মো.আবু রায়হান চৌধুরী, বাঞ্ছারামপুর থেকে ফিরেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজারে জোরপূর্বক ও আপত্তিকর ঘটনা ঘটিয়ে সাধারন মানুষের কাছ থেকে টাকা (চাঁদা) আদায় করছে হিজড়ারা। হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো
উপজেলাবাসী। উপজেলার সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই হিজড়ারা। এই তুই দেখতে তো খুব সুন্দর,১০টা টাকা দে। দিলে কি হয়? দে!… না হয় এখনই কিন্তু চুমু দিয়ে দিব!’ এমনই অকথ্য ভাষায় কথা বলে তাদের অনৈতিক আবদারে বিভ্রত করে সাধারণ মানুষকে। কারো শিশুসন্তান জন্মগ্রহণ করলে হিজড়াদের এলাকা ভিত্তিক নিয়োগকৃত এজেন্টদের মাধ্যমে খবর পেয়ে হিজরার দল ঢোল তবলা নিয়ে তাদের বাসায় হানা দেয়। শিশুকে কোলে নিয়ে গান বাজনা করে অনেক টাকা (চাঁদা) দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ না করলে শিশু সহ পরিবারের লোকজনকে হেনস্থা করে তারা। আর্থিক সংগতি অনুযায়ী শিশুর অভিভাবকের কাছে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বখশিশ দাবি করে। এব্যাপারে ভূক্তভোগী বাঞ্ছারামপুর বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক মো.মনিরুজ্জমান পামেন বলেন,গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) বাঁশগাড়ি গ্রামে আমার বাড়িতে বাঞ্ছারামপুরের হিজড়াদের সর্দার আনোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বুলবুলী দলবল নিয়ে যায় ও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ২ মাসের শিশু সন্তান জন্মানোর অজুহাতে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। সে টাকা দিতে রাজি না হলে তার পরিবারকে নাজেহাল করার চেষ্ঠা করলে পরে টাকা দিয়ে নিজেদের মান সন্মান রক্ষা করেন। হিজড়াদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা ছাড়া আর কি করার আছে আমার,আনোয়ার সাবেক চেয়ারম্যান বাবু সাহেবের বাড়ির পেছনে সঙ্গী সাথী নিয়ে থাকে। এদিকে,বাঞ্ছারামপুর পৌর চকবাজারে হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ী। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার টাকা তারা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এই এলাকায় তারা চাঁদাবাজি করছে। তাদের (হিজড়া)‘র এই অত্যাচার দেখেও অনেকে না দেখার ভ্যান করছেন।
হিজড়াদের প্রধান টার্গেট হলো বিয়ে বাড়ি ও সন্তান জন্ম হয়েছে এমন ঘর ও বাড়ি,দল বেঁধে তারা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে অবস্থান বুঝে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা শরীর থেকে জামা-কাপড় খুলে অশোভন আচরণ করে এবং নানা অকথ্য ভাষায় গালগালি করে। পরে মানসম্মানের ভয়ে ওদের চাহিদা পূরণ করে বিদায় করতে হয়।
জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন আনাচে-কানাচে আছে তাদের বিচরণ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের এজেন্টও আছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই এজেন্টরা এলাকার কোনো বিয়ে, জন্ম ও বিবাহবার্ষিকীতে তাদের খোঁজ দিয়ে থাকেন। সময় মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হানা দেয় তারা।
এ ছাড়া বিভিন্ন হাট-বাজারে একেক দিন একেক গ্রুপ গিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে অপমান করে তারা। তাই সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়েই চাঁদা দেন সাধারণ মানুষ।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর মালিহাটিতে হিজড়ারা দলবদ্ধভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। দিনের বেলায় চাঁদাবাজি করলেও রাতে ওই বাসায় বিভিন্ন অপকর্ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, হাটের দিনসহ প্রায়ই এসে হিজড়ারা টাকা তোলে। টাকা না দিতে চাইলে বিভিন্ন গালমন্দসহ মারধরও করে ব্যবসায়ীদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, কোন দেশে বাস করি জানি না,এটা যেন মগের মুল্লুক চলছে।
বাঞ্ছারামপুর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,আমেনা প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীক সমিতির সভাপতি ও বিএমএসএফ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ফয়সল আহম্মেদ খান জানান, বাঞ্ছারামপুর বাজারে হিজড়াদের চাঁদাবাজিকে কথিত ভদ্রলোকেরা নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। বাসা ভাড়ার আড়ালে হিজড়ারা নানা অপকর্ম ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এব্যাপারে,বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শরিফুল ইসলাম বলেন, আসলে হিজড়াদের উৎপাতে সব জায়গার মানুষ অতিষ্ঠ। সরকার এদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, এদের সাথে তো বেশি কথা বলা যায় না, তারপরও চেষ্টা করছি, দেখি কী করা যায়। আমি সমাজ সেবা অফিসারকে বলে দিবো পূর্ণবাসনের জন্য আর আনোয়ারের বিরুদ্ধে কেউ সুনির্র্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হিজড়াদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসনের শুভ দৃষ্টি কামনা করছে সচেতন মহল।