দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সিজিরিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ রেখে দেয়ার ৫ মাস পর দ্বিতীয় বার অপারেশন করে গজ বের করার কারণে শারমিন আক্তার (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ এনে ৩ চিকিৎসকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ওই প্রসূতির বাবা দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোবারক হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অপারেশনকারী সার্জন ও দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রোজিনা আক্তারকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। অন্য আসামীরা হলো, আল ইসলাম হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা, এনেসথেসিয়া ডা. মেহেদুল হাসান পারভেজ, হাসপাতালের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ ও গ্রাম্য চিকিৎসক সফিকুর রহমান।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়।
মামলায় অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ নভেম্বর মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের রাসেল মিয়ার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে দেবিদ্বার আল ইসলাম হসপিটালে সিজিরিয়ান অপারেশন করেন ওই হাসপাতালের খ-কালীন চিকিৎসক ডা. রোজিনা আক্তার ও তার সহযোগি ডা. শামীমা আক্তার লিন্টাসহ অন্যান্যরা। জন্ম হয় ছেলে সন্তান। পরে গত ৯ নভেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়।
শারমিনের বড় ভাই রহুল আমিন জানান, আল ইসলাম হাসপাতাল থেকে তার বোন বাড়ি ফেরার পর ব্যথা আরও বেড়ে গেলে তাকে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রচুর ওষুধ খেতে দেন। কোথাও আসল রোগ নির্নয় হয়নি। কিন্তু তার জীবন সংকটাপন্ন দেখে গত ৬ এপ্রিল জেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে তার অপারেশন করে পেট থেকে গজ বের করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় গত শনিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে তাকে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল এবং পরে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।
মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘ এ সময়ে দেশের অনেক নামী-দামী হসপিটালে ঘুরেছি, অর্থ ব্যয় করেছি। কিন্তু সব স্থানেই ভুল চিকিৎসা ও প্রতারিত হয়েছি। প্রকৃত রোগ কেউই নির্নয় করতে পারেনি।
ওই প্রসূতির স্বামী রাসেল মিয়া জানান, ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রীকে হারাতে হলো, দুটি শিশু সন্তান তাদের মাকে হারালো। বুধবার ভোরে শারমিনের মরদেহ ঢাকা থেকে তার বাবার বাড়ি জেলার দেবিদ্বারের হোসেনপুর গ্রামের বাড়িতে প্রথম জানাজা এবং আমার গ্রামের বাড়ি জেলার মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামে ২য় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আল ইসলাম হাসপাতালের চেয়ারম্যান নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, ওই প্রসূতির দুটি অপারেশন হয়েছে। এ বিষয়ে যেহেতু দুটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেহেতু কার অপারেশনের ভুলে এ রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা তদন্তে বের হবে।
মুঠোফোনে অপারেশনকারী সার্জন ডা. রোজিনা আক্তার বলেন, গত ৫ মাস আগে প্রসূতি শারমিনের সফল অপারেশন করার পর সুস্থ হয়ে তিনি বাড়িতে যান, পরে ১২ তম দিনে এসে তিনি সেলাই কেটে যান, কিন্তু সে তখনো তার সমস্যার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা আমাকে অবহিত করেনি।
এছাড়াও ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের দেয়া ছাড়পত্রে ‘অপারেশনে গজ’ বের করার কথা লেখা নেই। লেখা আছে ‘লাম্প এভডুমিন’। মেডিকেল ভাষায় যাকে বলা হয় টিউমার কিংবা পেট ফোলা জাতীয় সমস্যার সন্দেহে অপারেশন।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ওই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ইতোমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি। তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, চিকিৎসকের অবহেলা জনিত রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে ৩ চিকিৎসকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।