বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সংক্রমণের সংখ্যা হিসেবে উৎসস্থল চীনকে ছাড়িয়ে এশিয়ার ৪৯ দেশের মধ্যে ৬ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ১৪১জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৮৭ হাজার ৫২০ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৩২ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৯০৩ জন।
রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৬৯০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৫০৫টি। এতে ৩ হাজার ১৪১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে গত ১২ জুন একদিনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৪৭১ জনের দেহে করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল। গত ১১ জুন একদিনে তিন হাজার ১৮৭ জন ও তার আগের দিন (১০ জুন) একদিনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ১৯০ জনের দেহে করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরই এখন বাংলাদেশ।
এ পর্যন্ত ৫ লাখ ১০ হাজার ৪৬৫ জনের করোনা পরীক্ষা করে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৭ হাজার ৫২০ জনে।
নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২ জন। এর আগে গত ১২ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬ জন, গত ৯ জুন ৪৫ মৃত্যু, ৭ ও ৮ জুন টানা দুদিন ৪২ মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তার আগে গত ৩১ মে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১ হাজার ১৭১ জনের। নতুন মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২৭ জন ও নারী ৫ জন।
নাসিমা আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৯০৩ জন। এ নিয়ে মোট ১৮ হাজার ৭৩০ জন সুস্থ হয়েছেন। ব্রিফিংয়ের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, রবিবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২০০ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৩০ জন। অপরদিকে ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৭ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে এই মহামারি শুরু হলেও ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাণ্ডব চালিয়েছে করোনাভাইরাস। এখন এর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে রাশিয়া, ব্রাজিল। আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১ লাখ ৪২ হাজার ২২৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ৫২৭ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ১০৬ জন।
আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ৭৯১ জনের। রাশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ২০ হাজার ১২৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬৮২৯ জনের।
আক্রান্তের দিক দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে চলে এসেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৬২৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৯১৯৯ জনের।
আক্রান্তের দিক দিয়ে পঞ্চম এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্রিটেনে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪১ হাজার ৬৬২ জনের।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে চীনকে টপকে গেছে ভারত। অন্যদিকে সার্কভুক্ত ওপর দেশ পাকিস্তানে সংক্রমণের সংখ্যা এক লাখ ৩৯ হাজার ২৩০ জন। মৃত্যু দুই হাজার ৮২৫ জনের। নেপালে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৩৫জন, মৃত্যু ১৮ জনের। ভুটানে শনাক্ত ৬২ জন। মৃত্যু নেই। শ্রীলংকা শনাক্ত এক হাজার ৮৮৪ জনের, মৃত্যু ১৮ জনের।