জাতীয় ডেস্কঃ
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আলোকিত বাংলাদেশ আজ। সেখানে আমরা কেন ছাড় দেব? সংবিধানে আমাদের হাত-পা বাঁধা। সেখানে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কাকে ছাড় দেব? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের? ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের ওই খুনিদের যারা আশ্রয়-প্রশয় দিয়েছিল সেই বিএনপি-জামায়াতকে? না, তাদের ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সংলাপ তো দূরে থাকুক, তাদের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই- যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশয় দিয়েছে, বাংলার মাটিতে ওদের সরকার আর কখনও হবে না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত্ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপি’র উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-তে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ শিরোনামে আয়োজিত ‘স্মৃতি তর্পণ সভা’য় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ১৪ দল সমন্বয়ক বলেন, খেলার মাঠে আসুন। আপনাদের নিয়েই খেলতে চাই। সেখানে রেফারি থাকবে নির্বাচন কমিশন। দেখি কে হারে, কে জিতে। কিন্তু ফাউল করবেন না। এবার ফাউল করলে বাংলার মাটিতে আপনাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ১৪ দল একত্রে আছে, আগামীতেও ইন্শাল্লাহ আমরা একত্রে নির্বাচন করবো। খোদা চাইলে একত্রে সরকারও গঠন করতে পারি। কারণ সুখে-দুঃখে আমরা একত্রে আছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রয়োজনে এই জোট সম্প্রসারণ করা হবে।
নাসিম বলেন, ইনডেমনিটি কালো আইন, এটা বাতিল করা হলো- সেদিন এরকম কথা বলার মতো বিচারক পাইনি। এখন প্রতিদিন রুল দেখি। সব বিষয়ে আদালত রুল দিচ্ছেন, আদেশ দিচ্ছেন। একজন উকিল দাঁড়িয়ে যান, আর বিচারকরা রুল ইস্যু করেন। এমনকি অনেক সময় বদলিও তারা আটকে দেন।
জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়: আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
আলোচনা সভায় সভাপতিত্বকারী, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যেই পথে রুদ্ধ করা হয়, সেই বাধা অপসারণে জেপি’র ক্ষুদ্র ভূমিকা হলেও ছিল। ’৯৬ সালেও আমরা ঈমানের পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তখন আমরা (জাতীয় পার্টি) একত্রেই ছিলাম। দূর থেকে শুনতাম-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে জেলে দরকষাকষি চলছে। এরজন্য জেলের গেটও নাকি খুলে দেয়া হয়েছিল। আমরাও তখন জেলে ছিলাম, আমাদেরকে আজকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এনে রাখা হয়েছিল, বলা হয়েছিল-প্রয়োজনে আমাদের নাকি ব্যবহার করা হতে পারে। ’৯৮ সালে আরেকটা বিপদের মুখে পড়ি। বলা হলো, জাতীয় পার্টি সংসদ বয়কট করবে। আমি দলীয় প্রধানকে বললাম- সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া আছে। সেটি তো বাতিল করা হয়নি। বাতিল করতে হলে হয় দলের প্রেসিডিয়ামে, অথবা সংসদীয় দলের সভা ডেকে করতে হবে। শেষ পর্যন্ত দলের একটি অংশ সেদিন বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে মিলে সংসদ থেকে বেরিয়ে যায়। আর আজকের জেপি’র সঙ্গে তখন ১৮ জন সংসদ সদস্য ছিলেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আওয়ামী লীগকে জন্মের পর থেকেই বিব্রত করার জন্য বারবার চেষ্টা হয়েছে। এখনও বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়। মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ ভুঁইফোড় দল নয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছে জাতি ঋণী। এই জাতির জন্য তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। তার সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনরা জীবন দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় চার নেতাকেও জীবন দিতে হয়েছে। মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন চার নেতা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরও শক্ত ও মজবুত হোক। বাঙালি জাতির যেই ব্যক্তিগত অর্জন সেটিকে কেউ খাটো করে দেখতে পারবে না। আজকের ঢাকায় যত বড় বড় ভবন, ’৭২ সালে এগুলোর একটিও ছিল না।
মহামানবের সকল গুনাবলী বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল: শাজাহান খান
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি ছিলেন মহামানব, কারণ মহামানবের সমস্ত গুণাবলী তার মধ্যে ছিল। মহামানবের দর্শন থাকে, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া। মহামানবের আদর্শ থাকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার।
‘আগস্টের বিষাদ সিন্ধু’ স্বরচিত শোকসংগীত গাইলেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে নিয়ে স্বরচিত দুটি কবিতা ‘জন্মেছ তাই দেশের জন্ম’ এবং ‘আত্মপরিচয়’ পাঠ করেন। এছাড়া তিনি নিজের রচিত শোকসংগীত ‘আগস্টের বিষাদ সিন্ধু’ সুর দিয়ে গেয়ে শোনান। এসময় পুরো অনুষ্ঠানস্থলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
টুঙ্গিপাড়া থেকে বঙ্গবন্ধু আজও আমাদের পথ দেখান: শেখ শহীদ
জাতীয় পার্টি-জেপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, জাতিকে সত্ ও সঠিক পথে পরিচালনার প্রতীক হলেন বঙ্গবন্ধু। টুঙ্গিপাড়ায় পিতা-মাতার কবরের পাশে যখন বঙ্গবন্ধুকে শায়িত করা হয় তখন হয়তো তার মমতাময়ী মা তাকে বলছিলেন ‘কীরে খোকা, তোর বুকে এত রক্ত কেন, এত রক্ত নিয়ে তুই কেন এসেছিস?’ জবাবে হয়তো বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘মাগো, বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করেছি।’ শেখ শহীদ বলেন, আজ এই বাংলাদেশে এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না-যিনি বলতে পারবেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি বাংলার মানুষের মুক্তি চাই। আজ এরকম প্রজ্ঞাবান রাজনীতিকের বড় অভাব।
রাজনীতিতে আগাছা উপড়ে ফেলার শপথ নিন: দিলীপ বড়ুয়া
১৪ দল শরিক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বাঙালি জাতি ও বঙ্গবন্ধু অভিন্ন। অপশক্তি ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তার আদর্শকে খতম করা গেছে, তারা আহম্মক।
অন্যরা যা বললেন
জাতীয় পার্টি-জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন এমপি বলেন, পাক হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, আমরা বাঙালিরা তাকে হত্যা করেছি, এটাই দুঃখ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নস্যাত্ করতে স্বাধীনতার শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।
অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা বলেন, বঙ্গবন্ধু এ জাতির জন্য জীবনভর লড়াই করেছেন। জেপি’র নির্বাহী সম্পাদক সাদেক সিদ্দিকী বলেন, ’৭৫ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করা যায়নি। আজও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে এক করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
১৪ দল শরিক গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএনপির রাজনীতি দেউলিয়াপনার শেষ ধাপে চলে গেছে। ১৪ দল শরিক গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার বলেন, ৬ দফার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ষড়যন্ত্র আজও চলছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু। অনুষ্ঠানে জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য জয়নাল আবেদীন ও নাজমুন নাহার বেবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।