বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর ১০৪তম দিনে আরও ৩২৪৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্তের খবর দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন আরও ৪৫ জন।
শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। গতকাল শনাক্তের ১০৩তম দিনে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা লাখ পেরোয়।
এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৩৫ জনে। আর মোট মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৩৮৮ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ হাজার ৩২৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৪৫টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২৪৩ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৩৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৮৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও দুই হাজার ৭৮১ জন। সব মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৪২ হাজার ৯৪৫ জন।
তিনি বলেন, মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে দুই জন, খুলনা বিভাগে দুই জন, সিলেট বিভাগে এক জন, বরিশাল বিভাগে এক জন, ময়মনসিংহের চার জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩১ জন, বাসায় মারা গেছেন ১৪ জন এবং হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এসেছেন একজন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং নারী ১৩ জন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে তিন জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে চার জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে নয় জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চার জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের তিন জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
অধ্যাপক নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৬৮৪ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ১৮ হাজার ৫৫৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১১ হাজার ৪৪৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৩৬ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭ হাজার ১৮১ জন।
এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮টি নমুনা। এতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩৫। এ পর্যন্ত সুস্থ ৪২ হাজার ৯৪৫ জন।
ব্রিফিংয়ে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।