ঢাকা ০৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধ ক্যম্পাসেও বিক্ষোভ, সংহতি সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারীরা

জাতীয় ডেস্ক:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্য অপসরণের দাবিতে আন্দোলনের কারণে অর্নিদিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পরেও বুধবার দফায় দফায় বিক্ষোভ, সংহতি সমাবেশ ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৫টার ভেতর হল থেকে সব শিক্ষার্থীদের বের করে দিলেও ক্যম্পাসে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টায় উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কর্মচারীরা প্রবেশ করতে চাইলে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। ফলে গতকালও বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। সকাল সাড়ে ১০টায় মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টারজান পয়েন্ট, ছাত্রীদের হল, চৌরঙ্গী, পরিবহন চত্বর ঘুরে শহীদ মিনার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে সংহতি সমাবেশ করে। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, কলামিস্ট মাহা মির্জা। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতারাও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

এসময় তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে এখানে এসেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। এটা শুধু জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন নয়। এটা সবার বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচানোর আন্দোলন।’ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাবি উপাচার্য হল খালি করে সরকারকে বুঝাতে চেয়েছেন উদ্ভুত সমস্যার সামাধান করতে এটা করা হয়েছে। কিন্তু যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান হল খালি করা না । এটার সমাধান উপাচার্যের গদি ছাড়া করা। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীকে পেটানোতে তার নৈতিকতার পূর্ন অবক্ষয় হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তার বিচার হয়নি। জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর হেলমেট বাহিনীর হামলা তারই ফসল।

সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর তপন কুমার সাহা বলেন, ‘চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি কিন্তু কখনো তো বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নামানোর প্রয়োজন হয়নি! এখন কেন হলো? গতকালের ঘটনায় আমি ব্যথিত হয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত হওয়ার পর উপাচার্য এটিকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলেছে। এটি আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে দুর্ভাগ্য। জাহাঙ্গীরনগরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। এর আগে এই আন্দোলনের সঙ্গে আসিনি কারণ নিজেকে বোঝাতে পারিনি কিন্তু এখন পেরেছি। অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে শুধু তদন্ত না বরং তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।’

প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংহতি সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “আমরা যে কর্মযজ্ঞে আছি তা আমরা বাস্তবায়ন করবোই। দীর্ঘ তিন মাস অপেক্ষা করেছি, আন্দোলন করেছি। কিন্তু উপাচার্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে চান না। উনি বলেন, জামায়াত-শিবির ষড়যন্ত্র করছে। অথচ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলে তারা ফেয়ার শেয়ার পায়নি, শাখা ছাত্রলীগ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পেয়েছে। ছাত্রলীগ যেখানে নিজেই স্বীকার করছে যে, তারা টাকা পেয়েছে সেখানে উপাচার্য প্রতিনিয়িত নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৭টা তারা বাসভবনের সামনেই রয়েছেন।

ক্যাম্পাস ছেড়েছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী: গতকাল দুপুর ২টায় হল প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরী বেঠক শেষে অধ্যাপক বশির আহমেদ শেষ বারের মতো বেলা সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার হল ত্যাগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীই বাসের টিকেট না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে হলে অবস্থান করেছে। তবে আজ (গতকাল) বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সব হল খালি করা হবে। এই সময়ের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতাদেরও হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হল সংলগ্ন খাবারের দোকান বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে হল ত্যাগ না করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ এর পরেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। অন্যদিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের দিনব্যাপী কর্মশালা

বন্ধ ক্যম্পাসেও বিক্ষোভ, সংহতি সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারীরা

আপডেট সময় ০৪:২১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০১৯

জাতীয় ডেস্ক:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্য অপসরণের দাবিতে আন্দোলনের কারণে অর্নিদিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পরেও বুধবার দফায় দফায় বিক্ষোভ, সংহতি সমাবেশ ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৫টার ভেতর হল থেকে সব শিক্ষার্থীদের বের করে দিলেও ক্যম্পাসে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টায় উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কর্মচারীরা প্রবেশ করতে চাইলে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। ফলে গতকালও বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। সকাল সাড়ে ১০টায় মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টারজান পয়েন্ট, ছাত্রীদের হল, চৌরঙ্গী, পরিবহন চত্বর ঘুরে শহীদ মিনার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে সংহতি সমাবেশ করে। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, কলামিস্ট মাহা মির্জা। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতারাও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

এসময় তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে এখানে এসেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। এটা শুধু জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন নয়। এটা সবার বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচানোর আন্দোলন।’ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাবি উপাচার্য হল খালি করে সরকারকে বুঝাতে চেয়েছেন উদ্ভুত সমস্যার সামাধান করতে এটা করা হয়েছে। কিন্তু যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান হল খালি করা না । এটার সমাধান উপাচার্যের গদি ছাড়া করা। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীকে পেটানোতে তার নৈতিকতার পূর্ন অবক্ষয় হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তার বিচার হয়নি। জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর হেলমেট বাহিনীর হামলা তারই ফসল।

সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর তপন কুমার সাহা বলেন, ‘চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি কিন্তু কখনো তো বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নামানোর প্রয়োজন হয়নি! এখন কেন হলো? গতকালের ঘটনায় আমি ব্যথিত হয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত হওয়ার পর উপাচার্য এটিকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলেছে। এটি আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে দুর্ভাগ্য। জাহাঙ্গীরনগরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। এর আগে এই আন্দোলনের সঙ্গে আসিনি কারণ নিজেকে বোঝাতে পারিনি কিন্তু এখন পেরেছি। অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে শুধু তদন্ত না বরং তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।’

প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংহতি সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “আমরা যে কর্মযজ্ঞে আছি তা আমরা বাস্তবায়ন করবোই। দীর্ঘ তিন মাস অপেক্ষা করেছি, আন্দোলন করেছি। কিন্তু উপাচার্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে চান না। উনি বলেন, জামায়াত-শিবির ষড়যন্ত্র করছে। অথচ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলে তারা ফেয়ার শেয়ার পায়নি, শাখা ছাত্রলীগ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পেয়েছে। ছাত্রলীগ যেখানে নিজেই স্বীকার করছে যে, তারা টাকা পেয়েছে সেখানে উপাচার্য প্রতিনিয়িত নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৭টা তারা বাসভবনের সামনেই রয়েছেন।

ক্যাম্পাস ছেড়েছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী: গতকাল দুপুর ২টায় হল প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরী বেঠক শেষে অধ্যাপক বশির আহমেদ শেষ বারের মতো বেলা সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার হল ত্যাগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীই বাসের টিকেট না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে হলে অবস্থান করেছে। তবে আজ (গতকাল) বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সব হল খালি করা হবে। এই সময়ের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতাদেরও হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হল সংলগ্ন খাবারের দোকান বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে হল ত্যাগ না করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ এর পরেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। অন্যদিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।