ঢাকা ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালিতে যেভাবে হামলার মুখে পড়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা, জাতিসংঘ মহাসচিবের শোক

অন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পশ্চিম আফ্রিকার সংঘাতময় দেশ মালি। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালির ইতিহাস অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। দীর্ঘ সামরিক শাসন এবং গোষ্ঠিগত সংঘাতে বিপর্যস্ত এ দেশটিতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সেনারা কাজ শুরু করে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে।
২০১২ সাল থেকে দেশটিতে সংঘাতের জোরালো হয়। দেশটিতে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি হলেও সেটি টেকসই হয়নি। এরপর মালি সরকারের অনুরোধে ২০১২ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিক শান্তিরক্ষী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপরেও সংঘাত থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সময় শান্তিরক্ষীরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
সে রকম একটি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের উপর।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বলছে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় গতকাল ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত তিন বাংলাদেশী সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো চারজন।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আফ্রিকার মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় শনিবার বাংলাদেশী সেনা সদস্যদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীদের সফলভাবেই প্রতিহত করেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে আরো শক্তিশালী একদল সন্ত্রাসী আবারো তাদের আক্রমণ করে বসে। এবারো তাদের সাহসিকতা ও সফলতার সঙ্গে প্রতিহত করেন বাংলাদেশী সেনা সদস্যরা। তবে সংঘর্ষের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা আইইডির বিস্ফোরণ ঘটলে তিন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিহত ও চারজন আহত হন।
নিহতরা হলেন, দিনাজপুরের বাসিন্দা সার্জেন্ট আলতাফ (ইএমই), নেত্রকোনার ল্যান্স করপোরাল জাকিরুল (আর্টিলারি) ও বরিশালের বাসিন্দা সৈনিক মনোয়ার (ইস্ট বেঙ্গল)। আহতরা হলেন, ঢাকার বাসিন্দা মেজর জাদিদ (পদাতিক), নোয়াখালীর করপোরাল মহিম (পদাতিক), নওগাঁর সৈনিক সবুজ (পদাতিক) ও যশোরের বাসিন্দা সৈনিক সরোয়ার (পদাতিক)। আহতদের গাঁও শহরে উন্নত চিকিত্সার জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশী অন্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মালিতে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা প্রায় ১৭০০ যার মধ্যে সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৩০০। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবার পর থেকে ১৩৫ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০জন পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং বাকি সবাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। বিবিসি বাংলা।
এদিকে আফ্রিকার দেশ মালিতে বাংলাদেশী তিন শান্তিরক্ষী নিহত হওয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁ। বাংলাদেশ সরকার ও শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে মহাসচিব বলেছেন, তিনি আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই শোক কাটিয়ে উঠবেন।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ নিউজ সেন্টার জানিয়েছে, এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মহাসচিব। মালিতে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অঙ্গীকারের কথা তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি মালি সরকার ও সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

মালিতে যেভাবে হামলার মুখে পড়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা, জাতিসংঘ মহাসচিবের শোক

আপডেট সময় ১১:২৩:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
অন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পশ্চিম আফ্রিকার সংঘাতময় দেশ মালি। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালির ইতিহাস অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। দীর্ঘ সামরিক শাসন এবং গোষ্ঠিগত সংঘাতে বিপর্যস্ত এ দেশটিতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সেনারা কাজ শুরু করে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে।
২০১২ সাল থেকে দেশটিতে সংঘাতের জোরালো হয়। দেশটিতে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি হলেও সেটি টেকসই হয়নি। এরপর মালি সরকারের অনুরোধে ২০১২ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিক শান্তিরক্ষী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপরেও সংঘাত থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সময় শান্তিরক্ষীরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
সে রকম একটি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের উপর।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বলছে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় গতকাল ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত তিন বাংলাদেশী সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো চারজন।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আফ্রিকার মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় শনিবার বাংলাদেশী সেনা সদস্যদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীদের সফলভাবেই প্রতিহত করেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে আরো শক্তিশালী একদল সন্ত্রাসী আবারো তাদের আক্রমণ করে বসে। এবারো তাদের সাহসিকতা ও সফলতার সঙ্গে প্রতিহত করেন বাংলাদেশী সেনা সদস্যরা। তবে সংঘর্ষের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা আইইডির বিস্ফোরণ ঘটলে তিন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিহত ও চারজন আহত হন।
নিহতরা হলেন, দিনাজপুরের বাসিন্দা সার্জেন্ট আলতাফ (ইএমই), নেত্রকোনার ল্যান্স করপোরাল জাকিরুল (আর্টিলারি) ও বরিশালের বাসিন্দা সৈনিক মনোয়ার (ইস্ট বেঙ্গল)। আহতরা হলেন, ঢাকার বাসিন্দা মেজর জাদিদ (পদাতিক), নোয়াখালীর করপোরাল মহিম (পদাতিক), নওগাঁর সৈনিক সবুজ (পদাতিক) ও যশোরের বাসিন্দা সৈনিক সরোয়ার (পদাতিক)। আহতদের গাঁও শহরে উন্নত চিকিত্সার জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশী অন্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মালিতে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা প্রায় ১৭০০ যার মধ্যে সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৩০০। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবার পর থেকে ১৩৫ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০জন পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং বাকি সবাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। বিবিসি বাংলা।
এদিকে আফ্রিকার দেশ মালিতে বাংলাদেশী তিন শান্তিরক্ষী নিহত হওয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁ। বাংলাদেশ সরকার ও শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে মহাসচিব বলেছেন, তিনি আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই শোক কাটিয়ে উঠবেন।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ নিউজ সেন্টার জানিয়েছে, এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মহাসচিব। মালিতে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অঙ্গীকারের কথা তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি মালি সরকার ও সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।