদা জীবন যাপন করতে থাকে। প্রথম দিকে আলেয়া বেগম ইট ভাঙার কাজ করতেন এবং শীত মৌসুমে কড়িকান্দি বাজারের গৌরীপুর-হোমনা সড়কের খোলা জায়গায় পিঠা বানিয়ে সংসার চালাতেন। এর মাঝে ২ মেয়ে বিয়ে দিয়ে ২ ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। ২ ছেলে বর্তমানে সিএনজি অটোরিক্সা চালায়। পরে আলেয়া বেগম কড়িকান্দি বাজারের রাজাপুর সিএনজি স্টেশনে একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে চা-পান-সিগারেট বিক্রি করে জীবনের সাথে এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
নিহতের লাশ দেখে আসার পর বিকাল সাড়ে ৩টায় যখন আলেয়া বেগমের চা দোকানে চা খেতে ছিলাম, তখন অনেকে এসে আলেয়া বেগমকে জিজ্ঞাস করছে সে লাশ দেখতে গিয়েছিল কিনা? অবলীলায় আলেয়া বেগম প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে, না। এরই মাঝে আলেয়া বেগমের দুই ছেলে ইসমাইল ও ইউসুফ বাবার কবর খুঁড়ে এসেছে দোকানে। মার দিকে তাকিয়ে বলছে- মা তুমি যাও বাবাকে একটু দেখে আসো। আলেয়া বেগমের সরল জবাব- না আমি যাবো না, তোরা যা।