ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘প্রত্যেক রাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছি’

অন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ব্রিটেনের নাগরিক রুবি মেরি। দেশটির সাউথ ওয়েলসে তার জন্ম। তবে তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এই নারীর অভিযোগ, তাকে বাংলাদেশে এনে কিশোর বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার উপর চলে নির্যাতন।

রুবি মেরিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে একদিন ছুটি কাটানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে এলেন তার বাবা-মা। সে সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর।

রুবি মেরি বলেন, মাত্র ছয় সপ্তাহ বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়ে গেলো দুইমাস। এরপরে তিনমাস, তারপরে ছয়মাস। আমরা সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম। কিন্তু বাবা নানা অজুহাতে ব্রিটেন যেতে দেরি করছিলেন। আসলে তার পরিকল্পনা ছিল তিনি আমাকে বিয়ে দেবেন।

এই নারীর ভাষ্য, তখন তিনি বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন না। কারণ সে সময় মাত্র তার বয়স ১৫ বছর। কিন্তু তার বাবা তাকে জোর করে বিয়ে দেন। তার থেকে দ্বিগুণ বয়সের একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

রুবি মেরি বলছেন, এটা কঠিন, কারণ সবাই তার পরিবারকে ভালোবাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেকোনো নির্যাতন আসলে নির্যাতনই। জোরপূর্বক বিয়ের পর সেই পরিস্থিতি নিয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের শিকার হতেন তিনি, যাতে তার নতুন স্বামী দ্রুত একটি বাচ্চার বাবা হতে পারেন এবং যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান।

তিনি আরো বলেন, বিয়ের পর একজন ক্রীতদাসীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছিল আমার সঙ্গে। আমি ছিলাম একটা অপরিচিত দেশে, সেখানে কার কাছে যেতে হবে, তা জানতাম না। আমাকে পুতুলের মত সাজানো হলো। সে সময় বসে বসে আমি ভাবছিলাম, আমি কি একটি বস্তু? তখন যেন যা করতে বলা হচ্ছে, তাই করছি। আমার মাথায় তখন শুধু ছিল ব্রিটেনে ফিরে আসার চিন্তা।

‘প্রত্যেক রাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছি’

রুবি মেরি বিবিসিকে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন। ছবি: বিবিসি

বিয়ের পরেই তার নতুন স্বামী সন্তানের জন্য অস্থির হয়ে উঠেন বলে জানান রুবি মেরি। তিনি বলেন, কম বা বেশি, প্রায় প্রত্যেক রাতেই আমাকে ধর্ষণ করা শুরু হলো। যাতে আমি তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হতে পারি, যাতে তার (স্বামী) ব্রিটেনে যাওয়ার একটি পথ তৈরি হয়। এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা।

এরপর রুবি মেরি গর্ভবতী হন। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য ওয়েলসে ফিরে যান তিনি। শিশুটি জন্মের পরেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তার পরিবার তাকে অস্বীকার করে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি ব্রিটেনে অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই আইনে বাবা-মা কারাগারে যেতে পারেন। এরপর থেকে এ ধরণের মাত্র একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্য জুড়ে।

রুবি মেরিকে কার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং বাংলাদেশের কোন জেলায় এ ঘটনা ঘটে তা বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়নি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাঞ্ছারামপুরের ‘ডন’ খ্যাত এমপির ভাগিনা জনির জামিন।বিএনপির নেতাকর্মী সহ এলাকায় তোলপাড়! 

‘প্রত্যেক রাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছি’

আপডেট সময় ০২:০২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮
অন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ব্রিটেনের নাগরিক রুবি মেরি। দেশটির সাউথ ওয়েলসে তার জন্ম। তবে তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এই নারীর অভিযোগ, তাকে বাংলাদেশে এনে কিশোর বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার উপর চলে নির্যাতন।

রুবি মেরিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে একদিন ছুটি কাটানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে এলেন তার বাবা-মা। সে সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর।

রুবি মেরি বলেন, মাত্র ছয় সপ্তাহ বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়ে গেলো দুইমাস। এরপরে তিনমাস, তারপরে ছয়মাস। আমরা সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম। কিন্তু বাবা নানা অজুহাতে ব্রিটেন যেতে দেরি করছিলেন। আসলে তার পরিকল্পনা ছিল তিনি আমাকে বিয়ে দেবেন।

এই নারীর ভাষ্য, তখন তিনি বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন না। কারণ সে সময় মাত্র তার বয়স ১৫ বছর। কিন্তু তার বাবা তাকে জোর করে বিয়ে দেন। তার থেকে দ্বিগুণ বয়সের একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

রুবি মেরি বলছেন, এটা কঠিন, কারণ সবাই তার পরিবারকে ভালোবাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেকোনো নির্যাতন আসলে নির্যাতনই। জোরপূর্বক বিয়ের পর সেই পরিস্থিতি নিয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের শিকার হতেন তিনি, যাতে তার নতুন স্বামী দ্রুত একটি বাচ্চার বাবা হতে পারেন এবং যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান।

তিনি আরো বলেন, বিয়ের পর একজন ক্রীতদাসীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছিল আমার সঙ্গে। আমি ছিলাম একটা অপরিচিত দেশে, সেখানে কার কাছে যেতে হবে, তা জানতাম না। আমাকে পুতুলের মত সাজানো হলো। সে সময় বসে বসে আমি ভাবছিলাম, আমি কি একটি বস্তু? তখন যেন যা করতে বলা হচ্ছে, তাই করছি। আমার মাথায় তখন শুধু ছিল ব্রিটেনে ফিরে আসার চিন্তা।

‘প্রত্যেক রাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছি’

রুবি মেরি বিবিসিকে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন। ছবি: বিবিসি

বিয়ের পরেই তার নতুন স্বামী সন্তানের জন্য অস্থির হয়ে উঠেন বলে জানান রুবি মেরি। তিনি বলেন, কম বা বেশি, প্রায় প্রত্যেক রাতেই আমাকে ধর্ষণ করা শুরু হলো। যাতে আমি তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হতে পারি, যাতে তার (স্বামী) ব্রিটেনে যাওয়ার একটি পথ তৈরি হয়। এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা।

এরপর রুবি মেরি গর্ভবতী হন। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য ওয়েলসে ফিরে যান তিনি। শিশুটি জন্মের পরেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তার পরিবার তাকে অস্বীকার করে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি ব্রিটেনে অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই আইনে বাবা-মা কারাগারে যেতে পারেন। এরপর থেকে এ ধরণের মাত্র একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্য জুড়ে।

রুবি মেরিকে কার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং বাংলাদেশের কোন জেলায় এ ঘটনা ঘটে তা বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়নি।