অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
উত্তর কোরিয়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে পথে ‘যাচাইযোগ্য ও অপরিবর্তনীয়’ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাদের ওপর থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না, গতকাল রবিবার এমন ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এমন একটি ইস্যু, যেটার সংজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার দ্বন্দ্ব এখনো কাটেনি।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যু নিয়ে বাগিবতণ্ডার জেরে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আগামী ১২ জুনের নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাম্প। এর ২৪ ঘণ্টা মাথায় ট্রাম্প আবার বৈঠকমুখী হলেও উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণরূপে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা নিয়ে অচলাবস্থা এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিস জানান, পরমাণু ইস্যুতে স্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আগ পর্যন্ত পিয়ংইয়ংয়ের ওপর থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে গতকাল ম্যাটিস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আর উত্তর কোরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন আমরা অব্যাহত রাখব। উত্তর কোরিয়া তখনই শুধু অব্যাহতি পাবে, যখন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথে তাদের যাচাইযোগ্য ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে।’ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার রাস্তাটা ‘অমসৃণ’ হওয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রত্যাশা তিনি করেন না, এমন মন্তব্য করে নিরাপত্তা সম্মেলনে উপস্থিত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের পাশে রেখে তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে আমাদের অবশ্যই একটা শক্তিশালী সহযোগিতামূলক প্রতিরক্ষার অবস্থান বজায় রাখতে হবে, যেন এ সংকটের মুহূর্তে আমাদের কূটনীতিকদের শান্ত অবস্থায় থেকে সমঝোতায় পৌঁছাতে আমরা সহায়তা করতে পারি।’
প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে মিত্রদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ম্যাটিস বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো বেশি জোরদার করার অঙ্গীকার রক্ষায় আমরা অবিচল। শান্তি রক্ষার জন্য এটাই সর্বোত্তম পথ।’
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ইস্যু নিয়ে বৈঠকে সম্ভাবনা সৃষ্টির শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘সম্পূর্ণ, যাচাইযোগ্য ও অপরিবর্তনীয়’ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবি করে আসছেন, বিনিময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। উত্তর কোরিয়াও তাতে সায় দিয়ে সম্প্রতি দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তাদের পুঙ্গিয়ে রি পরমাণু পরীক্ষাকেন্দ্র বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের দাবি, পুঙ্গিরিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উত্তর কোরিয়া সবার চোখে ধুলা দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, পুঙ্গি রি পুরোপুরি ধ্বংস তো হয়ইনি, তার ওপর বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে সেখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য জায়গায় আরো পরমাণু পরীক্ষাকেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে উত্তর কোরিয়া। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী ‘সম্পূর্ণ’ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে উত্তর কোরিয়ার সদিচ্ছা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি পূরণের পথে স্পষ্ট পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না বলে গতকাল মন্তব্য করেন ম্যাটিস।