বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ শনাক্ত হয়েছেন। এ সময় নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৯৮ হাজার ৪৯৭ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৪৩ জনের। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১ হাজার ৩০৩ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯২৫ জন।
বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১টি ল্যাবে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৯২২জনের নমুনা সংগ্রহ করা। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয় একদিনে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৫২৭টি। গতকাল (১৬জুন) একদিনে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ২১৪টি নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ৩ হাজার ৮৬২ শনাক্ত হয়েছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আগের সংখ্যা ছাপিয়ে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরই এখন বাংলাদেশ। চীনকে ছাড়িয়েছে এ তিনটি দেশই। এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৪৪ জনের করোনা পরীক্ষা করে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৮ হাজার ৪৯৭ জনে। এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। ৯৯ হাজার ৪৬৭ জনের সংক্রমণ নিয়ে কানাডা আছে ১৭তম নম্বরে।
নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৩ জন। গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১ হাজার ৩০৩ জনের। নতুন মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২৮ জন ও নারী ১৫জন।
নাসিমা আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতাল মিলিয়ে নতুন সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯২৫ জন। এ নিয়ে মোট ৩৮ হাজার ১৮৯ জন সুস্থ হয়েছেন। ব্রিফিংয়ের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত একদিনেই ১ লাখ ৪৪ হাজার ১১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন ৬৯০৭ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৩ হাজার ২১৪ জন। সূত্র অনুযায়ী ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।
ওয়ার্ল্ডোমিটার জানায়, এ পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৫ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৩ লাখ ০৬ হাজার ৪২৬ জন।
চীন উহান শহর থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু। এরপর ইউরোপে তাণ্ডব চালায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। তবে এখন ভাইরাসটির সংক্রমণের কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়া ও আমেরিকা। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ ৮ হাজার ৪০০ জন। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩২ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে নেই কোনো দেশ।
আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত ৯ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৪। দেশটিতে করোনায় মোট ৪৫ হাজার ৪৫৬ জন মারা গেছেন।
করোনা রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২৮৪ জনের।
যুক্তরাজ্যেকে টপকে চার নম্বরে চলে আসা ভারতে করোনা রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
যুক্তরাজ্যজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। দেশটিতে মোট ২ লাখ ৯৮ হাজার ১৩৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। করোনায় মোট মৃত হয়েছে ৪১ হাজার ৯৬৯ জনের।
তবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে চীনকে টপকে গেছে সার্কভুক্ত দেশ ভারত। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৬১ জন। মারা গেছেন ১১ হাজার ৯২১ জন।
অন্যদিকে সার্কভুক্ত ওপর দেশ পাকিস্তানে সংক্রমণের সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬ জনসহ মোট মৃত্যু দুই হাজার ৯৭৫ জনের। নেপালে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৯১ জন, নতুন মৃত্যু না থাকায় আগের সংখ্যা ১৯ জনই রয়েছে। ভুটানে নতুন সংক্রমণ হয়নি। আগের সংখ্যাই ৬৭ জন। শ্রীলংকা শনাক্ত এক হাজার ১৯১৫ জনের, নতুন মৃত্যু না থাকায় আগের সংখ্যা ১১ জনই রয়েছে।