ঢাকা ০৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন বাঙালি কন্যার বিজয়ে আনন্দে আত্মহারা বাংলাদেশি কমিউনিটি

প্রবাস ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে আবারো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যার অভাবনীয় বিজয়ে আনন্দ উচ্ছাসে আত্মহারা লন্ডনস্থ বাঙালি কমিউনিটি। নির্বাচিত তিনজনই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে নিজ নিজ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জয়লাভ করেছেন।
লন্ডনে বাঙালির গর্ব রুশনারা আলী : পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে এই তৃতীয় বার তিনি নির্বাচিত হলেন।এবারে তিনি ৩৫ হাজার ৫৯৩ ভোটের ব্যবধানে সরকারি দল কনজারভেটিভ পার্টির শার্লট চেরিকোকে হারিয়েছেন। তার মোট প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে ৪২ হাজার ৯৬৯ এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট।
মিস আলী ২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম কোনো বাঙালি এমপি নির্বাচিত হন। এ সময়ে তিনি  ১২ হাজার ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২৪ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় মেয়াদে একই আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং বিরোধী দল থেকে  হাউজ অব কমন্সে সাফল্যের সঙ্গে ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ রাজনীতিতে বেশ আলোচিত মিস আলী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরাবরই ফিলিস্তিন ও মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কঠোর প্রতিবাদ কর আসছেন। পরে ডেভিট ক্যামেরন তাকে বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বচ্চো ডিগ্রিধারী মিস আলী লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার পদের জন্যও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক : বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি সেন্ট্রাল লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে থেকে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন লাভ করে মিস টিউলিপ  ২০১৫ সালে প্রথমবার হাউজ অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হন। তখন তিনি  হাজার ১৩৮ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারে তিনি পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ক্লেয়ার লুইচ লিল্যান্ড পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯০৪ ভোট। এবারে তার জয়ের ব্যবধান সকলে অভাবনীয় হিসাবে দেখছেন। মূলত মিস টিউলিপের আগে দীর্ঘ বছর এই আসনে খ্যাতিমান ব্রিটিশ গ্ল্যামার জগতের তারকা গ্লেন্ডা জ্যাকসন এমপি ছিলেন। ফলে সঙ্গত কারণে এই আসনের দিকে শুরু থেকেই সকলের নজর ছিল। মিস টিউলিপ ২০১৫ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিক বিষয়ে বিরোধী দল থেকে লেবার পার্টির ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্রেক্সিট বিরোধী অবস্থানের কারণে ব্রিটিশ রাজনীতিতে বেশ আলোচিত মুখ।  এমনকি আমেরিকান বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামকে যুক্তরাজ্যে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে মার্কিন গণমাধ্যমের নজরে আসেন। তিনি কিংস কলেজ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মজীবনে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ওই এলাকা থেকে স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে  লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে রাজনৈতিক কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন।
ড. রূপা  হক : সেন্ট্রাল লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে এইবার দ্বিতীয় মেয়াদে হাউজ অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হলেন ড. রূপা হক। তিনি এবারে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী  মোরিসি পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৩০ ভোট।
২০১৫ সালের নির্বাচনে ২৭৪ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ফলে বাঙালি কমিউনিটির পর্যবেক্ষকরা তার বিজয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু  মেধাবী এই বাঙালি কন্যা বরাবরই ওই আশংকার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এবারে তিনি গতবারের তুলনায় এবারে জয়লাভ করেছেন ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে। তিনি পেশায় একজন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক  এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তার আসনটিও ছিল বেশ আলোচিত এবং হাডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
ইত্তেফাক
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

তিন বাঙালি কন্যার বিজয়ে আনন্দে আত্মহারা বাংলাদেশি কমিউনিটি

আপডেট সময় ০২:৪২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০১৭
প্রবাস ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে আবারো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যার অভাবনীয় বিজয়ে আনন্দ উচ্ছাসে আত্মহারা লন্ডনস্থ বাঙালি কমিউনিটি। নির্বাচিত তিনজনই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে নিজ নিজ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জয়লাভ করেছেন।
লন্ডনে বাঙালির গর্ব রুশনারা আলী : পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে এই তৃতীয় বার তিনি নির্বাচিত হলেন।এবারে তিনি ৩৫ হাজার ৫৯৩ ভোটের ব্যবধানে সরকারি দল কনজারভেটিভ পার্টির শার্লট চেরিকোকে হারিয়েছেন। তার মোট প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে ৪২ হাজার ৯৬৯ এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট।
মিস আলী ২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম কোনো বাঙালি এমপি নির্বাচিত হন। এ সময়ে তিনি  ১২ হাজার ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২৪ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় মেয়াদে একই আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং বিরোধী দল থেকে  হাউজ অব কমন্সে সাফল্যের সঙ্গে ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ রাজনীতিতে বেশ আলোচিত মিস আলী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরাবরই ফিলিস্তিন ও মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কঠোর প্রতিবাদ কর আসছেন। পরে ডেভিট ক্যামেরন তাকে বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বচ্চো ডিগ্রিধারী মিস আলী লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার পদের জন্যও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক : বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি সেন্ট্রাল লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে থেকে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন লাভ করে মিস টিউলিপ  ২০১৫ সালে প্রথমবার হাউজ অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হন। তখন তিনি  হাজার ১৩৮ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারে তিনি পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ক্লেয়ার লুইচ লিল্যান্ড পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯০৪ ভোট। এবারে তার জয়ের ব্যবধান সকলে অভাবনীয় হিসাবে দেখছেন। মূলত মিস টিউলিপের আগে দীর্ঘ বছর এই আসনে খ্যাতিমান ব্রিটিশ গ্ল্যামার জগতের তারকা গ্লেন্ডা জ্যাকসন এমপি ছিলেন। ফলে সঙ্গত কারণে এই আসনের দিকে শুরু থেকেই সকলের নজর ছিল। মিস টিউলিপ ২০১৫ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিক বিষয়ে বিরোধী দল থেকে লেবার পার্টির ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্রেক্সিট বিরোধী অবস্থানের কারণে ব্রিটিশ রাজনীতিতে বেশ আলোচিত মুখ।  এমনকি আমেরিকান বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামকে যুক্তরাজ্যে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে মার্কিন গণমাধ্যমের নজরে আসেন। তিনি কিংস কলেজ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মজীবনে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ওই এলাকা থেকে স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে  লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে রাজনৈতিক কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন।
ড. রূপা  হক : সেন্ট্রাল লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে এইবার দ্বিতীয় মেয়াদে হাউজ অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হলেন ড. রূপা হক। তিনি এবারে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী  মোরিসি পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৩০ ভোট।
২০১৫ সালের নির্বাচনে ২৭৪ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ফলে বাঙালি কমিউনিটির পর্যবেক্ষকরা তার বিজয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু  মেধাবী এই বাঙালি কন্যা বরাবরই ওই আশংকার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এবারে তিনি গতবারের তুলনায় এবারে জয়লাভ করেছেন ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে। তিনি পেশায় একজন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক  এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তার আসনটিও ছিল বেশ আলোচিত এবং হাডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
ইত্তেফাক