ঢাকা ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে জিকিরের মাহফিল কায়েম করতে হবে, তবেই সর্বত্র শান্তি ফিরে আসবে – সোনাকান্দার পীর মাহমুদুর রহমান

এম কে আই জাবেদ, (মুরাদনগর) :

সোমবার বাদ ফজর মহান আল্লাহর দরবারে মুসলিম উম্মাহর নাজাত কামনা করে অশ্রুসিক্ত নয়নে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে কুমিল্লা সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের ২ দিনব্যাপী বাৎসরিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের সমাপ্ত হয়েছে। গত শনি ও রবিবার থেকে মুরাদনগর উপজেলার সোনাকান্দা দরবারের ৩টি বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

রবিবার শেষ রাতে সন্ধ্যার আগেই আশপাশের ফসলী মাঠ, রাস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বাদ মাগরিব নামাজের পর দরবারের পীর ও বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ’র আমীর অধ্যক্ষ শাহসূফি হযরত মাওলানা মাহমুদুর  মাহমুদুর রহমান তা’লীম শুরু করেন।

বিশেষ করে  (চিশতীয়া, কাদেরীয়া, নকশেবন্দীয়া ও মোজ্জাদ্দেদীয়া) ৪ তরিকায়ে জিকিরের  তা’লীম শেষে পীর সাহেব মাহফিলে আগত ও সকল মুসলিম উম্মাহকে লক্ষ্য করে পবিত্র কুরআন – হাদিসের আলোকে মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ  নসিহত পেশ করেন। কোন পরিবারে একজন নেশাগ্রস্ত লোক থাকলে তার জন্য গোটা পরিবার ও সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। বর্তমানে দেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে মাদকের ব্যবহার হয় না। গোটা রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে আগে সর্বত্রই মাদক মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না। এই মাদকাসক্ত লোক দ্বারা  দেশে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি সংগঠিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ কোন সুস্থ প্রকৃতির লোক দ্বারা সমাজের অকল্যাণ সাধিত হয় না। তাই বর্তমান ও পরকাল জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে আল্লাহর রাসুলের ঘোষিত সকল প্রকার হারাম মাদক দ্রব্য থেকে সবাইকে মুক্ত থাকতে হবে।

সোমবার ফজর নামাজের পর আখেরী মোনাজাতের পূর্বে পীর সাহেব আরো বলেন, দেশের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে জিকিরের মাহফিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক সময় প্রত্যেক ঘরে ঘরে ভোর বেলায় জিকিরের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কাজ শুরু করা হত। তখন অল্পতে পরিবারের সুখ শান্তি রহমত বিরাজ করত। এখন আয় উপার্জন টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু পারিবারের সুখ সমৃদ্ধি হচ্ছে না। কারন সমাজ থেকে জিকির প্রায় উঠে গেছে। জিকিরের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। তাই এদেশে সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে সহিহ জিকির কায়েক করতে হবে। বাংলাদেশ ও মুসলীম উম্মাহ কল্যাণ কামনা করে  এবং মাহফিলে আগত সকলে মনের নেক বাসনা পূর্ণতা মহান আল্লাহর নিকট কামনা করে আখেরী মোনাজাত সম্পন্ন করেন সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর শাহ সূফী মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।

ঐতিহ্যবাহী ২দিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের সমাপনী রাতে  বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ’র মহাসচিব মাওলানা মোতালেব হোসাইন সালেহীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে ওয়াজ করেন  মাওলানা মীর মোঃ হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী (ঢাকা), মাওলানা শফিকুল ইসলাম পীর সাহেব (ফতেহবাদ), সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু তাহের মোঃ সালাহ উদ্দিন পীর সাহেব, পিরোজপুর মাঠবাড়ীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা বেলাল হোসাইন আফসারী, মুফতি মোহাম্মদ শাহ আলম (ঢাকা), মাওলানা শরিফ মোঃ হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী (কুমিল্লা), সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক প্রমূখ।

এছারাও ১ম ও ২য় দিন সন্ধায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, মহামাণ্য রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিক জয়নাল আবেদীন, মুরাদনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডঃ আবুল কালাম আজাদ তমাল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সরকার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল, কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বক্তব্য রাখেন। সোনাকান্দা দরবার শরীফ কর্তৃক পরিচালিত ছাবেরা রহমান হাফিজিয়া মাদ্রাসার ২জন হাফেজ সম্পন্ন ছাত্র   গোলাম সারোয়ার (ধরখার),  মোঃ ইসহাক (রামচন্দ্রপুর) কে পীরসাহেব হুজুর পাগরী পরিয়ে দেন। 

এবছরের মাহফিল লোকসমাগম প্রসঙ্গে মুরাদনগর প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম কে আই জাবেদ জানান, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতি বছরের ন্যায় এবারের মাহফিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ অংশ নিয়েছেন। এবছর প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি লোক জামায়েত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বার্ষিক মাহফিল শাহ সূফি হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান হানাফী (রঃ) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতের ফুরফুরা দরবার শরীফের পীর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক আল কুরাইশীর খেলাফত প্রাপ্ত সর্বশেষ খলিফা ছিলেন। প্রায় ৩৫ মিনিটে চলা আখেরি মুনাজাতে মুরিদ, মুতাকিদ, আশেক্বীন, মুহিব্বীনদের আমিন আমিন ধ্বনিতে সোনাকান্দার ও আশে-পাশের এলাকাগুলো মুখরিত হয়ে উঠে। সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভাইবোনদের দু:খ-দুর্দশার কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর দরবারে মুনাজাতে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরিশেষে মাহফিলে আগত সবাই যাতে সহীহ সালামতে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতে পারেন এ জন্য সুরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে আখেরী মোনাজত সম্পন্ন করা হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে জিকিরের মাহফিল কায়েম করতে হবে, তবেই সর্বত্র শান্তি ফিরে আসবে – সোনাকান্দার পীর মাহমুদুর রহমান

আপডেট সময় ০৪:০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১

এম কে আই জাবেদ, (মুরাদনগর) :

সোমবার বাদ ফজর মহান আল্লাহর দরবারে মুসলিম উম্মাহর নাজাত কামনা করে অশ্রুসিক্ত নয়নে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে কুমিল্লা সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের ২ দিনব্যাপী বাৎসরিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের সমাপ্ত হয়েছে। গত শনি ও রবিবার থেকে মুরাদনগর উপজেলার সোনাকান্দা দরবারের ৩টি বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

রবিবার শেষ রাতে সন্ধ্যার আগেই আশপাশের ফসলী মাঠ, রাস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বাদ মাগরিব নামাজের পর দরবারের পীর ও বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ’র আমীর অধ্যক্ষ শাহসূফি হযরত মাওলানা মাহমুদুর  মাহমুদুর রহমান তা’লীম শুরু করেন।

বিশেষ করে  (চিশতীয়া, কাদেরীয়া, নকশেবন্দীয়া ও মোজ্জাদ্দেদীয়া) ৪ তরিকায়ে জিকিরের  তা’লীম শেষে পীর সাহেব মাহফিলে আগত ও সকল মুসলিম উম্মাহকে লক্ষ্য করে পবিত্র কুরআন – হাদিসের আলোকে মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ  নসিহত পেশ করেন। কোন পরিবারে একজন নেশাগ্রস্ত লোক থাকলে তার জন্য গোটা পরিবার ও সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। বর্তমানে দেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে মাদকের ব্যবহার হয় না। গোটা রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে আগে সর্বত্রই মাদক মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না। এই মাদকাসক্ত লোক দ্বারা  দেশে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি সংগঠিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ কোন সুস্থ প্রকৃতির লোক দ্বারা সমাজের অকল্যাণ সাধিত হয় না। তাই বর্তমান ও পরকাল জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে আল্লাহর রাসুলের ঘোষিত সকল প্রকার হারাম মাদক দ্রব্য থেকে সবাইকে মুক্ত থাকতে হবে।

সোমবার ফজর নামাজের পর আখেরী মোনাজাতের পূর্বে পীর সাহেব আরো বলেন, দেশের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে জিকিরের মাহফিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক সময় প্রত্যেক ঘরে ঘরে ভোর বেলায় জিকিরের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কাজ শুরু করা হত। তখন অল্পতে পরিবারের সুখ শান্তি রহমত বিরাজ করত। এখন আয় উপার্জন টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু পারিবারের সুখ সমৃদ্ধি হচ্ছে না। কারন সমাজ থেকে জিকির প্রায় উঠে গেছে। জিকিরের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। তাই এদেশে সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে সহিহ জিকির কায়েক করতে হবে। বাংলাদেশ ও মুসলীম উম্মাহ কল্যাণ কামনা করে  এবং মাহফিলে আগত সকলে মনের নেক বাসনা পূর্ণতা মহান আল্লাহর নিকট কামনা করে আখেরী মোনাজাত সম্পন্ন করেন সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর শাহ সূফী মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।

ঐতিহ্যবাহী ২দিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের সমাপনী রাতে  বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ’র মহাসচিব মাওলানা মোতালেব হোসাইন সালেহীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে ওয়াজ করেন  মাওলানা মীর মোঃ হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী (ঢাকা), মাওলানা শফিকুল ইসলাম পীর সাহেব (ফতেহবাদ), সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু তাহের মোঃ সালাহ উদ্দিন পীর সাহেব, পিরোজপুর মাঠবাড়ীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা বেলাল হোসাইন আফসারী, মুফতি মোহাম্মদ শাহ আলম (ঢাকা), মাওলানা শরিফ মোঃ হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী (কুমিল্লা), সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক প্রমূখ।

এছারাও ১ম ও ২য় দিন সন্ধায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, মহামাণ্য রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিক জয়নাল আবেদীন, মুরাদনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডঃ আবুল কালাম আজাদ তমাল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সরকার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল, কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বক্তব্য রাখেন। সোনাকান্দা দরবার শরীফ কর্তৃক পরিচালিত ছাবেরা রহমান হাফিজিয়া মাদ্রাসার ২জন হাফেজ সম্পন্ন ছাত্র   গোলাম সারোয়ার (ধরখার),  মোঃ ইসহাক (রামচন্দ্রপুর) কে পীরসাহেব হুজুর পাগরী পরিয়ে দেন। 

এবছরের মাহফিল লোকসমাগম প্রসঙ্গে মুরাদনগর প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম কে আই জাবেদ জানান, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতি বছরের ন্যায় এবারের মাহফিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ অংশ নিয়েছেন। এবছর প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি লোক জামায়েত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বার্ষিক মাহফিল শাহ সূফি হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান হানাফী (রঃ) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতের ফুরফুরা দরবার শরীফের পীর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক আল কুরাইশীর খেলাফত প্রাপ্ত সর্বশেষ খলিফা ছিলেন। প্রায় ৩৫ মিনিটে চলা আখেরি মুনাজাতে মুরিদ, মুতাকিদ, আশেক্বীন, মুহিব্বীনদের আমিন আমিন ধ্বনিতে সোনাকান্দার ও আশে-পাশের এলাকাগুলো মুখরিত হয়ে উঠে। সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভাইবোনদের দু:খ-দুর্দশার কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর দরবারে মুনাজাতে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরিশেষে মাহফিলে আগত সবাই যাতে সহীহ সালামতে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতে পারেন এ জন্য সুরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে আখেরী মোনাজত সম্পন্ন করা হয়।