জাতীয় ডেস্কঃ
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নাম চাইবে সার্চ কমিটি।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হওয়া সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সার্চ কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকে প্রথম মিটিং ছিলো। আগামীকাল থেকে ১৫ কার্যদিবস আছে। এর আগেই ইনশাআল্লাহ এটা করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কাছ থেকে আমরা চাবো, তাদের কোনো চয়েজ আছে কি না, প্রপোজাল আছে কি না, সেটা আজকে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে কেবিনেট ডিভিশনের ইমেইল বা ওয়েবসাইটের দেওয়া হবে। ব্যক্তিগতভাবেও কেউ চাইলে সাবমিট করতে পারবে।
পরবর্তী বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী পরশু দিন (মঙ্গলবার) আমরা আবার মিটিংয়ে বসব। আগামী শনিবার দিন ২টা এবং রোববার দিন ১টা মোট তিনটা মিটিং হবে। সিভিল সোসাইটি ও মিডিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যারা আছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত যারা বিশেষজ্ঞ আছেন—তাদের নিয়ে কমিটি এ তিনটি মিটিংয়ে বসবে এবং তাদের কাছ থেকে সাজেশন্স বা প্রপোজাল থাকলে নেওয়া হবে। তারপরে কমিটি সবার বক্তব্য এবং আইন ও অন্যান্য জিনিস দেখে যেভাবে আইনে যোগ্যতার কথা বলা আছে সেগুলো বিবেচনা এবং আইন অনুযায়ী সিলেকশন করে পাঁচজনের বিপরীতে দুজন করে মোট ১০ জনের নাম দেওয়া হবে।
রোববারের বৈঠকে কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাইম আছে। যদি ১৪ তারিখের বিষয়ে কোনো আবশ্যকতা থাকে তাহেলে সেটা করা হবে। পরশুদিন (মঙ্গলবার) শুধু আমরা নিজেরা বসব। বাকি ৩ মিটিংয়ে সিভিল সোসাইটি ও মিডিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসব।
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবেন কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে বসব না। তারা ইমেলের মাধ্যমে নাম দিতে পারবে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য নাম সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো।
অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এর আগেই নতুন ইসি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইনানুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গেল ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আইনানুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।