ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ৪টি ভেজাল গুড়ের কারখানায় তৈরী ‘বিষাক্ত গুড়’ চাহিদা মেটাচ্ছে বাঞ্ছারামপুরসহ হোমনা, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা। গুড়ের নামে বিষ উৎপাদন হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যে।
সারা দেশে আখের গুড়ের চাহিদা বাড়ায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাজাওে ভেজাল গুড়ের কারখানা গুলোতে গুড় উৎপাদনের নামে বিষ তৈরি হচ্ছে । অধিক লাভের আশায় একটি সিন্ডিকেট চক্র বহুদিন ধরে এই গুড় তৈরী করে আসছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,বিষয়টি প্রকাশ্যে তৈরী করলেও এ যাবত উজানচরে ভ্রাম্যমান আদালতের কোন অভিযান বা প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে, প্রতিনিয়ত ভেজাল এবং নোংরা পরিবেশে গুড় তৈরী করে বাজারজাত করছে গুড় উৎপাদনকারীরা। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি সরেজমিনে উজানচর ভেজালগুড় কারখানায় গেলে,সাংবাদিক দেখে কারখানার মালিকরা তাদের কর্মচারীদের রেখে দরজা বন্ধ করে চলে যেতে দেখা যায়।জানা গেছে, শীত মৌসুমে গুড়ের চাহিদা থাকে বেশী।শীতের মৌসুম পড়ার সাথে সাথে ভেজাল গুড় তৈরীতে মহোৎসবের মতো মেতে উঠে উৎপাদনকারীরা।
সূত্র আরো জানায়, উপজেলা প্রশসানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাঞ্ছারামপুর থানার সন্নিকটে উজানচর সদর ইউনিয়ন বাজারে গুড় উৎপাদনকারী অন্তত ৫টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় নোংরা পরিবেশে ভেজাল গুড় তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করে আসছে উৎপাদনকারীরা।
সরেজমিনে গুড় উৎপাদনকারী কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বাজার থেকে কিনে আনা নিন্মমানের গুড়গুলো ময়লাযুক্ত মেঝেতে নোংরা স্যান্ডেল পায়ে শ্রমিকরা গুড়ো করছেন। পাশেই প্রকাশ্যে রাখা হয়েছে চিনির বস্তা। দিনভর ক্ষতিকর বিষাক্ত হাইড্রোজ আর কেমিকেল মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব করছে স্থানীয় সেলিম,খোকন,মিজান নামের তিনজন অতি প্রভাবশালী ব্যক্তি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিনিধিকে জানান, এলাকার অন্তত ১০জনের একটি সিন্ডিকেট অসাধু ব্যবসায়ী কারখানা খুলে হাজার হাজার মন ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। তারা বাজার থেকে কমদামে নিন্মমানের ঝোলা ও নরম গুড় কিনে, গলিয়ে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি, পাথরচুন ও বিশেষ গাছের ছাল গুড়া দিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় স্থানীয় হাট-বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাক ভরে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
বাঞ্ছারামপুর মওলাগঞ্জ বাজার(বড়বাজার) হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা ইমান আলী, শরীফ উদ্দিন ও শাজাহান আলী জানান, উৎপাদন খরচ বাদে বাড়তি লাভের আশায় খেজুর গুড়ের সাথে চিনি মিশিয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন তারা। তাছাড়া দিন বদলের সাথে বাড়ছে চাহিদা। তাছাড়া আশঙ্খাজনকহারে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমছে রসের উৎপাদনও। মজুরি, জ্বালানি খরচ বাড়ায় ভেজালের প্রবণতাও বেড়েছে।ভেজাল গুড় বিক্রিতে লাভ ডাবল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা.নাইমুর রহমান জানান,গুড়ে চিনি, রং,হাইড্রোজ, সোডা,ফিটকারির মত ভেজাল মিশ্রণের কারনে খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, কিডনী ড্যামেজ, লিভারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভানা থাকে।
বাঞ্ছারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী রিয়াজুল ইসলাম ভোক্তা হিসেবে বলেন,-‘ আমরা কেনার সময় ভেজাল গুড় চিনতে পারলেও কোন কিছু করার থাকেনা। কারন চিনি মিশ্রিত ব্যাতীত স্বচ্ছ ভালো গুড় পাওয়া অত্যান্ত দুস্কর।
তিনি বলেন, ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা অন্যথায় গুড় ভেজাল প্রমানের মাধ্যমে দোষীব্যাক্তিকে সনাক্তে করে আইনের আওতায় নিয়ে না আসা পর্যন্ত ভেজাল দেওয়া বন্ধ হবে না। ভেজাল বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা ছাড়া কোন পথ নেই।’
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন,‘আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি।যেকোন খাদ্যে ভেজাল মেশানো অন্যায়।উজানচরের গুড়ে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ যেহেতু জেনেছি,বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’