ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নে সরকারের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্প হিসেবে শ্রমিকের পরিবর্তে আধুনিক ভেকুমেশিন দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।মাটিকাটাল শ্রমিক দিয়েনা-কি ভেকুমেশিন দিয়ে রাস্তা তৈরীর জন্য মাটি কাটা হয়েছে এই নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভেতর দুটি গ্রুপ রীতিমতো প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হযেছে।
মঙ্গলবার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো.ইসমাইল হোসেন লিখিতকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,কৃষি ব্যাংক এবং দুর্ণীতি দমন কমিশন(দুদক)কুমিল্লা,স্থানীয় সাংবাদিকদের বরাবর লিখিত আর্জিতে অভিযোগ এনে বলা হয়,উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে ইউপি মেম্বারগন সড়ক মেরামতে শ্রমিক বা মাটিকাটাল না লাগিয়ে আধুনিক ভেকুমেশিন দিয়ে রাস্তার কাজ করানো হচ্ছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে আজ (বুধবার)বিকেলে এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক ঘটনাস্থলের কয়েকটি প্রজেক্টে যেয়ে দেখা যায়, প্রকৃত মাটিকাটাল শ্রমিক দিয়েই মাটি কাটা হয়েছে।রাস্তার পাশর্^বর্তী বিভিন্ন জমি থেকে কোদাল দিয়ে মাটি কাটার চিহ্ন স্পষ্ট প্রমান বহন করে যে,-‘ভেকু মেশিন নয়,মাটিকাটাল শ্রমিক দিয়েই মাটি কাটা হয়েছে (শ্রমীকদের ছবি সংযুক্ত)।তবে-ভেকু মেশিন দিয়ে যদি মাটি কাটা হয়েও থাকে তার আলামত নষ্ট করা হয়ে থাকতে পারে।তবে-গ্রামবাসী ভেকু মেশিনের বিষয়ে কেউ মুখ খুলেনি।এ বিষয়ে আরো তদন্তের প্রয়োজন আছে,কারন-একটি সূত্র জানায়-ভেকু মেশিন ও শ্রমিক উভয়ের ব্যবহার করা হয়েছে।এদিকে-ভেকু মেশিনের মালিক জালাল মিয়া মুঠোফোনে জানান-রিপন চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা ৭ হাজার ফিট মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটেছি।
অভিযোগকারীর বক্তব্য: স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো.ইসলামইল হোসেন বলেন,আমার অভিযোগ শতভাগ সত্য।যখন ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয় তখন এলাকাবাসীর সামনে আমি মাটি কাটার ছবি তুলে রাখি।এছাড়া স্থানীয় জনতা তা দেখেছে।সাংবাদিকরা যেয়ে কেন ভেকু মেশিন বা এর আলামত দেখতে পায় নি এমন প্রশ্নের জবাবে অভিযোগকারী ইসমাইল বলেন,-‘যেখানে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে সেখানে সাংবাদিকরা যায়নি।তারা গিয়েছে ভিন্ন প্রজেক্টে।এ ছাড়া প্রজেক্টের সভাপতি/ইউপি মেম্বারগন চেয়ারম্যানের সহায়তায় ভেকু মেশিনের আলামত নষ্ট করে ফেলেছে।সাংবাদিক গেছেন আজ বুধবার।আর ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ সম্পাদন করা হয়েছে গত শনিবার,মানে ৫দিন আগে।এখানে স্পষ্ট দূর্ণীতি ও অনিয়ম হয়েছে।লুটপাট করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা।কারন,১শত ৮৪ জন মাটিকাটাল শ্রমিকের যে মজুরী আসতো,ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটলে তার ১০ভাগের এক ভাগ টাকা ব্যয় হবে।’
চেয়ারম্যানের বক্তব্য : দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রিপন বলেন,অভিযোগকারী মিথ্যে অভিযোগ করেছে।মাটি কাটারত ভেকু মেশিনের যে ছবি দরখাস্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে তা ব্যক্তিমালিকানাধীন কাজের হবে।এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতিগন যথাক্রমে মো,সফিক মেম্বার,মো.হকসাব মেম্বার,মাসুদা আক্তার শিল্পী,তপন মেম্বার ও মতিয়ূও রহমানের সাথে কথা বললে তারা জানান,অভিযোগকারী ইসমাইল নিজে মেম্বার প্রার্থী ছিলো।নিজে নির্বাচনে জয়ী হতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে এমন মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।আমরা প্রকৃত শ্রমিক দিয়েই মাটি কাটিয়েছি।রাস্তা নির্মান করেছি।
কৃষি ব্যাংক,বাঞ্ছারামপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো.মমিনুল ইসলাম বলেন,এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।মাঠে কি দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে সেটি বিবেচ্য নয়।যদি একাউন্ড হোল্ডারের সাথে আমাদের কাছে রাখা ছবির সাথে মিলে যায়,সেক্ষেত্রে টাকা দিতে ব্যাংক বাধ্য।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা(পিআইও)মো.মফিদুল আলম অভিযোগ নিয়ে বলেন,-‘শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ করানোর কোন সুযোগ নেই।অভিযোগকারী যদি প্রমান করতে পারেন,রাস্তার মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে করা হয়েছে তা হলে বিল বন্ধ করে দেয়া হবে’।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শরিফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন,-আমরা উভয় পক্ষকে ডাকবো।অভিযোগকারীকে অভিযোগ প্রমান করতে হবে।অন্যথায়,উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।সে সাথে অভিযুক্ত যদি সত্যিই প্রমানীত হন তারা ভেকু মেশিন ব্যবহার করেছেন,তবে-পুরো টাকা (প্রায় ৮ লাখ টাকা)আটকে দেয়া হবে।