ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দূষিত পানিকেও পানযোগ্য করবে ‘আশ্চর্য স্ট্র’

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর দুইশ দশ কোটি মানুষ এখনো বিশুদ্ধ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যে কোন সহিংসতা এমনকি যুদ্ধের কারণে প্রতিবছর যে পরিমাণ মানুষ মারা যায় তার থেকেও বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় পানিবাহিত রোগে। পানি দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এক ‘ম্যাজিক স্ট্র’। আশ্চর্য ধরনের এই স্ট্র’র সাহায্যে যে কোন পানি পান করা যাবে নিরাপদে, তা যতো দূষিতই হোক না কেন। স্ট্র’র নির্মাতা দাবি করেন, একেবারে দূষিত পানিও যদি এই স্ট্র দিয়ে পান করা হয় তাহলে ৯৯.৯ শতাংশ পরজীবী এবং ৯৯.৯৯৯৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হবে। কাঁদাপানিও এই স্ট্র’র মধ্য দিয়ে গেলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায়। বিশেষ এই স্ট্র’র নাম দেয়া হয়েছে ‘লাইফস্ট্র’।
বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা। চাহিদা বাড়লেও জোগানের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের (আইএফআরসি) মতে, বর্তমান বিশ্বে ৮৮ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ পানি হলেও এর সামান্যই মানুষ ব্যবহার করতে পারে। প্রায় ৯৭ শতাংশ পানিই লবণাক্ত আর মাত্র ১.৫ শতাংশ মিষ্টি পানি। আইএফআরসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত পানি পান করার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩১ লাখ মানুষ মারা যায়। পানিবাহিত রোগে প্রতি মিনিটে অন্তত চারটি শিশুর মৃত্যু হয়। সাধারণত দূষিত পানিতে থাকা পরজীবী আর ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড জ্বরের মতো ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।
১৯৯৬ সালে ডেনমার্কের উদ্যোক্তা মিখেল ফ্রান্ডসেন আফ্রিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল পানিবাহিত রোগ থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো। তার তৈরি করা লাইফস্ট্র গিনির মানুষকে পরজীবী কৃমি থেকে রক্ষা করেছে। দূষিত পানির মাধ্যমে এই কৃমি মানুষের শরীরে গিয়ে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। কিন্তু মিখেলের তৈরি করা লাইফস্ট্র আফ্রিকার দেশ থেকে ভয়াবহ এই পরজীবীকে একপ্রকার সমূলে উৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৮৬ সালে আফ্রিকার দেশগুলোতে সাড়ে পঁয়ত্রিশ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত থাকলেও এখন তা শূন্যের কাছাকাছি। আফ্রিকার দেশগুলোর বিশেষ এই কৃমির কথা মাথায় রেখেই মূলত এই লাইফস্ট্র তৈরি করা হয়েছিল। এখন এই লাইফস্ট্র’তে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এক একটি স্ট্র দিয়ে ৪ হাজার লিটার পর্যন্ত পানি পরিশোধন করা সম্ভব যা কিনা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য পরজীবী মুক্ত করে পানিকে। হাইতি, ইকুয়েডর, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডেও ব্যাপক ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত সংস্করণের এই লাইফস্ট্র।-বিবিসি
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

দূষিত পানিকেও পানযোগ্য করবে ‘আশ্চর্য স্ট্র’

আপডেট সময় ০১:০২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মার্চ ২০১৮
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর দুইশ দশ কোটি মানুষ এখনো বিশুদ্ধ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যে কোন সহিংসতা এমনকি যুদ্ধের কারণে প্রতিবছর যে পরিমাণ মানুষ মারা যায় তার থেকেও বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় পানিবাহিত রোগে। পানি দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এক ‘ম্যাজিক স্ট্র’। আশ্চর্য ধরনের এই স্ট্র’র সাহায্যে যে কোন পানি পান করা যাবে নিরাপদে, তা যতো দূষিতই হোক না কেন। স্ট্র’র নির্মাতা দাবি করেন, একেবারে দূষিত পানিও যদি এই স্ট্র দিয়ে পান করা হয় তাহলে ৯৯.৯ শতাংশ পরজীবী এবং ৯৯.৯৯৯৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হবে। কাঁদাপানিও এই স্ট্র’র মধ্য দিয়ে গেলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায়। বিশেষ এই স্ট্র’র নাম দেয়া হয়েছে ‘লাইফস্ট্র’।
বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা। চাহিদা বাড়লেও জোগানের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের (আইএফআরসি) মতে, বর্তমান বিশ্বে ৮৮ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ পানি হলেও এর সামান্যই মানুষ ব্যবহার করতে পারে। প্রায় ৯৭ শতাংশ পানিই লবণাক্ত আর মাত্র ১.৫ শতাংশ মিষ্টি পানি। আইএফআরসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত পানি পান করার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩১ লাখ মানুষ মারা যায়। পানিবাহিত রোগে প্রতি মিনিটে অন্তত চারটি শিশুর মৃত্যু হয়। সাধারণত দূষিত পানিতে থাকা পরজীবী আর ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড জ্বরের মতো ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।
১৯৯৬ সালে ডেনমার্কের উদ্যোক্তা মিখেল ফ্রান্ডসেন আফ্রিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল পানিবাহিত রোগ থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো। তার তৈরি করা লাইফস্ট্র গিনির মানুষকে পরজীবী কৃমি থেকে রক্ষা করেছে। দূষিত পানির মাধ্যমে এই কৃমি মানুষের শরীরে গিয়ে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। কিন্তু মিখেলের তৈরি করা লাইফস্ট্র আফ্রিকার দেশ থেকে ভয়াবহ এই পরজীবীকে একপ্রকার সমূলে উৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৮৬ সালে আফ্রিকার দেশগুলোতে সাড়ে পঁয়ত্রিশ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত থাকলেও এখন তা শূন্যের কাছাকাছি। আফ্রিকার দেশগুলোর বিশেষ এই কৃমির কথা মাথায় রেখেই মূলত এই লাইফস্ট্র তৈরি করা হয়েছিল। এখন এই লাইফস্ট্র’তে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এক একটি স্ট্র দিয়ে ৪ হাজার লিটার পর্যন্ত পানি পরিশোধন করা সম্ভব যা কিনা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য পরজীবী মুক্ত করে পানিকে। হাইতি, ইকুয়েডর, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডেও ব্যাপক ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত সংস্করণের এই লাইফস্ট্র।-বিবিসি