স্বাস্থ্য ডেস্কঃ
চিকিৎসকেরা নতুন এক পদ্ধতির মাধ্যমে কেবল নিঃশ্বাস পরীক্ষা করেই ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারবেন। প্রাথমিক অবস্থায় পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যকারিতা এখন পরীক্ষা করে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজের ক্যান্সার গবেষকেরা দেখতে চান, কেবলমাত্র নিঃশ্বাসের অনুসমূহ পরীক্ষা করে কয়েক ধরণের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা যায় কি না।
তবে এই পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পরীক্ষা জেনারেল ফিজিসিয়ানের মত সাধারণ জায়গায় হবার সম্ভাবনা কম।
মানুষের শরীরের কোন কোষে কোন রকম প্রাণ-রসায়নিক পরিবর্তন ঘটলে সেটি নিঃশ্বাসে ভোলাটাইল অরগ্যানিক কমপাউন্ডস নামে এক ধরণের অনু নিঃসৃত হয়। কিন্তু যদি তাতে ক্যান্সার বা অন্য কোন রোগের আভাস থাকে, তাহলে কোষের স্বাভাবিক ধরণে পরিবর্তন আসে এবং ভিন্ন ধরণের অনু তৈরি করে এবং গন্ধের মাধ্যমে ভিন্ন বার্তা পাঠায় মস্তিষ্কে। নিঃশ্বাসের বায়োপসি করার মধ্য দিয়ে নিঃশ্বাস পরীক্ষা করে মুখের গন্ধের এই প্রক্রিয়াটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন গবেষক দল।
নতুন এই পদ্ধতি মাত্র পরীক্ষা করে দেখা শুরু হয়েছে। ফলে এর সফলতা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে হলে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তবে যে পদ্ধতির মাধ্যমে এই পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে নতুন নয়। কয়েক বছর যাবত পৃথিবীর অনেক গবেষকই বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করার জন্য ব্যবহার করছেন। ইতিমধ্যেই নিঃশ্বাস পরীক্ষা করে ক্যান্সারের আগের ধাপ শনাক্তে কিছুটা অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই যেসব মানুষের পাকস্থলীতে ক্যান্সার হবার পর প্রোস্টেট, কিডনী, ব্লাডার, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসে তা ছড়িয়ে পড়েছে, এমন মানুষের একটি অংশ এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। এদের বাইরেও সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষেরা অংশ নিচ্ছেন এই গবেষণায়।
এছাড়া ক্যামব্রিজের অ্যাডেনব্রুক হাসপাতালের ডাক্তারেরা রোগীদের একটি মুখোশের মধ্যে ১০ মিনিট ধরে নিঃশ্বাসের নমুনা দেবার অনুরোধ করেছেন, যাতে সেটা গবেষণার কাজে লাগানো যায়। গবেষকেরা বলছেন, ক্যান্সার যত দ্রুত শনাক্ত করা যায় তত মঙ্গল, তাতে চিকিৎসা শুরু করা যায় তাড়াতাড়ি।
এক অর্থে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় কমবে। কারণ কারো শরীরে যদি ক্যান্সারের আভাস পাওয়া যায়, আর সেটি আগে থেকে শণাক্ত করা যায়, তাহলে খুব দ্রুত তার চিকিৎসা শুরু করা যাবে। এছাড়া একটি মাত্র পরীক্ষা কিংবা খুব সাধারণ পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে, সেটি পরবর্তী ধাপগুলোতে সাশ্রয় সম্ভব হয়। এর আগে গত বছর জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল, একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করে চিকিৎসা দেবার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। ওই পরীক্ষায় ৫০০ ডলারের মতো খরচ হবে। কিন্তু তার তুলনায় এই পরীক্ষাতে খরচ কম হবে কি না তা এখনো জানা যায়নি।
মানুষের যত রকম ক্যান্সার হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীর সে সম্পর্কে কোন না কোন পূর্বসংকেত দেয়। কিছু লক্ষণ দেখে আপনি সন্দেহ করতে পারবেন যে আপনার দেহে হয়তো ক্যান্সার হয়ে থাকতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন সেই সংকেত মূলত সাতটি।
• কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই হঠাৎ শরীরের ওজন কমতে শুরু করেছে।
• হজম ও মল-মূত্র ত্যাগের অভ্যাসে কোন ধরনের পরিবর্তন হওয়া। যেমন ডাইরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য। যেমন আপনার হয়ত কোষ্ঠকাঠিন্য নেই কিন্তু সেটিই হচ্ছে ইদানীং। অথবা পাতলা পায়খানা।
• সারাক্ষণ জ্বর বা খুসখুসে কাশি যা ঠিক যাচ্ছেই না।
• শরীরের কোথাও কোন পিণ্ড বা চাকার উপস্থিতি।
• ভাঙা কণ্ঠস্বর যা কোন চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না।
• তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন।
• শরীরের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
মোটা দাগে এই উপসর্গ বা শরীরের সংকেতের কোন একটি যদি দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে থাকে আর সেগুলোর সাধারণ চিকিৎসায় না কমে যায়- তবেই ক্যান্সার শব্দটি মাথায় রেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।