শামীম আহম্মেদ, মুরাদনগরঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামে বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা বদিউল আলম মুন্সীকে সাজানো ধর্ষণ মামলায় ফঁাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার সর্বস্তরের লোকজন এ ঘটনায় ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তারা সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সাজানো ধর্ষণ মামলার দায় থেকে মাওলানা বদিউল আলম মুন্সীকে অব্যাহতিসহ এ ঘটনায় জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর বয়সী এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ৩১ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে রাজামেহার ফাজিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ও একই গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন মুন্সীর ছেলে মাওলানা বদিউল আলম মুন্সীকে (৫২) পুলিশ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ঐ দিন রাতেই ওই প্রতিবন্ধীর মা ও মৃত জয়নাল আবেদীন মুন্সীর স্ত্রী নাজমা বেগম বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা করে। পরদিন ১ এপ্রিল বুধবার দুপুরে পুলিশ ধৃত অভিযুক্ত মাদরাসা মাওলানা বদিউল আলমকে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কুমিল্লার কেন্দ্রিয় কারাগারে প্রেরণ করেন। গত একমাস ধরে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে ওই মাদরাসা শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে তঁার স্বজণরা সাংবাদিকদের জানিয়েছে।
রাজামেহার গ্রামের মেম্বার জহিরুল ইসলাম মুন্সী বলেন, আমি নিজে তাদের উভয়ের প্রতিবেশী। মেয়েটি এবং অভিযুক্ত সম্পর্কে চাচাতো-জেঠাতো ভাই বোন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলছে। তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত মাওলানা বদিউল আলম মুন্সী আমার দেখা একজন ভালো, সৎ ও চরিত্রবান মানুষ। মামলার বাদী তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি একাধিকবার অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে সালিসের সিদ্ধান্তে বাড়ি ছেড়েছেন। কিছুদিন পূর্বে বাড়িতে এসে ফের জমি সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এ মহিলার পক্ষে মিথ্যা মামলা করা অসম্ভবের কিছু না।
ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজামেহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, মাওলানা বদিউল আলম মুন্সী একজন ধার্মীক লোক। জমি-জমা নিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ চলছে। মামলার বাদী এসব ঘটনায় যুক্ত থাকার কারণে একাধিক সালিসে তাকে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছিল। তার পক্ষে সাজানো সব কিছুই করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, স্বার্থ উদ্ধারে মানুষ এতো নিচে নামতে পারে কল্পনাও করতে পারিনা। প্রশাসনের প্রতি আমার দাবি থাকবে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষাসহ ডিএনএ পরীক্ষায় আসল সত্য বের করে আনা হোক। আর এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ভুক্তভোগী ওই মাদরাসা শিক্ষকের ছেলে তাজুল ইসলাম মুন্সী বলেন, সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে আমার বাবার বিরুদ্ধে এমন নোংরা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এলাকার প্রতিটি মানুষ জানে আমার বাবা কেমন মানুষ। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ সাজানো ঘটনায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার বাদী নাজমা বেগম দাবি করেন, ৩১ মার্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় অভিযুক্ত বদিউল আলম আমার বুদ্ধি প্রতিবন্দী মেয়েকে তার নিজ ঘরে সকলের অগচরে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। আমি তখন রাজামেহার বাজারে ছিলাম। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় বাড়ি এসে দেখি অভিযুক্ত বদিউল আলম ধর্ষণ শেষে আমার ঘর থেকে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। আমি তার শাস্তি চাই।
দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার বলেন, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। ভিক্টিমের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর সঠিক কারণ জানা যাবে। তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, তদন্তের পরই ঘটনার আসল রহস্য জানা যাবে।