জাতীয় ডেস্ক:
ঢাকার পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট চেয়ে গণপূর্তমন্ত্রীর কাছে করা আবেদন সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা। তিনি বলেছেন, নেতাকর্মীদের অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে তিনি প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তাতে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রাণ তৃণমূলের নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের অনুভূতির প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়ে আমি গত ৩ আগস্ট সংসদের দাপ্তরিক ফরম্যাটে করা আমার পূর্বাচলে প্লটের জন্য আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’
সরকার ও সংসদকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেওয়া এবং সরকারের তীব্র সমালোচক রুমিন ফারহানা সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সংরক্ষিত আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হওয়া আলোচিত এই নেত্রী তার আবেদনের চিঠি ফাঁস হওয়ায় নাখোশ হন।
গত ৩ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন রুমিন ফারহানা। মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন, ‘আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাইতেছে যে, ঢাকাস্থ পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ১০ (দশ) কাঠা প্লট-এর প্রয়োজন।…ঢাকা শহরে আমার কোনো জায়গা/ফ্ল্যাট, জমি নাই। ওকালতি ছাড়া আমার আর কোনো ব্যবসা/পেশা নাই। আমার নামে ১০ (দশ) কাঠা প্লট বরাদ্দের জন্য সুব্যবস্থা করে দিতে আপনার মর্জি হয়।…এমতাবস্থায় আপনার নিকট আমার আবেদন, আমার নামে দশ (১০) কাঠা প্লট বরাদ্দ করলে আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’
রুমিন ফারহানার ঢাকায় প্লট এবং বেশ বড় আকারের ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্লটটি বাবার এবং ফ্ল্যাটটি মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন বিএনপি নেত্রী।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন রুমিন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তিনি তার সম্পদের যে হলফনামা জমা দেন, সেখানে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের তথ্য রয়েছে। এটি নিউ এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত।
হলফনামার পঞ্চম পাতার ৪ নম্বর কলামে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে তিনি উল্লেখ করেন, ১৮৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ফ্ল্যাট মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন।
এর মধ্যে রুমিনের আরো বেশি মূল্যের সম্পদের তথ্য রয়েছে। লালমাটিয়া এলাকায় তিন কাঠার একটি প্লট তার বাবা অলি আহাদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে অংশীদারির ভিত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে ডোম-ইনো নামের একটি ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
আবেদন প্রত্যাহারের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি ২৬ আগস্ট আবেদন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দলের নেতাকর্মীরা আমার প্লটের আবেদনে কষ্ট পেয়েছেন, আমি সেদিনই প্রত্যাহার করে নিতাম। কিন্তু আমার নির্বাচনী এলাকায় থাকার কারণে তা পারিনি। গতকাল (সোমবার) ঢাকায় এসে আজই মন্ত্রণালয়ে প্রত্যাহারপত্র পাঠিয়েছি।‘ তিনি জানান, মঙ্গলবার ব্যক্তিগত সহকারীকে দিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রত্যাহারপত্র পাঠান।
কোনো চাপের কারণে প্লট বরাদ্দের আবেদন প্রত্যাহার করেছেন কি না জানতে চাইলে সাংসদ রুমিন বলেন, ‘আমি কোনো চাপে প্রত্যাহারপত্র দেইনি। আমার দলের নেতাকর্মীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তা করেছি।’
রুমিন ফারহানার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাজনৈতিক সচেতন কর্মী হিসেবে আমি একে সাধুবাদ জানাই। অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ করেছেন তিনি।’