দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী আসাদ সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বর্তমানে ঢাকা শেখ হাসিনা হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।
বৃহস্পতিবার বার্ন ইউনিট থেকে সাদিয়া একটি ভিডিওবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে তোলপাড় শুরু হয়।
গত শনিবার সকাল ৮টায় জেলার দেবিদ্বার উপজেলার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় স্বামীর ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর গতকাল বুধবার থানায় অভিযোগ করার পর তাঁকে গ্রেফার করা হয়।
অগ্নিদগ্ধ সাদিয়া উপজেলার পদ্মকোট গ্রামের মো: অপুল সরকারের মেয়ে। তাঁর স্বামী আসাদ সরকার একই উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের নুরু সরকারের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবরে ভুক্তভোগী সাদিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় অভিযুক্ত আসাদের। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু গত ৫/৬মাস ধরে যৌতুকের টাকার জন্য সাদিয়াকে চাপ দিতে থাকেন আসাদ। বাবার বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা না দিলে আগুনে পুড়িয়ে মারবে বলে হুমকিও দেন তিনি। এরপর থেকে যৌতুকের ৫ লাখ টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে সাদিয়ার ওপর নির্যাতন শুরু করেন আসাদ। নির্যাতন সহ্য করেই এত দিন সাদিয়া আসাদের সংসার করছিলেন। চলতি বছরের ৪ ফেবব্রুয়ারি সাদিয়ার একটি ছেলে শিশু জন্ম দেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর শিশুটি মারা যায়। এরপর থেকে সাদিয়াকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দিতে আবারও চাপ প্রয়োগ করেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এদিকে সাদিয়ার বাবা অপুল সরকার প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরে বর্তমানে বেকার জীবন যাপন করছেন। বেকার বাবার কাছে এত টাকা চাইতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন সাদিয়া। এরপর থেকে তাঁর ওপর বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফা নির্যাতন করে স্বামী আসাদ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে সাদিয়ার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী আসাদ। আগুন দেওয়ার পর প্রতিবেশীদের জানানো হয়- ‘গ্যাসের চুলা থেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছে সাদিয়া।’ পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতাল থেকে ভুক্তভোগী সাদিয়ার ছোট বোন নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার বোনকে বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেছে আসাদ ও তার পরিবার। তাঁর শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। কিছু কিছু অংশ পুড়ে হাড়ে গিয়ে লেগেছে। আপুর অবস্থা সংকটাপন্ন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, এ ঘটনায় বুধবার রাতে কয়েকজনের নামে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত স্বামী আসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালদেত মাধ্যমে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।