জাতীয় ডেস্ক রির্পোটঃ
ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফণীর প্রভাবে ঝড় ও বজ্রপাতে ছয় জেলায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদের মৃত্যু হয়।
শনিবার সকাল ৯টায় খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চল হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণীঝড়ের কেন্দ্রের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফণীর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঝড়ো হাওয়ার সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে বাগেরহাটে একজন, নোয়াখালীতে এক শিশু, বরগুনায় দাদি-নাতি, ভোলা ও বাগেরহাটে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নেত্রকোণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে একজন করে নিহত হয়েছেন। আর বাগেরহাটে ঝড়ে একজন, নোয়াখালীতে এক শিশু, বরগুনায় দাদি-নাতি নিহত হয়েছেন। ঢাকাটাইমসের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
নিহত দাদির নাম নুরজাহান (৬০) ও নাতির নাম জাহিদুর (৮)। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চরদুয়ানি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহিন মিয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ঝড়ো বাতাসে ইউনিয়নের আরও ৪০-৪৫টি ঘর উড়ে গেছে। এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসের আঘাতে বিধ্বস্ত ঘরের নিচে চাপা পড়ে মো. ইসমাইল নামে দুই বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমিনুল হক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারীসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
শুক্রবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, ইটনা ও মিঠামইনে বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কুর্শাকান্দা গ্রামের আয়াজ আলীর ছেলে আসাদ মিয়া (৫৫), একই উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আবদুল হালিমের মেয়ে নুরুন্নাহার (৩০), একই এলাকার এন্তাজ আলীর ছেলে মুজিবুর (১৭), মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের কুড়ারকান্দি গ্রামের এবাদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৭), বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের মো. গোলাপ মিয়ার ছেলে মহিউদ্দিন (২২) ও ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাঠুইর গ্রামের রাকেশ দাসের ছেলে রুবেল দাস (২৬)।
একই দিন নেত্রকোনার গোবিন্দ্রশ্রী হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে বাগেরহাটে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে শাহানুর বেগম নামে এক নারী মারা গেছেন। শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রনজিৎপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত শাহানুর বেগম রনজিৎপুর গ্রামের মোজাহার হাওলাদারের স্ত্রী।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা,পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।