ধর্ম ও জীবন ডেস্ক:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, নির্বাচন পর্যন্ত আগামী এক মাস ইজতেমার সব ধরনের প্রস্তুতি বন্ধ থাকবে। এ সময় টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
শনিবার বিকাল পৌনে ৫টায় সচিবালয়ে শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এতে দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তাবলিগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম এবং তাদের বিরোধী কওমীপন্থী শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়েরের পক্ষ থেকে তাবলিগের উপদেষ্টা মাওলানা আশরাফ আলী ও আবদুল কুদ্দুসসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৫ নভেম্বর দু’পক্ষের বিবাদের কারণে পূর্বঘোষিত আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যেই শনিবার টঙ্গীতে পাঁচদিনের জোড় ইজতেমা নিয়ে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আজ (শনিবার) টঙ্গীর মাঠ নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর আগে আমরা সভা করেছিলাম, সেই সভায় কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যারা যারা সেই সভায় ছিলেন তাদের বেশিরভাগ সদস্যই আজকের সভায় ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী ৩০ তারিখে (ডিসেম্বর) জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে জন্য আমরা আগেও বলেছিলাম নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের ইজতেমা হবে না। আমরা সেটাকেই আবার রিপিট করেছি। ইলেকশন পর্যন্ত ইজতেমার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সভা কিংবা জোড় ইজতেমা কিংবা ইজতেমার জন্য সব ধরণের কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে। এটা সারা দেশব্যাপী।
তিনি বলেন, ইলেকশনের পর ইজতেমার তারিখের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা আবারও রিপিট করেছি, ইজতেমা কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না, ইজতেমার তারিখ শুধু শিফট হচ্ছে, ইলেকশনের পর যেকোনো সময় এটা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রশাসন সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখবে, আমরা সেখানে কাউকে অ্যালাউ করব না। ইজতেমা ময়দানের ভেতরে মসজিদ-মাদ্রাসাও প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে। ইজতেমা মাঠে কোনো পক্ষই থাকতে পারবে না- এ এক মাস’ বলেন আসাদুজ্জামান খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজকে (শনিবার) যে ঘটনা ঘটেছে তারা সবাই নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা হবে। ফৌজদারি মামলায় যেভাবে তদন্ত হয় সেভাবেই তদন্ত হবে। তদন্তে চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিদের আইনানুযায়ী বিচার হবে।
বিভিন্ন কারণে অন্যান্য দেশ চাচ্ছে ইজতেমা বাংলাদেশ থেকে চলে যাক। এ বিবাদ সেটার কোনো অংশ কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না না, এটা কোনো অংশ হতে পারে না। আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, তাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে। আমরা চেষ্টা করছি, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই ভুল বোঝাবুঝি যাতে দূর হয় বা কমে যায়। সেটা তারা করবেন, তারাই একটা উপায় বের করে নেবেন। ইজতেমা অন্য জায়গায় চলে যাবে নাকি এই জায়গায় থাকবে সেই সিদ্ধান্ত যারা ইজতেমায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই নেবেন। আমরা চেষ্টা করব, যাতে সুন্দরভাবে ইজতেমাটি হয়।’
বৈঠকে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত ছিলেন।