ঢাকা ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধ্বংসের পথে বাঞ্ছারামপুরের রুপসদী খানেপাড়া জমিদার বাড়ি

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রুপসদী গ্রামের শতবর্ষের জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংস হতে বসেছে। ১৯১৫ সালে ভারত থেকে নকশা ও রাজমিস্ত্রি এনে তীর্থবাসী চন্দ্র রায় ৫ একর জমির ওপর এই অট্টালিকা নির্মাণ করেন । এ বাড়িতে ৩টি পুকুর ছিল । বড় বড় মাছ ছিল এসব পুকুরে। এক সময় বিরাট বৈশাখী মেলা বসতো এই জমিদার বাড়িতে । উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোক বৈশাখী উত্সব উদযাপন করার জন্য এই জমিদার বাড়িতে ভিড় জমাতো। প্রতি বছরে হতো কীর্তন নামযজ্ঞসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একটি বড় পুজামণ্ডপ ছিল পূর্বদিকে।
সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতো এ জমিদার বাড়িতে। জানা গেছে, কোনো লোক ছাতি মাথায় বা জুতা পায়ে দিয়ে এ জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে পারতো না। এ কারণেই জমিদার তীথবাসী চন্দ্র রায় রুপসদী গ্রামের সর্বশেষ পূর্ব পার্শ্বে ৫ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন এই অট্টালিকা। এখানে বসে খাজনা আদায় করা হতো। জমিদার তীর্থবাসী চন্দ্র রায় রাজকীয় ভঙ্গিতে ঘোড়া চড়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন । তার ছেলে মহিষ চন্দ্র রায় এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯১৫ সালে সাড়ে চার একর জমির ওপর নির্মাণ করেন রুপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় । একই সালে তার পিতা তীর্থবাসীর স্মৃতি রক্ষায় নির্মাণ করা হয় একটি বিরাট মঠ। জমিদার বাড়িতে এখন আর পূজা হয় না, কীর্তনের আসর বসে না, হয় না বৈশাখী মেলা, নহবতের সুর আর বাতাস মাতিয়ে তোলে না। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে জৌলুশ হারাতে থাকে জমিদার বাড়িটি। কালের পরিবর্তনে জমিদার বাড়িটি এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত । সন্ধ্যার পর আমোদ-ফুর্তি  করার জন্য বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে নির্মাণ করা হয় একটি নাচের ভবন। সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাও ভেঙে গেছে। জমিদার বাড়ির কিছু অংশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে আশে পাশের  লোকজন জানান।

 

জমিদার ভবনের দরজা, জানালা ভেঙে গেছে বহু আগে, ভবনের বিভিন্ন স্থানে আগাছা জন্মে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংস্কারের অভাবে বাড়িটির পলেস্তারা ধসে যাচ্ছে। পূজা মণ্ডপের ছাদ ভেঙে দেয়ালগুলো দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হিসেবে। যারা উত্তরসূরি হিসেবে বেঁচে আছেন তাদের কেউ এখানে থাকেন না । কেউবা শহরে কেউ ভারতে চলে গেছেন । রোজা, ঈদ-পার্বন অথবা হিন্দুদের বার্ষিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শহর থেকে লোকজন এখানে আসলে পুরাতন জমিদার বাড়িটি দেখতে রুপসদী গ্রামে চলে যান, সেখানকার পুরাকীর্তি দেখে মন জুড়ান। এমতাবস্থায় ঐতিহ্য সংরক্ষণে জমিদার বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

ধ্বংসের পথে বাঞ্ছারামপুরের রুপসদী খানেপাড়া জমিদার বাড়ি

আপডেট সময় ০৩:২২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮
বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রুপসদী গ্রামের শতবর্ষের জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংস হতে বসেছে। ১৯১৫ সালে ভারত থেকে নকশা ও রাজমিস্ত্রি এনে তীর্থবাসী চন্দ্র রায় ৫ একর জমির ওপর এই অট্টালিকা নির্মাণ করেন । এ বাড়িতে ৩টি পুকুর ছিল । বড় বড় মাছ ছিল এসব পুকুরে। এক সময় বিরাট বৈশাখী মেলা বসতো এই জমিদার বাড়িতে । উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোক বৈশাখী উত্সব উদযাপন করার জন্য এই জমিদার বাড়িতে ভিড় জমাতো। প্রতি বছরে হতো কীর্তন নামযজ্ঞসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একটি বড় পুজামণ্ডপ ছিল পূর্বদিকে।
সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতো এ জমিদার বাড়িতে। জানা গেছে, কোনো লোক ছাতি মাথায় বা জুতা পায়ে দিয়ে এ জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে পারতো না। এ কারণেই জমিদার তীথবাসী চন্দ্র রায় রুপসদী গ্রামের সর্বশেষ পূর্ব পার্শ্বে ৫ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন এই অট্টালিকা। এখানে বসে খাজনা আদায় করা হতো। জমিদার তীর্থবাসী চন্দ্র রায় রাজকীয় ভঙ্গিতে ঘোড়া চড়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন । তার ছেলে মহিষ চন্দ্র রায় এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯১৫ সালে সাড়ে চার একর জমির ওপর নির্মাণ করেন রুপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় । একই সালে তার পিতা তীর্থবাসীর স্মৃতি রক্ষায় নির্মাণ করা হয় একটি বিরাট মঠ। জমিদার বাড়িতে এখন আর পূজা হয় না, কীর্তনের আসর বসে না, হয় না বৈশাখী মেলা, নহবতের সুর আর বাতাস মাতিয়ে তোলে না। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে জৌলুশ হারাতে থাকে জমিদার বাড়িটি। কালের পরিবর্তনে জমিদার বাড়িটি এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত । সন্ধ্যার পর আমোদ-ফুর্তি  করার জন্য বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে নির্মাণ করা হয় একটি নাচের ভবন। সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাও ভেঙে গেছে। জমিদার বাড়ির কিছু অংশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে আশে পাশের  লোকজন জানান।

 

জমিদার ভবনের দরজা, জানালা ভেঙে গেছে বহু আগে, ভবনের বিভিন্ন স্থানে আগাছা জন্মে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংস্কারের অভাবে বাড়িটির পলেস্তারা ধসে যাচ্ছে। পূজা মণ্ডপের ছাদ ভেঙে দেয়ালগুলো দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হিসেবে। যারা উত্তরসূরি হিসেবে বেঁচে আছেন তাদের কেউ এখানে থাকেন না । কেউবা শহরে কেউ ভারতে চলে গেছেন । রোজা, ঈদ-পার্বন অথবা হিন্দুদের বার্ষিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শহর থেকে লোকজন এখানে আসলে পুরাতন জমিদার বাড়িটি দেখতে রুপসদী গ্রামে চলে যান, সেখানকার পুরাকীর্তি দেখে মন জুড়ান। এমতাবস্থায় ঐতিহ্য সংরক্ষণে জমিদার বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।