মো. নাজিম উদ্দিনঃ
শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তৎকালিন কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগাত্মক এ হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো এদেশের কিছু বীর জনতা। সারা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার অনেক যুবক বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার টানে স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন ফেলে সাহস করে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো। পরবর্তীতে দেশের নানা পট-পরিবর্তনে সেইসব প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিপ্লব সফল না হলেও তাদের অনেকেই নানা নির্যাতনের শিকার হন।
সেই নির্যাতিতদের একজন হলেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পীরকাশিমপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ পরিবারের কৃতি সন্তান, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের কার্যকরি পরিষদের সদস্য ও মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম খসরু। তিনি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ অনুসারী ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক ও ব্যবসায়ী মরহুম সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস (মোগল সাহেব) এর ছোট ছেলে।
শোকের মাস আগস্ট নিয়ে মিডিয়ার সাথে একান্তে আলাপচারিতায় তিনি বর্ণনা করেন সেই ১৯৭৫সালের ১৫ই আগস্টের পরবর্তী সেই স্মৃতিগুলো। তিনি বলেন, স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ ও এক সহোদর আত্মীয়-পরিজনসহ নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একাত্তরে গণহত্যা করল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে গণহত্যা চালাল পাক হানাদারদেরই এদেশীয় দোসর সমর্থক কিছু বিশ্বাসঘাতক। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় আস্থাহীন দেশীয় কিছু রাজনীতিকের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু নৃশংসভাবে স্বপরিবারে শহীদ হন সেই কালরাতে। প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আমরা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। আমরা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা মেঘালয়ে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রায় দশ হাজার যোদ্ধা অংশগ্রহন করি। প্রায় দুইবছর সেনা বাহিনী ও বিডিআরের সাথে আমরা প্রতিরোধ যুদ্ধ করি। এই প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রায় আড়াইশত সহযোদ্ধা শহীদ হয়। তার পর ১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের সরকার পরিবর্তন হলে সেখানকার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’রা আমাদেরকে বিডিআরের কাছে পুশব্যাক করে। এরপর তৎকালীন সরকার আমাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এক বছর কারাবাসের পর ছাড়া পেয়েও স্বাভাবিক কোন কাজ কর্ম করতে পারিনি। ৪৮ঘন্টা পরপর বিভিন্ন থানায় হাজিরা দিতে হতো, বিভিন্ন গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে পাঠাতো, এসব নজরদারি ও অপতৎপরতার কারণে বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করে জার্মানিতে পাড়ি জমাই। সেখানে কর্মজীবনের পাশাপাশি জার্মান আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে অনিল দাস গুপ্তের সাথে সমন্বয় করে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নিজ অর্থায়নে সক্রিয় ভাবে নির্বাচন পরিচালনায় অংশগ্রহন করি। ১৯৯৮ স্থায়ী ভাবে দেশে ফিরে নিজ সংসদীয় আসন কুমিল্লা-০৩ মুরাদনগরে স্থানীয় আ’লীগের রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক নানান উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যস্ত রেখে, ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীর সর্বসম্মতিক্রমে আ’লীগের প্রার্থী মনোনীত হয়ে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে, সাধারণ মানুষের পাশেই আছি। আগামী দিনগুলোতে মুরাদনগর বাসী ও আ’লীগের সাথে থেকেই শেষ নিশ^াস ত্যাগ করতে চাই।
তিনি আরো জানান গ্রামের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার পীর কাশিমপুর হলেও লেখা পড়ায় মনোনিবেশ করি ঢাকা শহরে। বিএএফ শাহীনে হাইস্কুল জীবন পার করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েই তৎসময়ের ঢাকা নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ নুরু ভাইয়ের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে গঠিত প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই।