ঢাকা ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীবাসীর বিভীষিকাময় বছর ছিল ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ

অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

পৃথিবীতে প্রায় প্রতি বছরই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অনেক সময় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে হতবিহবল করে দেয়। তবে এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ছাপিয়ে এখন পর্যন্ত পৃথিবীবাসীর জন্য বিভীষিকাময় বছর হয়ে আছে ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ! হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগ বিষয়ক ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল ম্যাকরমিকের মতে, পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ভয়াবহ যতো সময় গেছে তার মধ্যে ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের সময়টা ছিল সবচেয়ে খারাপ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সময়কালে খুবই রহস্যময় এক কুয়াশা সমগ্র ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার কিছু অংশকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছিল। দিন-রাত আলাদা করার কোনো উপায় ছিল না। আর এই অবস্থা ছিল টানা দেড় বছর ধরে। দীর্ঘ ঐ সময় সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারেনি পৃথিবীতে।

বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন মাইকেল ম্যাকরমিক। তিনি লিখেছেন, ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কমতে কমতে নেমে গিয়েছিল দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওই দশকটাই ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঠান্ডার। গ্রীষ্মকালেও তুষারপাত হয়েছিল চীনে। মারাত্মক তুষারপাতের কারণে শস্যহানির ঘটনা ঘটেছিল। ফলে লাখো লাখো মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। আইরিশ ক্রনিকলের রেকর্ডেও এসব তথ্য আছে। সেখানে উল্লেখ আছে, ৫৩৬ থেকে ৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রুটির মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছিল। তারপর ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি প্লেগ আক্রমণ করে মিশরের পেলসিয়াম বন্দরে। তখন প্লেগ এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক জনগোষ্ঠী বিনাশ হয়ে গিয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যেরও পতন তরান্বিত করেছিল।

ইতিহাসবিদরা বহুকাল আগে থেকেই জানতেন যে ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রচণ্ড এক অন্ধকার নেমে এসেছিল পৃথিবীতে। একে বলা হয় অন্ধকার যুগ। কিন্তু কী কারণে এই অন্ধকার নেমে এসেছিল, কেন তৈরি হয়েছিল মেঘের মতো কুয়াশার চাদর সেটা রহস্য হিসেবেই থেকে গেছে। কিন্তু এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিজ্ঞানী মানব ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন তারা সেই রহস্যের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুইস হিমশৈল থেকে কিছু বরফ নিয়ে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন। তারা বলছেন, ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের সময়কার বরফের দুটো অণুবীক্ষণিক কণা পাওয়া গেছে যা আসলে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুত্পাত থেকে সৃষ্ট ছাই।

বলা হচ্ছে, সেসময় আইসল্যান্ড কিংবা উত্তর আমেরিকার আগ্নেয়গিরিতে আকস্মিকভাবে বড় রকমের অগ্ন্যুত্পাতের ঘটনা ঘটেছিল। সেই অগ্নুত্পাতের ছাই ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো উত্তর গোলার্ধে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, সেই ছাই বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র ইউরোপ আর শেষ দিকে এশিয়ায়। এর কারণেই তীব্র ঠান্ডা পড়েছিল ঐ সব অঞ্চলে। যদিও এরপর আরো দুটি বড় অগ্ন্যুত্পাতের ঘটনা ঘটেছিল ৫৪০ এবং ৫৪৭ খ্রিস্টাব্দে।

মধ্যযুগ এবং রোমান সাম্রাজ্য বিষয়ক গবেষক ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইল হারপার লিখেছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং মানব সৃষ্ট দূষণের যে ইতিহাস বরফের গায়ে জমাট বেধে ছিল এতোদিন তা থেকে এখন বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন তথ্য উদঘাটন করতে পারছেন। কী কী কারণে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল সেসব বিষয়ও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। -বিবিসি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাঞ্ছারামপুরের ‘ডন’ খ্যাত এমপির ভাগিনা জনির জামিন।বিএনপির নেতাকর্মী সহ এলাকায় তোলপাড়! 

পৃথিবীবাসীর বিভীষিকাময় বছর ছিল ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ

আপডেট সময় ০৩:৩৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৮
অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

পৃথিবীতে প্রায় প্রতি বছরই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অনেক সময় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে হতবিহবল করে দেয়। তবে এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ছাপিয়ে এখন পর্যন্ত পৃথিবীবাসীর জন্য বিভীষিকাময় বছর হয়ে আছে ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ! হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগ বিষয়ক ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল ম্যাকরমিকের মতে, পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ভয়াবহ যতো সময় গেছে তার মধ্যে ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের সময়টা ছিল সবচেয়ে খারাপ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সময়কালে খুবই রহস্যময় এক কুয়াশা সমগ্র ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার কিছু অংশকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছিল। দিন-রাত আলাদা করার কোনো উপায় ছিল না। আর এই অবস্থা ছিল টানা দেড় বছর ধরে। দীর্ঘ ঐ সময় সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারেনি পৃথিবীতে।

বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন মাইকেল ম্যাকরমিক। তিনি লিখেছেন, ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কমতে কমতে নেমে গিয়েছিল দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওই দশকটাই ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঠান্ডার। গ্রীষ্মকালেও তুষারপাত হয়েছিল চীনে। মারাত্মক তুষারপাতের কারণে শস্যহানির ঘটনা ঘটেছিল। ফলে লাখো লাখো মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। আইরিশ ক্রনিকলের রেকর্ডেও এসব তথ্য আছে। সেখানে উল্লেখ আছে, ৫৩৬ থেকে ৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রুটির মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছিল। তারপর ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি প্লেগ আক্রমণ করে মিশরের পেলসিয়াম বন্দরে। তখন প্লেগ এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক জনগোষ্ঠী বিনাশ হয়ে গিয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যেরও পতন তরান্বিত করেছিল।

ইতিহাসবিদরা বহুকাল আগে থেকেই জানতেন যে ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রচণ্ড এক অন্ধকার নেমে এসেছিল পৃথিবীতে। একে বলা হয় অন্ধকার যুগ। কিন্তু কী কারণে এই অন্ধকার নেমে এসেছিল, কেন তৈরি হয়েছিল মেঘের মতো কুয়াশার চাদর সেটা রহস্য হিসেবেই থেকে গেছে। কিন্তু এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিজ্ঞানী মানব ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন তারা সেই রহস্যের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুইস হিমশৈল থেকে কিছু বরফ নিয়ে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন। তারা বলছেন, ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের সময়কার বরফের দুটো অণুবীক্ষণিক কণা পাওয়া গেছে যা আসলে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুত্পাত থেকে সৃষ্ট ছাই।

বলা হচ্ছে, সেসময় আইসল্যান্ড কিংবা উত্তর আমেরিকার আগ্নেয়গিরিতে আকস্মিকভাবে বড় রকমের অগ্ন্যুত্পাতের ঘটনা ঘটেছিল। সেই অগ্নুত্পাতের ছাই ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো উত্তর গোলার্ধে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, সেই ছাই বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র ইউরোপ আর শেষ দিকে এশিয়ায়। এর কারণেই তীব্র ঠান্ডা পড়েছিল ঐ সব অঞ্চলে। যদিও এরপর আরো দুটি বড় অগ্ন্যুত্পাতের ঘটনা ঘটেছিল ৫৪০ এবং ৫৪৭ খ্রিস্টাব্দে।

মধ্যযুগ এবং রোমান সাম্রাজ্য বিষয়ক গবেষক ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইল হারপার লিখেছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং মানব সৃষ্ট দূষণের যে ইতিহাস বরফের গায়ে জমাট বেধে ছিল এতোদিন তা থেকে এখন বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন তথ্য উদঘাটন করতে পারছেন। কী কী কারণে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল সেসব বিষয়ও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। -বিবিসি