ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিকল যন্ত্রপাতিতে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা

শাহীন আলম, দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

চিকিৎসক সংকট ও বিকল যন্ত্রপাতিতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ জন। কিন্তু এত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি নেই এ হাসপাতালে, যা আছে তাও অধিকাংশই বিকল ও ব্যবহারে অনুপযোগী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ১৪ জন। এগুলোর মধ্যেও ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীন ছুটি, সাধারণ ছুটিসহ অন্যান্য কারণে অনুপস্থিত থাকেন বেশির ভাগ চিকিৎসক।

জুনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, চর্ম ও যৌন, ইএনটি, চক্ষুসহ ৭টি পদ শূন্য দীর্ঘদিন। এসব রোগীদের চিকিৎসা চলে মেডিক্যাল কর্মকর্তা ও সাকমো দিয়ে। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) চিকিৎসা ও যন্ত্রপাতি জরুরী হলেও এই হাসপাতালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ পদটি শূন্য।

জরুরী রোগীদের চিকিৎসা দিতে ৩টি এ্যাম্বুলেন্সের এখন একটিও নেই। প্রায় এক যুগেরও বেশি দুটি এ্যাম্বুলেন্স বিকল, এর যন্ত্রাংশও আর অবশিষ্ট নেই, বাকি একটির চাকা ঘুরছে না দেড় বছর। প্রাইভেট  এ্যম্বুল্যান্সর

এছাড়াও, আলট্রাসনোর কোন ব্যবস্থাই নেই এ হসপিটালে। নেই ডেন্টাল ইউনিট, হ্যালোজেন লাইটের পরিবর্তে ১০০ ওয়ার্ডের সাধারণ বাল্ব দিয়ে রোগী দেখেন ডেন্টাল চিকিৎসক। নেই যন্ত্রপাতি জীবানু মুক্তকরণ অটোক্লেভ মেশিন, যার অভাবে হেপাটাইটিস-বি সহ হতে পারে মরণব্যাধি এইডসও।

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এনালগ সিস্টেমের এক্স-রে মেশিনটি বালুর স্তুপে একাকার। অন্যান্য যন্ত্রপাতি গুলোও দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মরিচা পড়ে বিকল। অপারেশন থিয়েটার কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকে মাসের ৩০ দিনই।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বহি:বিভাগে রোগীদের ভিড়। দুই একটি চেম্বারে চিকিৎসক থাকলেও অধিকাংশ চেম্বারই ফাঁকা। খবর নিয়ে জানা গেছে, ছুটি, ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীনসহ নানা ছুটিতে বেশির ভাগ চিকিৎসক।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন। দুই শিফটে দুইজন সুইপার দিয়ে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ।  জরুরী বিভাগের পাশে ময়লা আবর্জনা পড়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এতে মশা-মাছির উপদ্রবসহ বাড়ছে বিভিন্ন রোগ বালাই।
আরও অভিযোগ রয়েছে,  রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার দালালচক্রের সাথে কিছু অসাধু চিকিৎসকের হাত রয়েছে যাদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে দূর থেকে আসা রোগীরা। প্রেসক্রিপসন নিয়ে বের হওয়া মাত্রই রোগী ও তার স্বজনকে ফুসলিয়ে প্রাইভেট কোন ক্লিনিকে নিয়ে যেতে তৎপর থাকে দালালরা। কোন কোন সময় পুলিশ অভিযান চালালেও দমন করা যাচ্ছে না দালালদের উৎপাত।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ রোগীদের।

কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে এসে সেবা না পেয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতাল থেকে  অধিকাংশ সরকারি ওষুধই রোগীদের ভাগ্যে জোটে না।

অন্যদিকে, একটু বৃষ্টি হলেই বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের জরুরীসহ ৫টি বিভাগ। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে প্রয়োজনীয় ঔষধের স্টোরসহ কয়েকটি কক্ষ তলিয়ে যায় পানিতে।

এদিকে, বিদ্যুৎ চলে গেলে দুর্ভোগে পড়তে হয় চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনদের। একটি জেনেরেটর থাকলে তা নষ্ট দেড় বছর ধরে ফলে গুরুত্ব চিকিৎসা অন্ধকারে বসেই দিতে হয় চিকিৎসকের।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ’র গভীর নলকূপটির ওয়ারিং পাইপ নষ্ট হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভর্তি হওয়া রোগীদের। এতে বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়ে বাহির থেকে কিনে পানি খেতে হয় রোগী ও স্বজনদের।

হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির বলেন, আমি ট্রেনিং এ আছি, এ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি বিকলসহ ডাক্তার সংকটও রয়েছে। এছাড়া ওষুধের সংকট ও অস্ত্রোপচার কক্ষসহ নানাবিধ সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিকল যন্ত্রপাতিতে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা

আপডেট সময় ০৩:১৪:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৭
শাহীন আলম, দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

চিকিৎসক সংকট ও বিকল যন্ত্রপাতিতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ জন। কিন্তু এত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি নেই এ হাসপাতালে, যা আছে তাও অধিকাংশই বিকল ও ব্যবহারে অনুপযোগী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ১৪ জন। এগুলোর মধ্যেও ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীন ছুটি, সাধারণ ছুটিসহ অন্যান্য কারণে অনুপস্থিত থাকেন বেশির ভাগ চিকিৎসক।

জুনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, চর্ম ও যৌন, ইএনটি, চক্ষুসহ ৭টি পদ শূন্য দীর্ঘদিন। এসব রোগীদের চিকিৎসা চলে মেডিক্যাল কর্মকর্তা ও সাকমো দিয়ে। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) চিকিৎসা ও যন্ত্রপাতি জরুরী হলেও এই হাসপাতালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ পদটি শূন্য।

জরুরী রোগীদের চিকিৎসা দিতে ৩টি এ্যাম্বুলেন্সের এখন একটিও নেই। প্রায় এক যুগেরও বেশি দুটি এ্যাম্বুলেন্স বিকল, এর যন্ত্রাংশও আর অবশিষ্ট নেই, বাকি একটির চাকা ঘুরছে না দেড় বছর। প্রাইভেট  এ্যম্বুল্যান্সর

এছাড়াও, আলট্রাসনোর কোন ব্যবস্থাই নেই এ হসপিটালে। নেই ডেন্টাল ইউনিট, হ্যালোজেন লাইটের পরিবর্তে ১০০ ওয়ার্ডের সাধারণ বাল্ব দিয়ে রোগী দেখেন ডেন্টাল চিকিৎসক। নেই যন্ত্রপাতি জীবানু মুক্তকরণ অটোক্লেভ মেশিন, যার অভাবে হেপাটাইটিস-বি সহ হতে পারে মরণব্যাধি এইডসও।

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এনালগ সিস্টেমের এক্স-রে মেশিনটি বালুর স্তুপে একাকার। অন্যান্য যন্ত্রপাতি গুলোও দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মরিচা পড়ে বিকল। অপারেশন থিয়েটার কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকে মাসের ৩০ দিনই।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বহি:বিভাগে রোগীদের ভিড়। দুই একটি চেম্বারে চিকিৎসক থাকলেও অধিকাংশ চেম্বারই ফাঁকা। খবর নিয়ে জানা গেছে, ছুটি, ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীনসহ নানা ছুটিতে বেশির ভাগ চিকিৎসক।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন। দুই শিফটে দুইজন সুইপার দিয়ে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ।  জরুরী বিভাগের পাশে ময়লা আবর্জনা পড়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এতে মশা-মাছির উপদ্রবসহ বাড়ছে বিভিন্ন রোগ বালাই।
আরও অভিযোগ রয়েছে,  রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার দালালচক্রের সাথে কিছু অসাধু চিকিৎসকের হাত রয়েছে যাদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে দূর থেকে আসা রোগীরা। প্রেসক্রিপসন নিয়ে বের হওয়া মাত্রই রোগী ও তার স্বজনকে ফুসলিয়ে প্রাইভেট কোন ক্লিনিকে নিয়ে যেতে তৎপর থাকে দালালরা। কোন কোন সময় পুলিশ অভিযান চালালেও দমন করা যাচ্ছে না দালালদের উৎপাত।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ রোগীদের।

কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে এসে সেবা না পেয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতাল থেকে  অধিকাংশ সরকারি ওষুধই রোগীদের ভাগ্যে জোটে না।

অন্যদিকে, একটু বৃষ্টি হলেই বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের জরুরীসহ ৫টি বিভাগ। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে প্রয়োজনীয় ঔষধের স্টোরসহ কয়েকটি কক্ষ তলিয়ে যায় পানিতে।

এদিকে, বিদ্যুৎ চলে গেলে দুর্ভোগে পড়তে হয় চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনদের। একটি জেনেরেটর থাকলে তা নষ্ট দেড় বছর ধরে ফলে গুরুত্ব চিকিৎসা অন্ধকারে বসেই দিতে হয় চিকিৎসকের।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ’র গভীর নলকূপটির ওয়ারিং পাইপ নষ্ট হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভর্তি হওয়া রোগীদের। এতে বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়ে বাহির থেকে কিনে পানি খেতে হয় রোগী ও স্বজনদের।

হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির বলেন, আমি ট্রেনিং এ আছি, এ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি বিকলসহ ডাক্তার সংকটও রয়েছে। এছাড়া ওষুধের সংকট ও অস্ত্রোপচার কক্ষসহ নানাবিধ সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।